বিচিত্র

গবেষণায় চুরি ঠেকাতে শাস্তি!

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বিবিসি বাংলা
ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রিসাচের্র নামে নকল করা (প্লেজিয়ারিজম) ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি। শুধু তাই নয়, ইউজিসি বলছে প্লেজিয়ারিজমের মাত্রার ওপর নিভর্র করবে শাস্তির পরিমাণ কতটা হবে। নজিরবিহীনভাবে তারা প্লেজিয়ারিজমজনিত অপরাধের চারটি মাত্রা বা লেভেলও বেঁধে দিয়েছে। সবোর্চ্চ মাত্রার নকল করলে সংশ্লিষ্ট গবেষকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবেÑ এমনকি শিক্ষকরা চাকরি পযর্ন্ত হারাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা গবেষণাকেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত অনেকেই মনে করছেন, প্লেজিয়ারিজমের সমস্যা এতটাই ব্যাপক আকার নিয়েছে যে এ ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া কোনো গতি নেই। তবে গবেষণা পরিচালকদের মধ্যে অনেকেই আবার এই পদ্ধতির সঙ্গে একমত নন। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, অল্পস্বল্প প্লেজিয়ারিজমের নামে ছাড় দেয়া হলে এই প্রবণতাটাকেই আসলে প্রশ্রয় দেয়া হবে। বিভিন্ন মাত্রার প্লেজিয়ারিজমকে চিহ্নিত করে ইউজিসি যে নিদেির্শকাটি জারি করেছে তা নিয়ে তকির্বতকর্ও হচ্ছে বেশ। তাতে বলা হয়েছে, যদি দেখা যায় যে প্লেজিয়ারিজমের পরিমাণ গবেষণাপত্রের মাত্র ১০ শতাংশÑ অথার্ৎ আগে প্রকাশিত অন্য কোনো নিবন্ধের সঙ্গে তার সাদৃশ্যের পরিমাণ বেশ কমÑ তাহলে অভিযুক্ত গবেষককে অব্যাহতি দেয়া হবে, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। এটাকে বলা হচ্ছে ‘লেভেল জিরো’ প্লেজিয়ারিজম। বিষয়টা শুধু অভিযুক্তকে জানানো হবে এ ক্ষেত্রে। অপরাধটা ‘লেভেল ওয়ান’ বলে গণ্য হবে যদি দেখা যায় প্লেজিয়ারিজমের পরিমাণ ১০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সবোর্চ্চ ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে স্ক্রিপ্ট পেশ করতে বলা হবে। ইউজিসি একটা প্লেজিয়ারিজমকে ‘লেভেল টু’ বলছে তখনই যখন দেখা যাবে সাদৃশ্যের পরিমাণ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে। এই ধরনের বড়সড় নকলে গবেষক বা ছাত্রছাত্রীদের অন্তত এক বছরের জন্য কাযর্ত সাসপেন্ড করা হবেÑ তারা এই সময়ের মধ্যে নতুন খসড়াও জমা দিতে পারবেন না। কিন্তু সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো ‘লেভেল থ্রি প্লেজিয়ারিজম- যেখানে ৬০ শতাংশের বেশি সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে। ভারতের ইউজিসি বলছে, এরকম হলে গোটা গবেষণা প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশনই বাতিল করে দেয়া হবে। ওই গবেষক তো কালো তালিকাভুক্ত হবেনই, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তিনিও চাকরি হারাবেন। বরোদার মহারাজা সয়াজিরাও ইউনিভাসিির্টর উপাচাযর্ পরিমল ব্যাস বলছেন, ‘এই ধরনের মাত্রা ঠিক করে প্লেজিয়ারিজম ঠেকানো যাবে কিনা সেটা অন্য বিতকর্- কিন্তু সমস্যাটার মোকাবেলা করার জন্য যে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সেটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই।’ তবে ভারতের বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ব্যাঙ্গালুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের সাবেক অধিকতার্ ভিএস রামমূতির্ একেবারেই মনে করছেন না ইউজিসির প্রস্তাব কোনো কাজে আসবে। তিনি বলেন, ‘একটা বাক্য চুরি করলেও চুরি- আবার রিসাচর্ পেপার থেকে একটা চ্যাপ্টার চুরি করলেও চুরি। মাত্র একটা লাইন নকল করেছি, এটা বললে অপরাধ কমে যায় না।’ উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্লেজিয়ারিজমের অভিযোগে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক উপাচাযর্ দীপক পেন্টালকে গ্রেপ্তারও হতে হয়েছিল। তার দুবছর বাদেই পন্ডিচেরি ইউনিভাসিির্টর তৎকালীন উপাচাযর্ চন্দ্রা কৃষ্ণমূতিের্ক একই অভিযোগে বরখাস্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার। এখন ইউজিসির এই নিদেির্শকা নিয়ে হয়তো আগামীতে আরও তকির্বতকর্ হবে, কিন্তু প্লেজিয়ারিজমের সমস্যা যে ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকেও বিচলিত করেছে তা এই ফরমান জারি করা থেকেই পরিষ্কার।