শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আদালতে হয়রানি এড়াতে জানতে হবে

সমন জারি বিষয়ে যা জানা জরুরি

বাংলাদেশের বিচারপ্রার্থীদের কাছে মামলা-মকদ্দমা যেন ভোগান্তি আর দুর্ভোগের অপর নাম। একান্ত বাধ্য না হলে শান্তিপ্রিয় কোনো মানুষ এখানে মামলা-মকদ্দমায় জড়াতে চান না। আদালত প্রসঙ্গে একটা কথা জনসাধারণ্যে খুব প্রচলিত- কোর্টের ইটও টাকা চায়। বাস্তবতা আরও নির্মম। টাকা-পয়সা খরচ করে সর্বস্বান্ত হয়েও অনেক ক্ষেত্রে ফলাফল পান না বিচারপ্রার্থীরা। বিচারপ্রার্থী মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল আদালতকে জনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা না করতে পারার ব্যর্থতার পেছনে রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব পক্ষেরই কমবেশি দায় আছে। আদালতে বিচারপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হন যতগুলো কারণে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো বিচারপ্রার্থীদের অজ্ঞতা ও অসতর্কতা। বিচারপ্রার্থীদের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে অসাধু মহল পদে পদে তাদের বস্ন্যাকমেইল করে থাকে। আদালতের ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা কোন কোন সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন, আমরা কয়েকটি পর্বে সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে সমন জারি সম্পর্কিত পরামর্শ
আইন ও বিচার ডেস্ক
  ১৮ মে ২০২১, ০০:০০

আদালতে বিচারপ্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতার একটি অন্যতম কারণ সমন জারি বিষয়ক ত্রম্নটি। বিশেষত অনেক দেওয়ানি মামলায় সমন জারিতেই বছরের পর বছর পার হয়ে যায় বলে আদালতব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। কিছু বিষয় জানা থাকলে এবং তৎপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে সমন জারিতে হয়রানি কমানো সম্ভব।

১. সমন জারিতে জারিকারক

উৎকোচ চাইলে দৃঢ় থাকুন

অনেক সময় মামলা দায়েরের পর জারিকারকরা বাদীর বাড়িতে গিয়ে সমন জারির জন্য উৎকোচ দাবি করে থাকে বলে অভিযোগ আছে। এরকম ক্ষেত্রে কোনোভাবেই জারিকারককে পয়সা দেবেন না। তাকে বলুন, সমন জারি না করলে তার বিরুদ্ধে নেজারতের ভারপ্রাপ্ত জজ এবং সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেবেন। জারিকারকের গাফলতির কারণে সমন জারি না হলে উলিস্নখিত বিচারকদ্বয়কে লিখিত অভিযোগ দিন। জারিকারকের নাম জানা না থাকলে অভিযোগে মামলার নম্বর, জারিকারক কর্তৃক উৎকোচ দাবির তারিখ প্রভৃতি উলেস্নখ করুন।

২. সমন বিষয়ে নথিতে সঠিক আদেশ

নিশ্চিত করতে সজাগ থাকুন

দেওয়ানি ও পারিবারিক মামলায় প্রত্যেক বিবাদীর ওপর দুই ধরনের সমন দেওয়া হয়- পদাতিক সমন ও ডাক সমন। কোনো বিবাদীর ওপর উলিস্নখিত যে কোনো এক ধরনের সমন জারি হয়ে গেলে অন্যটি জারির প্রয়োজন পড়ে না [দেওয়ানি কার্যবিধির আদেশ ৫, বিধি ৩১; পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ধারা ৯(২)(ক) দ্রষ্টব্য)] যেমন- একজন বিবাদীর ওপর ডাক সমন জারি হলে তার ওপর পদাতিক সমন জারি হওয়ার আর কোনো আবশ্যকতা থাকে না।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ডাক বা পদাতিক সমনের কোনো একটি গরজারি হলে অপরটি জারি থাকা সত্ত্বেও পেশকাররা গরজারিকৃত সমনটি পুনরায় জারির জন্য বাদীকে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে বলেন। এতে মামলা অহেতুক বিলম্বিত হয়। আপনার আইনজীবীকে এরকম ক্ষেত্রে সজাগ রাখুন।

পেশকার সমন বিষয়ে সঠিক আদেশ না লিখলে আইনজীবী মারফত আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করুন।

৩. কোনো সমন বারবার

গরজারি হলে

কোনো বিবাদীর ওপর সমন বারবার গরজারি হলে হাতে হাতে জারির সুযোগ রাখা আছে দেওয়ানি কার্যবিধিতে। অর্থাৎ আপনি নিজে সমন জারি করে রিপোর্ট লিখে আদালতে জমা দিতে পারেন। সেটি সম্ভব না হলে ঢোল সহরতের মাধ্যমে সমন জারি করার উদ্যোগ নিতে পারেন। একাধিকবার কোনো পদাতিক/ ডাক সমন গরজারি হলে একই উপায়ে আবারও সমন জারির পদক্ষেপ না নিয়ে এই দুটি বিকল্প উপায় (হাতে হাতে/ ঢোল সহরতযোগে) অবলম্বন করুন।

৪. গরজারিকৃত সমন পুনরায় ইসু্য

করতে হলে দ্রম্নত ব্যবস্থা নিন

অনেক সময় দেখা যায়, গরজারিকৃত সমনটি পুনরায় ইসু্যর জন্য আদালত আদেশ দেন কিন্তু আইনজীবী সামান্য এই কাজটুকু করার জন্য দিনের পর দিন টাইম পিটিশন দিয়ে যান।

বিচারপ্রার্থীকে এক্ষেত্রে দৃঢ় হতে হবে। আইনজীবী যেন অহেতুক কালক্ষেপণ না করেন, সেজন্য সজাগ থাকতে হবে।

৫. আপনি বিবাদী হলে সই-স্বাক্ষর

করে সমন গ্রহণ করুন

অভিযোগ আছে, বিবাদীপক্ষের কাছে গিয়েও জারিকারক সমন জারিতে ত্রম্নটি রাখার প্রস্তাব দিয়ে উৎকোচ চান। আবার কোনো কোনো আইনজীবী বিবাদীকে সমন গ্রহণ না করার পরামর্শ দেন।

আপনি বিবাদী হলে মনে রাখবেন, জারিকারক বা আইনজীবীর এরকম প্রস্তাব আপনাকে কেবল ক্ষতির মুখেই ফেলবে। সমন জারিতে ত্রম্নটি থাকলে মামলা বিলম্বিত হবে এবং এতে বাদীর পাশাপাশি আপনারও খরচ বাড়বে।

সমন সঠিকভাবে জারি না হলে আপনার বিরুদ্ধে একতরফা রায় হতে পারে। সেই রায় রদরহিত করতে আপনাকে কঠিন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে। বিবাদী হিসেবে সমনজারিতে আপনি যদি অসৎ প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তবে তা জারিকারক ও অসাধু আইনজীবীর পকেট ভারী করবে কেবল। সুতরাং নিজ সই-স্বাক্ষরে সঠিকভাবে সমন গ্রহণ করুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে