যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব

ট্রাম্প কি পারবেন বাতিল করতে?

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নিবার্হী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার বতর্মান নিয়ম বাতিলের পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি সত্যি আইনত এমনটি করার ক্ষমতা রাখেন? ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমেরিকার নাগরিক নন, এমন যে কেউ এসে সন্তান জন্ম দিলেই সেই সন্তান আমেরিকার নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে। এই নিয়ম অত্যন্ত হাস্যকর, এটি বন্ধ হওয়া উচিত।’ তবে এটি দেড়শ বছরের পুরনো নীতি। তাতে বলা হয়েছে, আমেরিকার মাটিতে জন্মগ্রহণ করলেই দেশটির নাগরিকত্ব পাবে। এই ব্যবস্থা পরিবতের্নর জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, তার আইন বিশেষজ্ঞরা তাকে নিশ্চিত করেছেন যে, তেমন কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন নেই। নিবার্হী আদেশের মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব। প্রেসিডেন্ট তার একক ক্ষমতাবলে এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন কিনা? জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের কারণে অবৈধ অভিবাসীরা বিশেষ কোনো সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে কিনা? এখন যুক্তরাষ্ট্রে এসব প্রশ্নে উগ্র বিতকের্র সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রে ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা আছে। এই সংশোধনীর প্রথম বাক্যতেই বলা আছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সব ব্যক্তিই দেশটির নাগরিক হবে। সে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেখানেই বসবাস করুক, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়।’ অভিবাসন নিয়ে কট্টরপন্থীরা বলছেন, এই ব্যবস্থা অবৈধ অভিবাসনের জন্য ‘চুম্বক’ হিসেবে কাজ করে থাকে এবং সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য গভর্বতী নারীদের সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র আসতে উৎসাহিত করছে। ট্রাম্প বলেছেন, জন্ম নেয়া শিশুটি ৮৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করবে, এটা বন্ধ হতে হবে। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৬০ ভাগ আমেরিকান জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুযোগ রাখার পক্ষে রয়েছে। আর এই সুযোগ বাতিলের পক্ষে আছে ৩৭ শতাংশ আমেরিকান। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৮৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে চতুদর্শ সংশোধনী আনা হয়েছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৮৬৫ সালে। সেই সংশোধনীর মাধ্যমে দাসত্বপ্রথা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এরপর চতুদর্শ সংশোধনীর মাধ্যমে আমেরিকায় জন্ম নেয়া সাবেক ক্রীতদাসদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে একটি ঘটনায় সুপ্রিম কোটর্ সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, আফ্রিকান আমেরিকানরা কখনো আমেরিকার নাগরিক হতে পারে না। কিন্তু এরপর চতুদর্শ সংশোধনী তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে। ১৮৯৮ সালে সুপ্রিম কোটর্ একটি মামলায় নিশ্চিত করে যে, অভিবাসীদের শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে। চীনা বাবা-মা আমেরিকায় সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। ওয়াং কিম আকর্ নামের সেই শিশু ২৪ বছর বয়সে চীনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি ফেরার সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। তখন ওয়াং যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি আমেরিকায় জন্ম নিয়েছেন। চতুদর্শ সংশোধনীতে যে অধিকার আছে, সেখানে তার বাবা-মায়ের অভিবাসন অবস্থা কোনো প্রভাব ফেলে না। এই যুক্তি দিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন। ইমিগ্রেশন হিস্ট্রি রিসাচর্ সেন্টারের পরিচালক ইরিকা লী লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়াং কিম আকের্র মধ্যে তখন যে আইনি লড়াই হয়েছে, সেখানে এসেছিল যে আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী সবাই দেশটির নাগরিক হবে। তখন থেকে আদালত আর কখনো এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। আইন বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগই মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিবার্হী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করতে পারেন না। ভাজিির্নয়া আইন স্কুলের অধ্যাপক এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণ প্রকাশ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কিছু করছেন, যা অনেক মানুষকে আঘাত করবে। তবে শেষপযর্ন্ত বিষয়টি আদালতে যাবে এবং আদালতই সিদ্ধান্ত দেবে বলে তিনি মনে করেন। বিবিসি অবলম্বনে