শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জেনে নিন

বন্দিরা কঙ্কাল হয়ে টিকে আছে যে শহরের পথে

রাশিয়ার উত্তর-পূর্বের শহর মাগাডানের সঙ্গে লেনা নদীর তীরে নিঝনি বেস্টিয়াখ শহরকে সংযুক্ত করেছে- 'রোড অব বোনস'। গুলাগের ভয়াবহতাকে গণস্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য মাগাডানে রয়েছে একটি গুলাগ মিউজিয়াম। ১৯৯০ সালের দশকে প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের আমলে 'রোড অব বোনস'-এর মুখেই তৈরি করা হয় 'মাস্ক অব সরো' নামের একটি কংক্রিট ভাস্কর্য। কোলাইমার অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতের স্মারক এ ভাস্কর্য।
আইন ও বিচার ডেস্ক
  ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

১৯ শতকের শুরুর দিকেই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। চার বছর ছিল যার স্থায়ীত্বকাল। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, হয়েছে সর্বহারা। প্রিয়জন হারানোর শোক কাটতে না কাটতেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তখনই পৃথিবীর বাতাস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বারুদের গন্ধ আর কালো ধোঁয়া মুছে যায়নি। ক্ষমতার লড়াই সীমাবদ্ধ থাকেনি রাজাদের মধ্যে। যুদ্ধের বিষবাতাস ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বেই।

এ সময় অনেক দেশ এবং শহর হয়েছে নিশ্চিহ্ন। নিরাপরাধ মানুষ জীবন দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য। তেমনই ভলগার তীরঘেঁষা ঐতিহাসিক স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের কথা তো সবাই জানেন। যা থামিয়ে দিয়েছিল ইউরোপীয় তথা বিশ্বসভ্যতার পতন। ৭৫ বছর আগে ১৯৪৩ সালে হিটলারের নাৎসি বাহিনী প্রায় পুরো ইউরোপ দখল করে। তারও আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের ককেশাস অঞ্চল দিয়ে এগিয়ে মস্কো দখলের অভিপ্রায়ে স্তালিনগ্রাদ শহরকে কবজায় আনতে চেয়েছিল।

রাশিয়ার উত্তর-পূর্বে সাইবেরিয়ার ইয়াকুটস্কের নিকটবর্তী এক হাইওয়ের যেখানে-সেখানে মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। কোথাও মাথার খুলি, কোথাও বা হাত-পা বা শরীরের অন্য অংশের হাড়ের টুকরো প্রায় গোটা রাস্তাতেই ছড়িয়ে রয়েছে।

এ রকম মানব-অস্থি ছড়ানো পথের নাম হয়েছে- 'রোড অব বোনস'। অবশ্য এর একটি পোশাকি নামও রয়েছে কোলাইমা হাইওয়ে। স্তালিন জামানায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে এ হাইওয়ে নির্মিত হয়েছিল। জানা যায়, এ রাস্তা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল সেভভোস্তলাগ লেবার ক্যাম্পের বন্দিদের শ্রমে ঘামে। ১৯৩২ সালে এ রাজপথের সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয় যা ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তা চলে। আর এতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল গুলাগ বা বন্দিশিবিরের আবাসিকদের শ্রম।

অনুমান করা হয়, এ পথ তৈরি করতে গিয়ে বহু মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তাদের হাড়গোড় এ রাস্তার নিচেই চাপা পড়ে যায়। মূলত যারা কাজ করার সময় মারা যেতেন তাদের রাস্তায়ই মাটি চাপা দেওয়া হতো। গ্রীষ্মে এ অঞ্চলটি আর্দ্র এবং অস্বাস্থ্যকর। শীতকালে অসম্ভব ঠান্ডার কারণেও এখানে তেমনভাবে মানববসতি গড়ে তোলা যায়নি। এ দুর্গম জায়গাতেই গুলাগে আটক মানুষকে দিয়ে তৈরি করা হয় এ হাইওয়ে। সেই কারণে এ রাজপথ আজ সোভিয়েত জমানার এক লজ্জাজনক স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিবেচিত।

রাশিয়ার উত্তর-পূর্বের শহর মাগাডানের সঙ্গে লেনা নদীর তীরে নিঝনি বেস্টিয়াখ শহরকে সংযুক্ত করেছে- 'রোড অব বোনস'। গুলাগের ভয়াবহতাকে গণস্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য মাগাডানে রয়েছে একটি গুলাগ মিউজিয়াম। ১৯৯০ সালের দশকে প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের আমলে 'রোড অব বোনস'-এর মুখেই তৈরি করা হয় 'মাস্ক অব সরো' নামের একটি কংক্রিট ভাস্কর্য। কোলাইমার অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতের স্মারক এ ভাস্কর্য।

সম্প্রতি আবার গুলাগের ভয়াবহতাকে উস্কে দিয়েছে 'রোড অব বোনস' থেকে প্রাপ্ত বেশ কিছু নরকঙ্কাল। অনুমান, ১৯১৭-১৯২২ সালের রুশ গৃহযুদ্ধের সময়ে মৃত ব্যক্তিদের কঙ্কাল সেগুলো। অর্থাৎ শুধু গুলাগের দুঃখজনক স্মৃতি নয়, এ অঞ্চলের মাটির নিচে রয়ে গেছে রুশ ইতিহাসের আর এক রক্তক্ষয়ী সময়ের ইতিহাসও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে