শিশুশ্রম বন্ধ হোক

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ
গ্রীষ্মের প্রখর রোদ। মাথার উপর প্রখর রোদের তাপ কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না শিশুটির। দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত তার পরিবার। জীবন সম্পর্কে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অর্থ উপার্জনের জন্য পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। খোলা আকাশের নিচে গাড়ির ধোঁয়া ও ধুলোবালি উপেক্ষা করে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি খোলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে। কেউ বা মাথায় ইট বা ভারী বস্তু নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। কেউ লোহা কাটার কাজে ব্যস্ত। আমাদের দেশে ভয়াবহ সমস্যা হলো এই শিশুশ্রম। তারা অসহায় ও দুর্বল বিধায় সব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে এবং তাদের শ্রমের সঠিক মূল্য না দিয়ে ঠকানো যায়। এতিম, অসহায়, গৃহহীন, দুস্থ, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় তাদের নিয়োগের অন্যতম কারণ হচ্ছে- তাদের দিনরাত খাটানো যায়। এতে তারা শিক্ষা বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও পঙ্গুত্ব বরণসহ অকালে মৃতু্যর মুখেও পতিত হয় অনেকে। আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ এবং গণসচেতনতার অভাবে শিশুদের এসব কাজে ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পেশার মধ্যে রয়েছে- পরিবহণ (শ্রমিক টেম্পো, রাইডার, বাস, ট্রাক ইত্যাদিতে), মোটর ওয়ার্কসপ ও গ্রিল ওয়ার্কসপ, লেইদ মেশিন ইত্যাদিতে, শিপ ইয়ার্ডে, ইঞ্জিন বোট ও মাছ ধরার ট্রলারে, নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে, কেমিক্যাল কারখানায়, রাজনৈতিক সহিংসতায় ও কর্মসূচিতে ব্যবহার, ধূমপান ও মাদক ব্যবসায় নিয়োগ, ইটভাটায় ইত্যাদিতে। আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ, আমাদের সংবিধান, শিশু আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনে শিশুদের প্রতি সব ধরনের নিষ্ঠুরতা, জোর-জবরদস্তি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার এবং যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেখানে দুঘর্টনার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যার ফলে তার শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এমন ধরনের কাজ থেকে শিশুর নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে। যেসব কাজ শিশুর স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর এবং যে কাজ তার শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, নৈতিক বা সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যেসব কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারও শিশুর রয়েছে। আমাদের শ্রম আইনেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সি বা কিশোর যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। তবে কোনো শিশু (চৌদ্দ বছর পূর্ণ হয় নাই এমন কোনো ব্যক্তি) যদি কোনো ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। তারাও কর্মরত শিশুদের মধ্যে পড়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত। শিশুদের লেখাপড়া, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও মেধা বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা ছাড়া শিশুশ্রম কীভাবে বন্ধ হবে? ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে একটি শিশুবান্ধব সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন এবং সর্বস্তরের নাগরিকদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।