ঝিনুক চোর ঠেকাতে অভিনব পন্থা

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম আইন ও বিচার ডেস্ক
উচ্চমানের ঝিনুক বেশ দামি। বিশেষ করে উৎসবের মৌসুমে এর দাম আরো বেড়ে যায়। ফলে ঝিনুক চোরেরাও এ সময় বেশ করিৎকর্মা হয়ে ওঠে। তাদের ঠেকাতে ফরাসি এক ঝিনুক চাষি মজার এক পন্থা বেছে নিয়েছেন। ইউরোপে ঝিনুকের সবচেয়ে বড় উৎপাদক ফ্রান্স। ২০১৯ সালে দেশটি প্রায় ৮৬ হাজার টন ঝিনুক উৎপাদন করেছে- যার দাম আনুমানিক ৩৯৮ মিলিয়ন ইউরো বা ৩৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিশেষ করে বছরের শেষের দিকে ঐতিহ্যবাহী নানা খাবারে ঝিনুক খুব আকর্ষণীয় উপাদান হয়ে ওঠে। ফলে এ সময়ে ঝিনুকের চাহিদাও বেড়ে চলে। যেমন, চেজ ফ্রাসোয়াঁ রেস্তোরাঁয় ছয়টি উচ্চমানের ঝিনুকের একটি ডিশ বিক্রি হয় ২৪ ইউরো বা দুই হাজার ৩০০ টাকায়। এত চাহিদা থাকায় দামি এ পণ্য চুরিতে চোরেরাও ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ফরাসি ঝিনুক চাষি ক্রিস্টোফ গিনোর খামার থেকে কয়েক বছর আগে তিন টনের মতো ঝিনুক চুরি হয়। বাজারে এর দাম ২০ হাজার ইউরো বা প্রায় দুই লাখ টাকা। ফ্রান্সের সঙ্গে স্পেনের সীমান্তবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে গিনোর খামার। জলে খাঁচার মধ্যে ঝিনুক রাখা থাকে, সেই খাঁচাগুলো যাতে ঢেউয়ে ভেসে না যায়, সেজন্য একটি লোহার ফ্রেমের সঙ্গে তার দিয়ে বাঁধা থাকে। খামার পাহারায় জনবল নিয়োগের পাশাপাশি প্রযুক্তির আশ্রয়ও নেন খামারিরা। কেউ কেউ ড্রোন, এমনকি ঝিনুকের আদলে তৈরি ট্রেসারও ব্যবহার করেন। কিন্তু তবুও ২৪ ঘণ্টা এত বড় খামার পাহারা দেয়া কোনো খামারির পক্ষেই সম্ভব হয় না। চোররাও নতুন নতুন ফন্দি বের করে, জলে থাকা খাঁচা থেকে ঝিনুক তুলে নিয়ে যায়। মানবজাতির ইতিহাসে বিশ্বজুড়েই ঝিনুকের খোলস মুদ্রা হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। শুধু খাবার বা অন্য দ্রব্য নয়, সেবার বিনিময়েও দেয়া হতো ঝিনুক। এই মুদ্রার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দেখা যেত আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায়। এই চুরি ঠেকাতে ক্রিস্টোফ গিনো মজার এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। নিজের খামারের খাঁচা থেকে কিছু ঝিনুক বের করে সেগুলোর খোলের মধ্যে 'আপনার ওজনের সমান ঝিনুক জিতেছেন' লেখা ছোট ছোট বার্তা পুরে আবার আঠা দিয়ে খোল জোড়া দিয়ে অন্য ঝিনুকের মধ্যে রেখে দিয়েছেন তিনি। এর ফলে চুরি করা ঝিনুক কিনে কেউ যখন এই চিঠি নিয়ে পুরস্কারের লোভে খামারে হাজির হচ্ছেন, তখনই পুলিশে খবর দেয়া হচ্ছে। কার কাছ থেকে এই ঝিনুক কেনা হয়েছে, তা খুঁজে বের করাও তখন পুলিশের জন্য বেশ সহজ হয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে এই পদ্ধতি কাজে লাগানোর পর তার খামারে আর কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন গিনো। আশপাশের অন্য খামারিরাও এখন এই পন্থা অবলম্বন করতে শুরু করেছেন। গিনোর খামারে এখনো পুরস্কার দাবি করে কেউ আসেননি। তবে আশপাশের বেশ কয়েকটি খামারে এমন ঘটনা ঘটেছে। কিছু ক্ষেত্রে তা পুলিশকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। এতে যে কাজ হচ্ছে, পরিসংখ্যানই হয়তো তার প্রমাণ। ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২০১৭ সালে ১৯টি চুরির ঘটনা ঘটলেও ২০২০ সালে একটিও চুরির খবর পাওয়া যায়নি।