কোর্ট স্টাফরা ঘাটে ঘাটে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব কোর্ট স্টাফ প্রজাতন্ত্রের নিম্নপদের কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি করার দুঃসাহস পায় বিচারপ্রার্থী জনগণের অজ্ঞতার কারণে। আইনজীবীরা চাইলে এসব কোর্ট স্টাফের দুর্নীতি বহুলাংশে রোধ করতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আইনজীবীদের একাংশ কোর্ট স্টাফদের ম্যানেজ করে চলেন এবং তাদের ম্যানেজ করার নাম করে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে বেশি ফি দাবি করেন।
আবার কোর্ট স্টাফদের প্রতি বিচারক অতি নির্ভরশীল হয়ে পড়লে অসাধু স্টাফরা বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের ওপর চড়াও হওয়ার সুযোগ পায় বলে দেখা যায়।
কোর্ট স্টাফদের দুর্নীতি রোধে বিচারপ্রার্থীদের যেসব বিষয় জানা জরুরি, তা নিয়েই আজকের আয়োজন।
১. পেশকার-সেরেস্তাদারকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই
আদালতের পেশকার কিংবা সেরেস্তাদার তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তাদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করুন। তবে তাদের 'স্যার' বলে ডাকবেন না। মনে রাখবেন, তাদের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। তারা বিচারকের হুকুম তামিলকারী ও বিচারপ্রার্থীদের সেবক। তাদের তোয়াজ করার কিছু নেই। কিন্তু বিচারপ্রার্থীরা অজ্ঞতা থেকে পেশকার-সেরেস্তাদারদের অনেক বড় কিছু ভেবে বসেন। পেশকারদের অনেকের দাবি, তারা না চাইতেই তাদের পকেটে বিচারপ্রার্থীরা টাকা গুঁজে দেন। পেশকারকে উৎকোচ না দিলে অস্বস্তিতে থাকে অনেকে। অনেক বিচারপ্রার্থীর ধারণা, পেশকার-সেরেস্তাদার অসন্তুষ্ট থাকলে তার মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অথচ বাস্তবে উলেস্নখ করার মতো কোনো উপকার বা ক্ষতি করার সামর্থ্য তাদের নেই।
২. কজলিস্ট দেখতে কিংবা জবানবন্দিতে স্বাক্ষর করতে পেশকার-পিয়নকে কোনো টাকা দেবেন না
ধার্য তারিখে আদালত কী আদেশ দিলেন, মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ কবে নির্ধারিত হলো সেগুলো লেখা থাকে আদালতের কজলিস্টে। এই কজলিস্ট বিচারপ্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, যা দেখতে কোনো পয়সা লাগে না। আপনার মামলার ধার্য তারিখে মামলার নথি বিচারকের সামনে পেশ করতে পেশকার বাধ্য। এজন্য পেশকারের তরফে কোনো উৎকোচ দাবির সুযোগ নেই।
আদালতে প্রদত্ত সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেন বিচারক, যার নিচে সাক্ষীর স্বাক্ষর নিতে পেশকার বাধ্য। এরকম স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য পেশকার/ পিয়ন কোনো অর্থ দাবি করলে স্বাক্ষর না করে চলে যেতে উদ্যত হোন। দেখবেন পেশকার/ পিয়ন সাক্ষীকে ডেকে এনে স্বাক্ষর নেবে। পেশকার/ পিয়ন স্বাক্ষর না নিলে সরাসরি বিচারককে জানান।
কিছু পেশকার বিচারপ্রার্থীদের বস্ন্যাকমেইল করেন এই বলে যে, টাকা না দিলে সাক্ষীর সাক্ষ্যের নিচে পেশকার স্বাক্ষর করবে না। মনে রাখবেন, সাক্ষীর প্রদত্ত সাক্ষ্যের নিচে পেশকারেরও স্বাক্ষর লাগবে- এরকম কোনো বিধান আইনে নেই। পেশকার স্বাক্ষর না দিলে আপনার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতিও হবে না।
৩. কোর্ট স্টাফ উৎকোচ চাইলে তার
কথোপকথন রেকর্ড করুন
কোর্ট স্টাফ বিচারকের নাম করে বা যে কোনো বাহানায় আপনার কাছ থেকে কোনো উৎকোচ চাইলে তার অডিও বা ভিডিও ফোনে ধারণ করার চেষ্টা করুন।
৪. কোর্ট স্টাফের দুর্নীতি সম্পর্কে বিচারককে
লিখিত অভিযোগ দিন
কোর্ট স্টাফ আপনার কাছ থেকে মামলার তারিখবাবদ বা অন্য কোনো বাহানায় টাকা দাবি করলে বা আপনার নথি বিচারকের সামনে পেশ না করলে তার ব্যাপারে বিচারককে জানানোর উদ্যোগ নিন।
এজলাস শেষ করে বিচারক যখন নামার প্রস্তুতি নেবেন, তখন বিচারকের কাছে আপনার অভিযোগ লিখিত ও মৌখিকভাবে উপস্থাপন করুন। অভিযোগের সঙ্গে কোনো প্রমাণ থাকলে সেটি জুড়ে দিন।
৫. বিচারককে প্রদানের উদ্দেশ্যে কোনো লেনদেন নয়
কোনো মামলার চূড়ান্ত রায় বা গুরুত্বপূর্ণ আদেশ আপনার অনুকূলে করে দেওয়ার জন্য কোনো আইনজীবী বা কোর্ট স্টাফ অর্থ চাইলে কখনই তা দেবেন না। মনে রাখবেন, এটা অর্থ আদায়ের একটি কূটকৌশল। আপনার মামলার মেরিট থাকলে এমনিতেই রায়/ আদেশ আপনার অনুকূলে আসবে। সেক্ষেত্রে আইনজীবী/ কোর্ট স্টাফ মিথ্যে ক্রেডিট নিয়ে আপনার টাকাটি আত্মসাৎ করবে।
আর রায়/ আদেশ যদি আপনার বিপক্ষে যায়, তবুও ওই আইনজীবী/ কোর্ট স্টাফ নানা বাহানায় আপনার সেই অর্থ আত্মসাৎ করবে। সুতরাং, অসাধু ব্যক্তির এ ধরনের ফাঁদে বোকার মতো পা দেবেন না।
৬. বিচারকের অস্বাভাবিক গাফলতি ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে জানান
আদালতের স্টাফ কর্তৃক হয়রানির শিকার হয়ে বিচারককে জানানো সত্ত্বেও বিচারক যদি কোনো পদক্ষেপ না নেন বা বিচারক যদি দিনের পর দিন আপনার মামলা না শোনেন বা শুনানির পর আদেশ দিতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন, তাহলে ওই বিচারকের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে (জেলা জজ/ সিজেএম/ হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল) লিখিতভাবে অবহিত করুন।