বেদখল হওয়া খাসজমি উদ্ধার ও দখলদারদের জেল, জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনতে নতুন
আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আইন বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে মন্ত্রণালয় এ আইনের
খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেছে।
আগামী এক মাসের মধ্যে খসড়াটি তৈরি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরপর এটি অনুমোদনের জন্য
মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিদ্যমান ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খাসজমি উদ্ধার সম্ভব হলেও দখলদারদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জেল, জরিমানাসহ অন্যান্য শাস্তির বিধান রেখে আইনটি তৈরি করা হচ্ছে।
খাসজমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড,
ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খাসজমি দেখভাল করে থাকেন। সারাদেশে প্রায় ৪২ লাখ একর খাসজমি
রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, উদাসীনতার কারণে দীর্ঘ সময়ে বিপুল পরিমাণ খাসজমি বেহাত, বেদখল হয়ে গেছে। কেউ প্রভাব খাটিয়ে, কেউ জাল দলিল করে একের পর এক খাসজমি দখল করেছেন।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারাদেশের খাসজমি নজরদারিতে আনতে 'খাসজমি ইনফরমেশন ব্যাংক'
তৈরি করা হচ্ছে। তাতে প্রতিটি জেলার কোথায়, কোন থানায়, কোন মৌজায়, দাগ, খতিয়ানে কত পরিমাণ খাসজমি আছে সেটা মুহূর্তেই জানা যাবে।
একই সঙ্গে সরকারি মালিকানা, মৌজা, দাগ, খতিয়ান উলেস্নখ করে প্রতিটি খাসজমিতে সাইনবোর্ড
টানানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। খুলনা জেলা প্রশাসক এরই মধ্যে খাস ডেটাবেজ তৈরি করেছেন।
সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে খাসজমির ডেটাবেজ তৈরি ও জমির মৌজা, খতিয়ান,
দাগ নম্বর উলেস্নখ করে সাইনবোর্ড টানানোর কার্যক্রম চালু করা হবে।
সারাদেশের আটটি বিভাগে কৃষি, অকৃষি মোট খাসজমি ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯৯ একর। এর মধ্যে বন্দোবস্তযোগ্য জমি ৬ লাখ ৬ হাজার ৫৯১ একর। বন্দোবস্ত অযোগ্য জমির পরিমাণ ৩৫
লাখ ৮৭ হাজার ৮০৮ একর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে খাসজমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে ১৩৩ একর ৪৬ শতাংশ জমি উদ্ধার করা হয়। একই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫১ একর, রাজশাহী বিভাগে ৬ হাজার ৫১৮ একর, খুলনায় ৪ হাজার ১৮৯ একর ৮৫ শতাংশ ও সিলেটে ১৮৫ একর ১২ শতাংশ খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে।
ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বেদখল হওয়া খাসজমি উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল গত ২০১৫ সালের আগস্টে। এ লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশও জারি করা
হয়েছিল। আদেশের কপি জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এরপর ওই আদেশ কাগজেই
থেকে গেছে এতকাল।
জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ে খাসজমি-১ ও খাসজমি-২ দুটি শাখা আছে। নানা কাজে সরকারি-বেসরকারি খাতে খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়াই শাখা দুটির মূল কাজ। সারাদেশে কী পরিমাণ খাসজমি বেদখল হয়েছে সে হিসাবও রাখে না এই দুটি শাখা।
সারাদেশের ২৫৩টি গুচ্ছগ্রামে ১০ হাজার ৬৫০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে জমির দলিল প্রদান করা হয়েছে। আয় সৃষ্টিমূলক কাজের জন্য প্রতিটি পরিবারকে ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে মোট ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পলস্নী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) মাধ্যমে গুচ্ছগ্রামবাসীদের কর্মসংস্থানে প্রশিক্ষণ দেওয়া
হয়েছে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পভুক্ত ৩৯ হাজার ৫০২ একর খাসজমির মধ্যে ৩২ হাজার ৩৫৫ একর জমিতে
ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পট টু পট ভিত্তিতে সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে।
