শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জে নে নি ন

জার্মানিতে সমকামিতার আইনি বিবর্তন

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

প্রম্নশিয়ান সাম্রাজ্য এবং পরে নাৎসি জার্মানিতে সমকামীরা ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হতেন। সমকামিতার অভিযোগে ছিল কারাদন্ডের বিধান। এমনকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক জার্মানি স্থাপিত হওয়ার পরও সমকামীদের অধিকার নিশ্চিত হয়নি। তবে কয়েক দশকে সে অবস্থানের দ্রম্নতই পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৬৯ সালে সমকামীদের শাস্তি দেওয়ার বিধান বাতিল হলেও ২০১৭ সালে এসে তারা বিয়ের অধিকার পান।

জার্মান পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে সমকামীদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ান রাজনীতিবিদরা। কিন্তু তখনো অনেক পার্লামেন্ট সদস্য এর বিরুদ্ধে ছিলেন। ক্ষমতায় থাকা দল সিডিইউর ৩০৯ সদস্যের মধ্যে ২২৫ জনই এর বিরুদ্ধে ভোট দেন। খোদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছিলেন বিরোধিতাকারীদের একজন। তবে পরবর্তী ভোটে রাজনীতিবিদরা যাতে দলের মতাদর্শ মেনে ভোট না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে ভোট দেন, সে আহ্বান জানিয়েছিলেন ম্যার্কেল।

সমকামীদের অধিকারের আন্দোলন যত জনপ্রিয় হতে থাকে, জার্মান রাজনীতিতেও পড়ে এর প্রভাব। অনেক রাজনীতিবিদ নিজেদের সমকামিতার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে থাকেন। ২০০১ সালের সিটি নির্বাচনে বার্লিনের এসপিডির মেয়র প্রার্থী ক্লাউস ভোভেরাইট দলের সম্মেলনে তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, 'আমি সমকামী এবং এটা খারাপ কিছু নয়।' পরে ভোভেরাইট মেয়র নির্বাচিত হন এবং টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

সমকামিতা সাধারণ মানুষের চোখে ধীরে ধীরে সহনীয় করে তোলায় বড় ভূমিকা রেখেছেন রাজনীতিবিদরা। চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক সফরে তার পার্টনার মিখায়েল ম্রোনৎসকে নিয়ে যেতেন। এখন এমনকি সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলে এমন কট্টর ডানপন্থি দল এএফডির এক নেত্রী অ্যালিস ভাইডেলও এক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

জার্মানির বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান নিজেকে সমকামী ঘোষণা দেওয়া প্রথম মন্ত্রী। দলের অন্যতম উদীয়মান রাজনীতিবিদ বলে বিবেচনা করা হয় স্পানকে। করোনা মহামারিতে নিজের দেশকে দারুণভাবে সামাল দেওয়ায় দল ও দেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। ম্যার্কেলের পর সিডিইউয়ের প্রধান হওয়ার লড়াইয়েও অনেক এগিয়ে আছেন স্পান। জিতে গেলে তিনি হতে পারেন প্রথম সমকামী জার্মান চ্যান্সেলর।

রাজনীতিবিদ তো বটেই, জার্মান জনগণের মধ্যেও ধীরে ধীরে সমকামীভীতি দূর হচ্ছে। কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্যের স্বীকার হন তারা। সম্প্রতি জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ এবং বিলেফেল্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেদের এলজিবিটিকিউ ঘোষণা দেওয়া ৩০ শতাংশ কর্মীই কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন। জরিপে অংশ নেওয়া এক-তৃতীয়াংশই জানিয়েছেন, তারা সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে