শরিয়া আদালত

মালয়েশিয়ায় নারী বিচারক বাড়ছে

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শরিয়া আইনের বই ধারা পরিবেষ্টিত আদালতের লাইব্রেরিতে অবসরের বেশিরভাগ সময় কাটান ভদ্র এবং মৃদুভাষী নেনি শুসাইদা বিনতে শামসুদ্দিন। সেখানে বসেই তিনি তার কাজের গুরুত্ব সম্পকের্ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘যখন আমি আদালতে বসি তখন আমি একজন নারী বা একজন পুরুষ থাকি না, তখন আমি একজন বিচারক হয়ে যাই।’ কোনো কোনো দিন তিনি ইসলামিক আইন ভঙ্গ করার জন্য অপরাধীকে বেত্রাঘাত করার দÐ দিয়ে থাকেন আবার কোনো কোনো দিন একজন পুরুষকে দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য অনুমতি দেন। গত বছর মুসলিম-অধ্যুষিত মালয়েশিয়ার শরিয়াভিত্তিক উচ্চ আদালতের বিচার নিযুক্ত হয়ে তিনি ইতিহাস গড়েছেন। এখন পযর্ন্ত মালয়েশিয়ার শরিয়া উচ্চ আদালতে তিনি এবং আরেকজন নারী বিচারক রয়েছেন। ৪২ বছর বয়সী তিন সন্তানের জননী শুসাইদা বিনতে শামসুদ্দিন ইসলামিক আইন ভঙ্গের দায়ে অপরাধীকে কঠিন শাস্তি দিতে দ্বিধা বোধ করেন না। তিনি বলেন, ‘কোনো পক্ষপাতিত্ব না করেই সুবিচার নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব।’ মালয়েশিয়ায় বতর্মানে অনেক নারীই ইসলামিক বিচারব্যবস্থায় বিচারক এবং আইনজীবী হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় দুই ধরনের আদালত ব্যবস্থা রয়েছে। ইসলামিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আদালতগুলো মুসলিম পারিবারিক এবং ছোটখাটো অপরাধগুলোর বিচার করে থাকে যেমনÑ মদ্যপান, জুয়াখেলা, বহুবিবাহ ইত্যাদি, অন্যদিকে ধমির্নরপেক্ষ আদালতগুলোয় বিভিন্ন ফৌজদারি এবং দেওয়ানি অপরাধের বিচার হয়ে থাকে। মালয়েশিয়ায় ২০১০ সাল থেকে শরিয়া আদালতে নারী বিচারক নিয়োগ দেয়া শুরু হয় এবং বতর্মানে দেশটির ১৬০টি শরিয়া আদালতে অন্তত ২৭ জন নারী বিচারক কমর্রত আছেন। এদিকে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং সুদানে শরিয়া আদালত বিদ্যমান রয়েছে এবং এই সব আদালতে যদিও ইসলামিক আইন দ্বারা বিচার পরিচালনা করা হয় কিন্তু এগুলোতে নারী বিচারকদের নিয়োগ দেয়ার নজির নেই। ২০০৬ সালে মালয়েশিয়ার ধমীর্য় কতৃর্পক্ষ একটি ফতোয়া জারি করে নারীদের জন্য শরিয়া আদালতের বিচারক নিয়োগ হওয়ার বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা দূর করে। মালয়েশিয়ায় একজন মুসলিম পুরুষ ইচ্ছা করলে চারজন নারীকে বিবাহ করতে পারেন কিন্তু তাদের এ জন্য শরিয়া আদালতের অনুমতি গ্রহণ করতে হয়। বিনতে শামসুদ্দিন বলেন, তিনি এ ধরনের মামলা বা আবেদন শুনানির সময় আবেদনকারী ব্যক্তির আয় এবং সক্ষমতা বিবেচনা করেন, যাতে তিনি একের অধিক স্ত্রীর সব চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হন। এমনকি আগের স্ত্রীর অনুমতি রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও দেখা হয়। বিনতে শামসুদ্দিন বলেন, ‘যদি পূবের্র স্ত্রীর সম্মতি থাকে এবং স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে উপযুক্ত হন তখন আমি অনুমতি দিয়ে থাকি।’ বিনতে শামসুদ্দিন আশাবাদী যে, যেভাবে শরিয়া আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে শরিয়া আইনের ক্ষেত্রে পুরুষশাসিত দিকের পরিবতর্ন ঘটবে এবং একই সঙ্গে এ ধারণারও পরিবতর্ন ঘটবে যে, শরিয়া আদালত নারীদের জন্য উপযুক্ত ন্যায়-বিচার প্রদান করে না। তিনি বলেন, ‘জনসাধারণের মধ্যে এই ধারণা রয়েছে যে, পুরুষ বিচারকরা নারীদের প্রতি সুবিচার করেন না। আমি আশা করি শরিয়া আদালতে নারী বিচারক নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে এ ধারণার অবসান ঘটবে।’ বিনতে শামসুদ্দিন স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নের সময় আইনজীবী হিসেবে আইন চচার্ করেছিলেন। বতর্মানে তিনি মালয়েশিয়ার শরিয়া বিচারব্যবস্থায় একটি সফল পেশা গড়ে তুলতে তরুণী নারীদের উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। গত পঁাচ বছরে মালয়েশিয়া শরিয়া আইনজীবী অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মধ্যে নারী আইনজীবীর সংখ্যা ৪০ শতাংশ হারে বেড়েছে। সাদিহা বিনতে দিন নামের নারী আইনজীবী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি শরিয়া আদালতে নারী বিচারক নিয়োগ দেয়ার ফলে ভুক্তভোগী নারীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি ন্যায়-বিচার পাবেন।’ সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ নাইম যিনি বতর্মানে শরিয়া আদালতে বিচারকাযর্ পরিচালনা করেন, তিনি বলেনÑ তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে আইন পড়ান এবং সেখানে নারী শিক্ষাথীর্রা পুরুষ শিক্ষাথীের্দর তুলনায় ভালো ফলাফল করছে। আল জাজিরা অবলম্বনে