সমালোচনার মুখে প্রবাসী বাংলাদেশির কাছে ক্ষমা চাইলেন মার্কিন বিচারক

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
উঠোনের ঘাস পরিষ্কার না করায় ক্যানসারে আক্রান্ত ৭২ বছর বয়সি এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে ভর্ৎসনা করার পর তীব্র সমালোচনার মুখে ক্ষমা চাইলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক। মিশিগানের জেলা জজ আলেঙ্জি জি ক্রোট এক বিবৃতিতে প্রবাসী বাংলাদেশি বোরহান চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, 'আমি ভুল করেছি। আমি নির্দয় আচরণ করেছি। যা করেছি তার জন্য আমি লজ্জিত, দুঃখিত এবং বিব্রত।' মিশিগানের হ্যামট্রাম্যাকের বাসিন্দা বোরহান চৌধুরীর বাড়ির উঠোনের ঘাস বড় হয়ে জঙ্গলের চেহারা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন প্রতিবেশীরা। এ বিষয়ে ভার্চুয়াল শুনানিতে বিচারক আলেঙ্সি জি ক্রোট বলেছিলেন, আগাছা পরিষ্কার করতে না পারার জন্য বোরহান চৌধুরীর লজ্জিত হওয়া উচিত। বোরহান চৌধুরী তার শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে ঘাস কাটতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিচারক তার কথা আমলে না নিয়ে বলেন, 'জেল দেওয়ার সুযোগ থাকলে আমি আপনাকে তাই দিতাম।' গত ১০ জানুয়ারি ভার্চুয়াল আদালতে বিচারকের ওই মন্তব্য নিয়ে ১২ জানুয়ারি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈ চৈ শুরু হয়। ছয় দিনের মধ্যে সোয়া দুই লাখের বেশি আমেরিকান ওই বিচারকের অপসারণ দাবিতে একটি পিটিশনে সই করেন। এই প্রেক্ষাপটে গত ১৮ জানুয়ারি বিচারক ক্রোট তার বিবৃতিতে বলেন, আমি তার (বোরহান চৌধুরী) কাছে ক্ষমা চাইছি। তার সঙ্গে যে ধরনের সৌজন্য দেখানো উচিত ছিল তা করতে না পারায় গোটা কমিউনিটির কাছে ক্ষমা চাইছি। আশা করছি, বিচার বিভাগীয় সবাই বিষয়টি উপলব্ধিতে সক্ষম হবেন।' ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছেন এই বিচারক। প্রসঙ্গত, ডেট্রয়েট সিটি থেকে ৬ মাইল দূর হ্যামট্রমিক সিটির বাড়িতে স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকেন চৌধুরী। ২০১৯ সালে বোরহান চৌধুরীর ক্যানসার ধরা পড়লে পুরো পরিবারই সংকটে পড়ে। ক্যানসারের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপেও ভুগছেন তিনি। গত বছরের ২ অগাস্ট প্রতিবেশীরা যখন উঠোনের আগাছা নিয়ে তার বিরুদ্ধে হ্যামট্রমিক সিটি প্রশাসনে অভিযোগ করলেন, ছেলে শিব্বির চৌধুরী (৩৩) তখন তিন মাসের জন্য বাংলাদেশে ছিলেন। সিটি প্রশাসন বোরহান চৌধুরীকে ১০০ ডলার জরিমানা করলে তিনি তা দিতে চাননি। ক্যানসারের চিকিৎসা এবং ছেলে বাড়িতে না থাকার কথা তিনি জানিয়েছিলেন। এরপর বিষয়টি আদালতে গড়ালে ভার্চুয়াল শুনানিতে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে নিজের অসহায়ত্ব ও অপারগতার কথা বিচারককে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন বোরহান চৌধুরী। কিন্তু বিচারক তা আমলে না নিয়ে ভর্ৎসনা করেন।