বিচিত্র

আত্মহত্যার চেষ্টা করলেই দÐ

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কেনিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে প্রতিদিন অন্তত চারজন আত্মহত্যা করছে। তা সত্তে¡ও বিষয়টিকে এখনো লজ্জার একটি বিষয় বলে মনে করা হয়, ফলে এই ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে যথাযথ সেবাও দেয়া সম্ভব হয় না। এ ধরনের চেষ্টা যারা করে, উল্টো আইন করে তাদের শাস্তি দেয়া হয়। রোজেলিন নামের এক নারী তুলে ধরেছেন কীভাবে সেই অন্ধকার বিপদ তিনি কাটিয়ে উঠেছিলেন। তিন সন্তানের এই মাকে মনে হবে খুবই হাসিখুশি একজন। কিন্তু কেউ যেটি জানে না, তা হলো বেশ কয়েকবার তিনি নিজের জীবন নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অনেক বছর ধরে তিনি ঘনিষ্ঠ সবার কাছ থেকে এই গোপন তথ্য লুকিয়ে রেখেছেন, এমনকি তার কিশোর সন্তানদের কাছ থেকেও। রোজেলিন বলেন, ‘চরম বিষণœতার কারণে চারবার আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। বাইপোলার নামের এই রোগের এটি ছিল অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। প্রথমদিকে এসব নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে আমি লজ্জা পেতাম, ...মানুষজন আমাকে দেখতে হাসপাতালে আসত। তারা মনে করত, আমি নিশ্চয়ই কোনো ওভারডোজ নিয়েছি। কিন্তু তারা আমার সামনে এসব নিয়ে কথা বলতো না। আমরা সবকিছু নিয়েই কথা বলতাম, কিন্তু এটা নিয়ে কোনো আলোচনা হতো না যে, কী জন্য আমি হাসপাতালে ভতির্ হয়েছি।’ কেনিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশটিতে ১৪০০ মানুষ আত্মহত্যা করে। দেশটির আইনি কাঠামোর কারণে এসব মানুষকে দরকারি স্বাস্থ্য সহায়তাও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশটির ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, আত্মহত্যার চেষ্টাকে হত্যার মতো অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে। এরকম চেষ্টাকারীদের কারাদÐ, জরিমানা বা উভয় দÐই হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা এড়াতে এবং আত্মহত্যা ঠেকাতে সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আনতে হলে এই আইন বদলানো দরকার। নাইরোবির মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ক্যাথরিন মুতিসা বলেন, ‘আমি জানি, অপরাধের তালিকা থেকে আত্মহত্যার মতো বিষয় আলাদা করার পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া চলতে চলতে আইনটি অন্তত বদলানো যেতে পারে। আসল কারণ হলো, এটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনার কারণে অনেক মানুষ কোনো চিকিৎসা পায় না। আমি যদি আত্মহত্যার চেষ্টা করি, আমি কারও সঙ্গে সেটি নিয়ে কথা বলতে পারব না, সুতরাং আমি কোনো চিকিৎসাও পাবো না। এর ফলে মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। যাদের আত্মহত্যা করা থেকে হয়তো ঠেকানো যেতো, তাদেরও কোনো সহায়তা দেয়া যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেনিয়ার অনেক প্রশাসক এবং বিচারক এখন মনে করছেন, এ ধরনের মানুষের মানসিক সেবা দরকার এবং তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো উচিত।’ ২০১৩ সালে একটি সহায়তা গ্রæপে অংশ নেয়ার জন্য রোজেলিনের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাকে আমন্ত্রণ জানায়। এটি এমন একটি খোলামেলা কথা বলার জায়গা, যেখানে সে তার গল্প খুলে বলতে পারবে, এবং তার মতো অন্য যারা এই লড়াই করছে, তাদের কথাও জানতে পারবে। এরপর সেখানে যেতে শুরু করেন রোজেলিন। তিনি বলছেন, ‘যখন আমি আমার কথা বলতে শুরু করলাম, আমি যেন মুক্তির স্বাদ পেলাম। আমি অনুভব করলাম যে আমি একা নই। ওই সহায়তা গ্রæপের সদস্যদের সঙ্গে যেন আমি একাত্মতা বোধ করলাম, কারণ তারাও এই সমস্যাটি গভীরভাবে মোকাবেলা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন আপনি কারও সঙ্গে পরিচিত হবেন যে, আপনার মতোই অবস্থায় আছে, যে নিজেকে হত্যার চেষ্টা করেছিল, এখন সেই বলছে, চিন্তার কিছু নেই বন্ধু, এটা একদিন ঠিক হয়ে যাবে। কারণ সে একই অবস্থার ভেতর দিয়ে গিয়েছিল এবং এখন সে সেটি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।’ রোজেলিনের এই বণর্নার মাধ্যমে এটাই পরিষ্কার হচ্ছে যে, নিজেকে তুলে ধরতে পারার সুযোগ আর এ ধরনের সমথর্ন গ্রæপের ফলাফল এই মানুষের জন্য কতটা সহায়ক হতে পারেÑ এই দুবর্ল মনের মানুষের জন্য তাদের কষ্টকর সময়ে এ ধরনের উদ্যোগ তাদের জীবনে কতটা পরিবতর্ন এনে দিতে পারে। তার গল্প এটাও তুলে ধরছে যে, কেনিয়াজুড়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী মানুষকে দোষারোপ আর বিচারের সংস্কৃতিরও পরিবতর্ন কত জরুরি দরকার। বিবিসি অবলম্বনে