মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে মৌলিক আইন শিক্ষা সময়ের দাবি

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

মো. আবুল কালাম আজাদ
স্বপ্নতাড়িত দেশ বাংলাদেশ। স্বাধীন দেশ হিসেবে সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ ব্যক্তি, সমাজ, দেশের উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। একটি দেশ ও জাতির অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি হলো শিক্ষা। এই বিবেচনায় বলা হয়, 'শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড'। অর্থাৎ একজন মানুষ যেমনি মেরুদন্ড ছাড়া সোজা হয়ে স্থির দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি একটি জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করে তার শিক্ষার উপর। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত, সভ্য এবং অগ্রসর। ব্যক্তি ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম শিক্ষা। সব দেশের উন্নতি সাধনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার উন্নয়ন তথা আধুনিক শিক্ষা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় সব উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হিসেবে শিক্ষার ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলত শিক্ষা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে। পরিবর্তন হয় মানুষের চাহিদা আর এনে দেয় সাফল্য। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, সব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে কাঠামোগত ভিন্নতা। তার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় প্রতি দেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সংস্কৃতিগত দিক, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক পরিবেশের পার্থক্য। তাই বিভিন্ন দেশে মৌলিক শিক্ষাবিস্তারের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা। আর এ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে উন্নতি হয় শিক্ষার মান, সূচনা হয় দেশের অগ্রযাত্রা। সেই সঙ্গে গঠিত হয় প্রগতিশীল রাষ্ট্র। কোনো দেশে রয়েছে সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা, আবার কোনো দেশ কিছু সংখ্যক নাগরিকের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। তবে বর্তমানে বিশ্বে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে আবশ্যকীয় শিক্ষা প্রচলনের প্রতি আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশের মানুষেরই প্রথম চাওয়া সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, কারণ শিক্ষা একটি জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। একটি শিক্ষিত জাতিই পারে পৃথিবীর বুকে জায়গা করে নিতে এবং পারে একটি নতুন সভ্যতার জন্ম দিতে। তাই বাঙালি জাতিকে উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে শিক্ষাসহ বিভিন্নক্ষেত্রে দেশে ইতিমধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষায় ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবো ইনশাআলস্নাহ্‌। কিন্তু বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটুকু প্রস্তুত? উন্নত দেশগুলোর কারিকুলাম ও ব্যবস্থাপনাকে অনুসরণ করে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। কেননা, সব দেশই নিজ নিজ দেশের বাস্তবতা ও ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে শিক্ষা-দর্শন স্থির করে থাকে। সময়ের সঙ্গে এর সংস্কার হয় এবং তা বৈশ্বিক চাহিদা মোকাবিলায় অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। উন্নত দেশগুলোতে আমরা দেখতে পাই যে, সেখানে বসবাস করা নাগরিকরা অনেক সচেতন হয়ে থাকে এবং তারা আইনের প্রতি যথেষ্ট সচেতন। জাপানের স্কুলগুলোতে শিশুদের কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কাজ করতে হয়। যেমন সকালের সমাবেশের সময় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করা, শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা ক্ষেত্রে শিক্ষককে সহযোগিতা করা, বাগানের পরিচর্যা করা, খাবার পরিবেশন করা এবং খাবারের পর পরিষ্কার করা, শেখানো হয় যিনি খাদ্য রান্না করেছেন তার প্রশংসা কীভাবে করতে হয়, ওয়াশরুমে ছবির সাহায্যে হাত ধোয়ার গুরুত্ব এবং পদ্ধতি বলে দেওয়া থাকে, ফিল্ড ট্রিপে শেখানো হয় কীভাবে ধান লাগানো হয়, কীভাবে পরিচর্যা করতে হয় ইত্যাদি। জাপানে প্রায়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। তা ক্লাসগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে দুর্যোগকালীন কি করণীয় এবং কি বর্জনীয় তা শেখানো হয়। অতএব, সমসাময়িক পরিস্থিতিতে দেশের একটি বড় অংশকে দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল-মিলিয়ে চলতে পারার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের আইন সম্পর্কে কতিপয় মৌলিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আমরা মনে করি মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির 'বাংলাদেশে ও বিশ্ব পরিচিতি' বইটিতে আইন বিষয়ক একটি অধ্যায় যুক্ত করা সময়ের দাবি। যেখানে সমসাময়িক বিভিন্ন আইন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এই একটি ছোট অধ্যায় সংযুক্তের ফলে শিক্ষার্থীরা আইন কী, কেন আইন মেনে চলা উচিত, কোন কাজটি অপরাধ, অপরাধের শাস্তি কী, ইত্যাদি মৌলিক জ্ঞান বয়ঃসন্ধিকালে জানতে পারবে। এতে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখবে এবং বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে জেনে তা থেকে দূরে থাকতে পারবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এমন একটি ছোট পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লিগ্যাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইএলডি) ধুধফ@ধুধফহপড়সঢ়ধহু.পড়স