নিবার্চনসংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধ

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মারুফ আল্লাম
গণতন্ত্র সুসংহত করতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চন আয়োজন অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রশাসনের সব পযাের্য় নিবাির্চত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কাযর্কর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। সাংবিধানিক সেই আকাক্সক্ষা পূরণের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। প্রতিটি নিবার্চনে প্রাথীর্ ও ভোটারদের জন্য নিবার্চন কমিশন কিছু আচরণবিধি তৈরি করে দেয়; যার লঙ্ঘন হলে সংশ্লিষ্ট প্রাথীর্ বা ভোটারকে সাজা দিতে পারে কমিশন। নিবার্চন কমিশনের এ বিধিমালার পাশাপাশি নিবার্চনসংক্রান্ত বেশকিছু ফৌজদারি অপরাধের বিধান বলা আছে আমাদের দÐবিধির ৯ক অধ্যায়ে। নিবার্চন সে যে রকমেরই হোক না কেন, দÐবিধির এ বিধানগুলো প্রতিটিতেই কাযর্কর হবে। প্রাথীর্ কিংবা ভোটার প্রত্যেকের উচিত, এ অপরাধগুলো সম্পকের্ সম্যক জ্ঞান রাখা। ভোটাধিকার দÐবিধির ১৭১ক ধারায় ভোটাধিকার বলতে বোঝানো হয়েছে একজন ব্যক্তির নিবার্চনে প্রাথীর্ হওয়া কিংবা না হওয়ার অধিকার; প্রাথির্তা প্রত্যাহারের অধিকার এবং সবোর্পরি ভোট দেয়া কিংবা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকার অধিকার। সুতরাং, ভোট দেয়া থেকে যেমন কাউকে বিরত রাখার চেষ্টা করা যাবে না, একইভাবে ভোট না দিতে চাইলেও কাউকে বাধা দেয়া যাবে না। নিবার্চনী উৎকোচ উপরোল্লিখিত ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রাথীর্ কিংবা ভোটার থাকবেন স্বাধীন। ভোটাধিকার যখন কোনো ব্যক্তি অন্যের প্ররোচনায় পড়ে তার কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে প্রয়োগ করতে যান, তখন তা আইনের চোখে অপরাধ এবং উৎকোচ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়েই আইনের চোখে সমানভাবে দোষী। দÐবিধির ১৭১খ ধারায় উৎকোচের এ বিধান বলা আছে। সুতরাং, কারও কাছ থেকে উৎকোচ হিসেবে অথর্ নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি প্রাথীর্ হন কিংবা প্রাথির্তা প্রত্যাহার করেন, তাও আইনের চোখে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। একইভাবে উৎকোচের অথর্ নিয়ে ভোট প্রদান করলে কিংবা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকলেও তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে কোনো প্রাথীর্ যখন নিবার্চনী ইশতেহার কিংবা নিবার্চনী প্রতিশ্রæতি প্রদান করে জনগণকে নিজের পক্ষে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করেন, তখন তাকে ‘উৎকোচ’ বলা যাবে না। উৎকোচ প্রদান কিংবা গ্রহণের এ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার জন্য উৎকোচ যে সরাসরি হাতে হাতে আদান-প্রদান হয়ে যেতে হবে, তা নয়। উৎকোচ প্রদান কিংবা গ্রহণের লোভ দেখালে, উৎকোচ দিতে বা নিতে সম্মত হলে তাও উৎকোচ হিসেবে গণ্য হবে এবং অপরাধীদের একই সাজা পেতে হবে। ১৭১ঙ ধারা অনুসারে, এভাবে উৎকোচ দেয়া বা নেয়ার সাজা এক বছর পযর্ন্ত কারাদÐ বা অথর্দÐ অথবা দুটোই। তবে উৎকোচ হিসেবে খাদ্য, পানীয়, বিনোদনমূলক ব্যবস্থা করা হলে তার সাজা কেবলই অথর্দÐ। নিবার্চনে অনুচিত প্রভাব প্রাথীর্ কিংবা ভোটারের অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করে বা প্রভাব খাটায়, তখন তাকে ‘অনুচিত প্রভাব’ হিসেবে অভিহিত করা হবে। দÐবিধির ১৭১গ ধারা অনুসারে, প্রাথীর্, ভোটার কিংবা প্রাথীর্-ভোটারের স্বাথর্সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির (যেমন প্রাথীর্ কিংবা ভোটারের নাবালক সন্তান) বা সম্পত্তির যদি কেউ অবৈধ ক্ষতিসাধন করার হুমকি দেন তাহলে তাকে ‘অনুচিত প্রভাব’ বলা হবে। সুতরাং, ভোট দিতে বা ভোট না দিতে বাধ্য করার জন্য কেউ যদি কোনো ভোটারের সন্তানকে অপহরণ কিংবা মা-বোনকে যৌন হয়রানির হুমকি দেন কিংবা তার ফসলের ক্ষতিসাধন করতে চান, তখন এ ধরনের কাজ অনুচিত প্রভাবের আওতায় পড়বে। আবার কেউ যদি এই ভয় দেখান যে তার কথামতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করা না হলে প্রাথীর্, ভোটার কিংবা প্রাথীর্-ভোটারের স্বাথর্সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি (যেমন প্রাথীর্ কিংবা ভোটারের নাবালক সন্তান) বা সম্পত্তি স্বগীর্য় অসন্তুষ্টি কিংবা আধ্যাত্মিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ভীতি প্রদশর্নকেও ‘অনুচিত প্রভাব’ বলা হবে। সুতরাং, অমুককে ভোট দিলে বা না দিলে খোদার অভিশাপ পড়বে এ রকমের কথা রটিয়ে দেয়াও ‘অনুচিত প্রভাব’ হিসেবে বিবেচিত হবে। ১৭১চ ধারা অনুসারে, এ ধরনের অনুচিত প্রভাবের জন্য এক বছরের কারাদÐ কিংবা আথির্ক দÐ বা উভয়বিধ সাজা পেতে হতে পারে। ভুয়া বা জাল ভোট প্রদান করা জীবিত, মৃত কিংবা এমন কোনো ব্যক্তি যে এরই মধ্যে ভোট দিয়ে ফেলেছে তাদের নামে যদি অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট প্রদান করেন কিংবা একই ব্যক্তি একাধিকবার ভোট প্রদান করেন, তবে সেই কাজ একটি ফৌজদারি অপরাধ এবং অনুচিত প্রভাবের মতোই শাস্তি এ ক্ষেত্রে অপরাধীকে পেতে হবে। ভুয়া বা জাল ভোট প্রদানে কাউকে নিয়োগ কিংবা প্ররোচিত করলে অথবা এ ধরনের অপরাধ করতে উদ্যত হলেও একই সাজা পেতে হবে। প্রাথীর্ সম্পকের্ মিথ্যা তথ্য দেয়া ১৭১ছ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি নিবার্চনে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী কোনো প্রাথীর্র ব্যক্তিগত চরিত্র বা আচরণ সম্পকের্ নিজে যা বিশ্বাস করে না, এ রকম কোনো তথ্য ভোটারদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে প্রদান করলে অথর্দÐ দÐিত হতে পারেন। নিবার্চনী ব্যয়সংক্রান্ত অপরাধ এ ছাড়াও ১৭১জ ধারা অনুসারে কোনো প্রাথীর্র পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে নিবার্চনী ব্যয় হিসেবে ওই প্রাথীর্র অনুমতি ছাড়া কোনো খরচ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সুতরাং, প্রাথীর্র পক্ষ থেকে অন্য কাউকে যদি প্রচারণা চালাতে গিয়ে কোনো নিবার্চনী ব্যয় করতে হয়, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের খরচের আগে তাকে সংশ্লিষ্ট প্রাথীর্ থেকে ক্ষমতা বা অনুমোদন নিয়ে নিতে হবে। আবার নিবার্চনী ব্যয় সম্পকের্ কোনো যথাথর্ কতৃর্পক্ষ যদি প্রাথীর্র কাছ থেকে হিসাব জানতে চায়, তখন সেই হিসাব প্রদশর্ন করতে ব্যথর্ হলেও আথির্ক জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। ১৭১ঝ ধারায় এ বিধান বলা আছে।