ধষর্ণ চেষ্টার মিথ্যা মামলায় দÐ ও একটি দৃষ্টান্ত

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
এবার ধষর্ণ চেষ্টার মিথ্যা মামলা করার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দিনাজপুরের বিরামপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই নারী মিথ্যা মামলা করেছিলেন। ওই নারীর নাম নুরজাহান বেগম (৪৫)। তিনি বিরামপুর পৌর শহরের ঈদগাহ মহল্লার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। ১২ অক্টোবর ভোরে হাকিমপুর উপজেলা থেকে নুরজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক নুরজাহানের কাছ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতক জমি কেনেন তিনি। কিন্তু টাকা নেয়ার পরও জমি রেজিস্ট্রি দিতে টালবাহানা করতে থাকেন নুরজাহান। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০০০ সালের ৯ ডিসেম্বর আদালতে তার বিরুদ্ধে ধষর্ণ চেষ্টার অভিযোগ ও শ্লীলতাহানির মামলা করেন নুরজাহান। আদালত মামলাটি থানায় এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে আদেশ দেন। পরে দিনাজপুর জেলা আদালতে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। মিথ্যা মামলা করায় আবদুর রাজ্জাক ২০১১ সালের ২১ আগস্ট নুরজাহানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনের ১৭ ধারায় মামলা করেন। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে চাজর্ গঠন করা হয়। ২০১৫ সালে নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে তিন বছরের সশ্রম কারাদÐ এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন দিনাজপুর জেলা আদালতের বিচারক। একই সঙ্গে নুরজাহানের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ধষর্ণ চেষ্টার অভিযোগ ও শ্লীলতাহানির মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর থেকে মামলার বাদী নুরজাহান বেগম পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার ১২ অক্টোবর ভোরে হাকিমপুর উপজেলা থেকে নুরজাহানকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় থানা পুলিশ। সারা দেশে এরকম ঘটনাই ঘটছে। নারী ও শিশু নিযার্তন আইনের কঠোরতাকে পুঁজি করে প্রতিপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে বহু মিথ্যা মামলা হচ্ছে। সে সব প্রতিরোধের জন্য প্রণীত হয়েছে আইন, আছে সাজার ব্যবস্থা। তারপরও মিথ্যাচার, ভÐামিমুক্ত সমাজ উপহার পাচ্ছে না জাতি। প্রতিনিয়ত নারী নিযার্তনের মামলাকে মিথ্যা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিরপরাধ ব্যক্তিকে ষড়যন্ত্রমূলক জড়ানো হচ্ছে। ফলে আসল নিযার্তনের ঘটনা নিণর্য় করা কঠিন হয়ে পড়ছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে মিথ্যা মামলায় কঠিন শাস্তি সম্পকের্ বলা আছে। এ আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করে বা করায় তাহলে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যে অভিযোগ দায়ের করিয়েছে ওই ব্যক্তি অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদÐে দÐিত হবে এবং এর অতিরিক্ত অথর্দÐেও দÐনীয় হবে। উপধারা (২) মতে, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল উপধারা (১)-এর অধীন সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবে। সুতরাং, মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের শিকার হলে বিবাদী আইনের মধ্যে থেকেই আদালতে লিখিত পিটিশন দায়ের করার মধ্যদিয়ে প্রতিকার পেতে পারে। মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের দায়ে অপরাধীর সাত বছর পযর্ন্ত কারাদÐ হতে পারে। নারী নিযার্তন ঠেকাতে উল্লিখিত আইনটি যথাথর্ভাবে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হোক, কোনো নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার না হোক সেটাই সবার প্রত্যাশা। ১৭ ধারার প্রতিকার কীভাবে ফলপ্রসূ করা যায় তা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। কারণ এত্তসব রক্ষাকবচ সত্তে¡ও ওইসব অন্যায্য মামলা দায়ের করা বন্ধ হয়নি। এসব অন্যায্য মামলা দায়ের করার পরামশর্ দেয়া এবং দরখাস্ত মুসাবিদা করে দেয়ার লোকেরও অভাব নেই। অনেক ক্ষেত্রেও এই সব দরখাস্তগুলো অশালীন ভাষায় লেখা হয়। এই আইনের অধীনে মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সাজা হচ্ছে খুব কম। কম সাজা হওয়ার কারণগুলো উপরের উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। এ ছাড়া দÐবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান প্রভৃতি সম্পকের্ বিধান বণির্ত হয়েছে। দÐবিধির ১৯১ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য দান সম্পকের্ বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি সত্য কথনের জন্য হলফ বা আইনের প্রকাশ্য বিধান অনুসারে আইনত বাধ্য হয়ে বা কোনো বিষয়ে কোনো ঘোষণা করার জন্য আইন অনুসারে বাধ্য হয়ে এমন কোনো বিবৃতি দান করে, যা মিথ্যা এবং যা সে মিথ্যা বলে জানে বা বিশ্বাস করে বা সত্য বলে বিশ্বাস করে না, সেই ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বলে গণ্য হবে। কোনো বিবৃতি মৌখিকভাবে বা পক্ষান্তরে যেভাবেই দেয়া হোক তা এ ধারার অন্তভুর্ক্ত হবে। প্রত্যয়নকারী ব্যক্তির বিশ্বাসসংক্রান্ত মিথ্যা বিবৃতি এ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য হবে। এ ছাড়া যে ব্যক্তি বলে যে, সে এমন কোনো বস্তুতে বিশ্বাস করে, যা সে প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস করে না এবং যে ব্যক্তি বিবৃতি দিয়ে বলে যে, সে এমন কোনো বিষয় জানে, যা সে প্রকৃতপক্ষে জানে না, তারাও মিথ্যা সাক্ষ্য দানের জন্য দোষী সাব্যস্ত হতে পারে। দÐবিধির ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার শাস্তি সম্পকের্ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিচারবিভাগীয় কোনো মামলার পযাের্য় ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে বা মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন করলে সেই ব্যক্তি যে কোনো বণর্নার জন্য কারাদণড পেতে পারে, যার মেয়াদ সাত বছর পযর্ন্ত হতে পারে এবং একই সঙ্গে তাকে অথর্দÐে দÐিতও করা যেতে পারে। অন্য কোনো মামলায় ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার শাস্তি তিন বছরের কারাদÐ এবং অথর্দÐে দÐনীয় হবে। লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের্র আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স