শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর ফাঁকি দেওয়া জার্মানদের যেভাবে ধরিয়ে দেয় একটি চক্র

গোপন উৎস থেকে কর ফাঁকি দেওয়াদের তথ্যসংবলিত সিডি কেনা নিয়ে সে সময় জার্মানিতে বিতর্কও হয়েছিল বিস্তর। এভাবে কেনা কতটা নৈতিক সেই প্রশ্নও উঠেছিল। তবে, আখের ইউরোপের দেশটির লাভই হয়েছিল। সে সময় কর ফাঁকি দেওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ফুটবলার এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোয়েনেস।
আইন ও বিচার ডেস্ক
  ০১ মার্চ ২০২২, ০০:০০

চলতি শতকের শুরুর দিকের কথা। সুইস ব্যাংকে গোপনে টাকা জমিয়ে রেখে কর ফাঁকি দেওয়া হাজার হাজার জার্মানের তথ্য ফাঁস করে একটি চক্র। সিডিতে থাকা সেসব তথ্য কিনে নেয় জার্মানির কর কর্তৃপক্ষ।

ফলে পরবর্তী কয়েক বছরে বেশ কয়েক হাজার জার্মান ধরা পড়েন কর ফাঁকির দায়ে। তাদের অনেকেই স্বেচ্ছায় করফাঁকি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। সুবিধা হচ্ছে, এভাবে আগেভাগে দায় স্বীকার করলে শাস্তি অনেক কম হয়। তবে, সেজন্য যত টাকা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে সেই টাকা ছয় শতাংশ সুদসহ ফেরত দিতে হয়। সেই সুবিধাই নিয়েছেন অনেকে।

আর তাতে মাত্র কয়েক বছরে জার্মানি সাতশ কোটি ইউরোর মতো অর্থ কর বাবদ পেয়েছে। আর সিডি কিনতে খরচ হয়েছিল বিশ লাখ ইউরোর মতো।

গোপন উৎস থেকে কর ফাঁকি দেওয়াদের তথ্যসংবলিত সিডি কেনা নিয়ে সে সময় জার্মানিতে বিতর্কও হয়েছিল বিস্তর। এভাবে কেনা কতটা নৈতিক সেই প্রশ্নও উঠেছিল। তবে, আখের ইউরোপের দেশটির লাভই হয়েছিল।

সে সময় কর ফাঁকি দেওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ফুটবলার এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোয়েনেস।

কোটি কোটি ইউরো কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কর যাতে দিতে না হয়, সেজন্য নিজের উপার্জিত টাকা সুইস ব্যাংকে লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। জার্মানিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী এই ক্রীড়াব্যক্তিত্বের এমন খবর অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। অবশ্য জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব হ্যোয়েনসকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারেনি। বরং কর ফাঁকি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন তিনি। আর তার শাস্তি হয় সাড়ে তিন বছর কারাদন্ড। হ্যোয়েনসকে অবশ্য ততদিন সাজা খাটতে হয়নি। শাস্তি মেনে নেওয়ায় কমদিন সাজা খেটে রেহাই পান তিনি। তবে, তার শাস্তি অনেকের জন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে।

ইউরোপের কেন্দ্রের দেশ জার্মানি দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশ সক্রিয়। সেটা কর ফাঁকি বা অন্য যে কোনো দুর্নীতিই হোক না কেন। তাসত্ত্বেও দেশটিতে দুর্নীতি যে একেবারে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) পরিচালিত 'দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২১' অনুযায়ী সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে জার্মানি। এটা থেকে পরিষ্কার যে দুর্নীতি দমনে আরো উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে দেশটির। জার্মানির উপরে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর ছাড়া বাকি সবই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।

আশার কথা হচ্ছে, এক্ষেত্রে টিআইয়ের সুপারিশ অনুযায়ী দুর্নীতিরোধে বিভিন্ন আইন মজবুত করছে জার্মানি। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে যাদের দুর্নীতির রেকর্ড অনেক বেশি, তারাও কি টিআইয়ের সুপারিশ মানবে?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে