সংশোধনমূলক বিচার

নারী কয়েদিদের সংশোধনে ব্রিটিশ কারাগার ব্যথর্ হচ্ছে?

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের কারাগারগুলোতে নারী বন্দিদের সংখ্যা ৫ শতাংশেরও কম। কিন্তু এরপরও পুরুষ অপরাধীদের তুলনায় নারীদের আবার অপরাধ করার সম্ভাবনা বেশি। তাহলে নারী বন্দিদের শোধরানোর ক্ষেত্রে কারাগার কেন অকেজো প্রতিপন্ন হচ্ছে? আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই বা কি চেষ্টা চলছে? একটি জালিয়াতির মামলায় ২০১১ সালে মাস তিনেক জেল খেটেছিলেন লিসা। মাস তিনেক শুনতে খুবই কম সময়। কিন্তু লিসার মনোজগৎ ও তার বাস্তবজীবনের ওপর এর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছিল। কন্যাদের থেকে দূরে জেলে বসে বসে সে নিজের সক্ষমতা নিয়ে নানাবিধ দুশ্চিন্তায় জজির্রত হয়েছে। এর ফলে একটা সময়ে তার মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। জেলের সময়টাতে সে তার কন্যাদের কারাগারে তাকে দেখতে আসতে বারণ করেছিল। কারণ সে চায়নি তিক্ত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তার মেয়েরা যাক। কিন্তু এরপরও লিসার শেষ রক্ষা হয়নি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই যেন তার জীবনে প্রকৃত বিড়ম্বনা শুরু! তাকে দেখামাত্রই লোকেরা কানাঘুষা শুরু করত। কি মুদি দোকান, কি পাড়ার গলি বা কি তার মেয়েদের স্কুলের সামনে অপেক্ষারত অন্য শিশুদের অভিভাবকরা। সবখানেই চলত এমন। এই অবস্থায় এমনকি স্কুল থেকে নিজের মেয়েদের আনতে যেতেও আতঙ্কিত থাকতেন লিসা। এই অভিজ্ঞতার বণর্না করতে গিয়ে লিসা বলছিলেন, ‘জেলখানায় থাকার চেয়েও এই পরিস্থিতি বিচ্ছিরি।’ ‘উইমেন ইন চ্যারিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য মতে ২০১৭ সালে যত নারী কারাগারে গেছে তাদের শতকরা ৮৪ ভাগই মূলত সহিংস নয় এমন অপরাধে অভিযুক্ত। যেমন মামুলি চুরি বা অন্যের চুরির মাল-সামাল বিক্রি বাট্টা বা বন্দোবস্ত করা, কর পরিশোধ না করাÑ এই জাতীয় সব অপরাধ। ছোটখাটো অপরাধের কারণেই নারীরা স্বল্পমেয়াদি শাস্তি পায়। আর এ কারণেই নারীদের মধ্যে হয়তো আবার অপরাধ করার প্রবণতা বেশি। কিন্তু দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে গত বছর জানা গেছে, স্বল্পমেয়াদে কারাভোগ করে যারা, তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ নিবিের্শষে সব লিঙ্গের মানুষের ক্ষেত্রেই আবার অপরাধের প্রবণতা লক্ষণীয়। তবে কিছু ব্যাখ্যা দাবি করছে, বছর খানেকের কম সময় সাজা খাটে যে সব নারী অপরাধী তাদের ক্ষেত্রে আবার অপরাধের প্রবণতাটা বেশি। নারী বন্দিদের নিয়ে আরেকটি ভয়ঙ্কর তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। জানা যাচ্ছে, জেলখানায় নারী বন্দিরা পুরুষদের তুলনায় অন্তত দুইগুণ বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সহযোগিতার প্রয়োজন অনুভব করেন। দি হাওয়াডর্ লিগের দেয়া তথ্য মতে, জেলখানায় প্রতি ৫ জন নারী বন্দির মধ্যে একজন বন্দি নিজেকে শারীরিকভাবে আঘাত করে থাকে। নারীদের জন্য জেল তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। মাত্র কয়েক সপ্তাহ জেল খাটার পর দেখা যায়, একজন নারী তার চাকরি, তার গৃহ এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সে তার সন্তানদের ওপরেও অধিকার হারায়। দেশটির সরকার কমিউনিটি সাভিের্সর ব্যবস্থা করার মাধ্যমে নারীদের জেলে পাঠানো থেকে দূরে রাখার একটা ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে। আর এ জন্য দুই বছরে ৫০ লাখ পাউন্ডের মতো খরচ ধরা হয়েছে। নারীদের জন্য কারাগার কোনো কাজে আসে না বলে মনে করা হচ্ছে। নারী বন্দিদের নিয়ে আরও জানা যাচ্ছে, তাদের অন্তত ৬০ ভাগ আসলে বাড়িতে নিপীড়নের শিকার। ইয়াসমিন আখতার নামে এশিয়ান একজন কারাভোগকারী অভিজ্ঞতা থেকে জানাচ্ছিলেন, তিনি যখন জেলে ছিলেন পরিবারের লোকেরা বলেছে তিনি বাইরে কাজে গেছেন। কারণ তার পরিবার এই কলঙ্কের দায় নিতে চায়নি। ম্যারি-ক্লেয়ার ও’ব্রাইয়েন ১৪ মাস জেল খেটেছিলেন। বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালিয়ে একজনকে হত্যার দায়ে তিনি শাস্তি পেয়েছিলেন। ৩৭ বছর বয়স্কা ও’ব্রাইয়েন বলছিলেন, অনেকের সহযোগিতায় তিনি ঘুরে দঁাড়াতে পেরেছিলেন। কিন্তু বহু নারীর ভাগ্যেই তা জোটে না। বিচার মন্ত্রণালয় বলছে, নারীদের সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে সম্প্রদায়ভিত্তিক বিধানের (কমিউনিটি প্রভিশন) ওপরেই তারা বেশি জোর দিতে আগ্রহী। তবে এজন্য অথার্য়ন একটা জরুরি বিষয়। উইমেন ইন প্রিজনের প্রধান নিবার্হী কেট প্যারাডিন বলছিলেন, যে পরিমাণ অথার্য়ন এখন তাদের আছে তা যৎসামান্য মাত্র। যদি এই খাতে টাকার পরিমাণ না বাড়ে তাহলে হয়তো অসুবিধাজনক এবং নাজুক অবস্থানে থাকা নারী ও তাদের পরিবারের জন্য প্রকৃতাথের্ই মুষ্কিল হবে। বিবিসি বাংলা অবলম্বনে