জেনে নিন

ডেথ রেফারেন্স

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ফৌজদারি কাযির্বধির ৩২ ধারা বলা হয়েছে, দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজের আদালত কোনো আসামিকে আইন অনুসারে যে কোনো পরিমাণের জরিমানা, যে কোনো মেয়াদের কারাদÐ এবং মৃত্যুদÐ প্রদান করতে পারে। তবে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত থেকে প্রদত্ত মৃত্যুদÐের আদেশ অবশ্যই হাইকোটর্ বিভাগ থেকে নিশ্চিত করতে হবে। নিম্ন আদালত থেকে প্রদত্ত মৃত্যুদÐাদেশ উচ্চ আদালত কতৃর্ক নিশ্চিত করার এই প্রক্রিয়াকে ‘ডেথ রেফারেন্স’ বলে। ডেথ রেফারেন্স এমন একটি প্রক্রিয়া, যার অধীনে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামি নিজ থেকে তার মৃত্যুদÐাদেশের বিরুদ্ধে আপিল না করলেও বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চ আদালত কতৃর্ক নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে এবং নিম্ন আদালতের মৃত্যুদÐাদেশে কোনো ত্রæটি পরিলক্ষিত হলে, তা সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এই সংশোধনের কাজ করতে গিয়ে উচ্চ আদালত নিম্ন আদালত কতৃর্ক প্রদত্ত মৃত্যুদÐের সাজা বাতিল করে সাজাপ্রাপ্তকে খালাস পযর্ন্ত দিতে পারে। একই সঙ্গে সাজা কমানো কিংবা মামলাটির পুনবির্চারের আদেশও দিতে পারে উচ্চ আদালত। দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত থেকে কোনো আসামিকে মৃত্যুদÐের সাজা দেয়া হলে, সেই সাজা পুনবিের্বচনার দুটি পথ খোলা থাকে। একটি ডেথ রেফারেন্স, যা আদালতের নিজস্ব স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়, দ্বিতীয়টি হলো আপিল। ডেথ রেফারেন্স করা হয় ফৌজদারি কাযির্বধির ২৭ অধ্যায়ের ৩৭৪ থেকে ৩৭৯ ধারার অধীনে; আর আপিল করা হয় ৪১০ ধারার আওতায়। দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত থেকে মৃত্যুদÐাদেশ দেয়া হলে তার ডেথ রেফারেন্স কিংবা আপিল দুটিই হাইকোটর্ বিভাগে সম্পন্ন হয়ে থাকে। মৃত্যুদÐাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোটর্ বিভাগে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির তরফ থেকে আপিল আবেদন করতে হয় রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরবতীর্ সাতদিনের মধ্যে। তামাদি আইনের ১৫০ অনুচ্ছেদে এই সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্স কতদিনের মধ্যে হাইকোটর্ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে, সে ব্যাপারে সুনিদির্ষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি। তবে ৩৭৬ ধারা বলা হয়েছে, আপিলের নিদির্ষ্ট সময়সীমা (৭ দিন) অতিক্রম হওয়ার আগে কিংবা যেখানে আপিল করা হয়েছে, সেখানে আপিলের নিষ্পত্তির আগে রেফারেন্স আবেদনের নিষ্পত্তি করা যাবে না। তবে যেসব মৃত্যুদÐাদেশের বিরুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত আসামির তরফে আপিল আবেদন করা হয়, সেসব ক্ষেত্রে কাযর্ত হাইকোটর্ বিভাগ ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের আবেদন একত্রে শুনানি করে থাকে। ডেথ রেফারেন্সের বাধ্যবাধকতা সম্পকের্ বলা হয়েছে ফৌজদারি কাযির্বধির ৩৭৪ ধারায়। এই ধারা মোতাবেক, যখন দায়রা আদালত থেকে কোনো মৃত্যুদÐাদেশ দেয়া হবে, তখন সেই মামলার যাবতীয় কাযর্ধারা হাইকোটর্ বিভাগে দাখিল করতে হবে এবং হাইকোটর্ বিভাগ থেকে সেই মৃত্যুদÐাদেশকে নিশ্চিত করার আগ পযর্ন্ত দÐ কাযর্কর করা যাবে না। নিম্ন আদালতের কাযর্ধারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর হাইকোটর্ বিভাগের কাছে যদি মনে হয়, কোনো গুরুত্বপূণর্ বিষয়ে (যা আসামির নিষ্পাপতা প্রমাণে ভ‚মিকা রাখতে পারে) আবারও বিচারবিভাগীয় তদন্ত কিংবা অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে, সে ক্ষেত্রে হাইকোটর্ বিভাগ ৩৭৫ ধারা মোতাবেক সেই তদন্ত কিংবা অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণের আদেশ দিতে পারে। ৩৭৬ ধারায় রেফারেন্সের অধীনে হাইকোটর্ বিভাগ একটি সাজাকে কতভাবে সংশোধন করতে পারে, তা বলা আছে। এই ধারার অধীনে হাইকোটর্ বিভাগ দায়রা আদালতের প্রদত্ত মৃত্যুদÐের সাজা বহাল রাখতে পারে কিংবা আইনগতভাবে সিদ্ধ যে কোনো ধরনের সাজা প্রদান করতে পারে। সাজা কমাতে পারে এমনকি সাজাপ্রাপ্তকে খালাস দিতে পারে। মামলার পুনবির্চারের আদেশও প্রদান করা যায় ডেথ রেফারেন্স অন্তে। ৩৭৯ ধারায় বলা আছে, ডেথ রেফারেন্সের নিষ্পত্তি করার পর হাইকোটর্ বিভাগের প্রশাসনিক দপ্তর অনতিবিলম্বে পযের্বক্ষণটি দায়রা আদালতে প্রেরণ করবে। উল্লেখ্য, দায়রা আদালতের পরিবতের্ কখনো কখনো হাইকোটর্ বিভাগেও কোনো একটি বিশেষ ফৌজদারি মামলার বিচারিক কাযর্ সম্পন্ন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাইকোটর্ বিভাগ যদি মৃত্যুদÐাদেশ প্রদান করে, তার বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্সের কোনো বিধান নেই। হাইকোটর্ বিভাগ থেকে আদি এখতিয়ারের অধীনে কাউকে মৃত্যুদÐ দেয়া হলে কিংবা নিম্ন আদালতের মৃত্যুদÐাদেশ হাইকোটর্ বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হলে হাইকোটর্ বিভাগের এ ধরনের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোটের্র আপিল বিভাগে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়। আমাদের সংবিধানের ১০৩ ধারায় এই অধিকার দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগে এ ধরনের আপিল করা সাজাপ্রাপ্তের একটি বিশেষ অধিকার। আপিল বিভাগ কোনোক্রমেই এ ধরনের আপিল অগ্রাহ্য করতে পারে না। আপিল বিভাগ থেকেও মৃত্যুদÐাদেশ বহাল রাখা হলে দÐপ্রাপ্ত রিভিউয়ের আবেদন করতে পারেন। রিভিউ খারিজ হলে সবশেষ পদক্ষেপ হিসেবে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমাপ্রাপ্তির আবেদন করা যায়। এরপর আর কোনো আইনি দরজা খোলা থাকে না। সংকলন: তাজুল ইসলাম