এক প্যাকেট চায়ের জন্য দশ বছর জেল

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
অ্যালেক্সি নভিকভ। রাশিয়ান এই ভদ্রলোকের হারবাল চা খুব প্রিয়। শখ করে তাই সুদূর পেরু থেকে এক প্যাকেট ভেষজ উপাদান মিশ্রিত চা আনিয়েছিলেন। কিন্তু শখ করে আনা এই চা এখন তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনার শুরু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। অ্যালেক্সি যাচ্ছিলেন রাশিয়ার সামারা প্রদেশে স্ত্রী-কন্যার কাছে। দীর্ঘ রাস্তা এড়িয়ে সংক্ষিপ্ত পথে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ কাজাখস্তান দিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তিনি কাজাখস্তান সীমান্তে হাজির হন। সীমান্তরক্ষীরা তার তলস্নাশি নেওয়ার সময় ব্যাগের মধ্যে পান একটি চায়ের প্যাকেট। সন্দেহের চোখে তারা জানতে চান, এটা চায়ের প্যাকেট না নেশার দ্রব্য? কারণ ভেষজ ওই চায়ের প্যাকেটটি দেখতে অবিকল নেশাজাতীয় দ্রব্যের মতো। অ্যালেক্সি তাদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এমনকি প্যাকেটের গায়ে স্প্যানিশ অক্ষরে লেখাও দেখান। কিন্তু সীমান্তরক্ষীরা তা মানতে নারাজ। তারা পরীক্ষা করে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ ডেকে আনেন। পরীক্ষা শেষে যখন কিছুই পাওয়া গেল না তখন অ্যালেক্সি সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি পেলেন। তবে ঘটনার শেষ এখানেই নয়। এটা ছিল মূলত ঘটনার শুরু। ওই ঘটনার মাস তিনেক পরে অ্যালেক্সির নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে রাশিয়ান পুলিশ। মাদক চোরাচালানের দায়ে তাকে আটক করে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে আদালতের রায়ে তাকে দশ বছর এক মাসের জেল দেওয়া হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে অ্যালেক্সি ও তার পরিবার। আইনজীবী ডেকে তারা এই মামলার পুনঃতদন্তের দাবি জানায়। তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল সত্য। ওই সময়ে কাজাখস্তান সীমান্তরক্ষীরা অ্যালেক্সিকে সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি দিলেও কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির ওই চায়ের প্যাকেটের জন্য তার নাম মাদক চোরা কারবারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এই তালিকা তারা রাশিয়ান পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এবং সেই তালিকা মোতাবেক রাশিয়ান পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে অ্যালেক্সি জেলেই আছে। চলতি মাসে অ্যালেক্সির অদ্ভুত সাজার বিষয়টি ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। তাছাড়া তার পরিবার ও আইনজীবীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে বিষয়টি যেহেতু দুটি দেশের মধ্যে গড়িয়েছে সেহেতু এই অদ্ভুত সাজা থেকে অ্যালেক্সির কবে মুক্তি মিলবে তা নিশ্চিত নয়।