শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নামিবিয়ায় বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন যেভাবে প্রাণিজগতের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে ভূমিকা রাখছে

পর্যটকদের আগমনের ফলে আনাবেব যথেষ্ট আয় করছে। সেই অর্থ কাজে লাগিয়ে বিদু্যৎ ও পানির সংযোগ এবং একটি কিন্ডারগার্টেন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। স্কেলেটন কোস্টের এক রেঞ্জার এমসি ভারওয়েকে জানালেন যে, এক হাতি শাবক নিখোঁজ। আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলো। টানা খরার কারণে মায়ের বুকে আর দুধ ছিল না বলে শাবকও অভুক্ত ছিল। সেটিকে কিছুতেই বাঁচানো গেল না। বৈজ্ঞানিক সমন্বয়ক হিসেবে এমসি ভারওয়ে বলেন, 'এটাই এখানকার জীবনের কঠিন বাস্তব। সব মরে যাচ্ছে, শুধু তুমি বেঁচে থাকছ। সবে গতকাল শাবকটির জন্ম হয়েছিল। সত্যি নির্মম বাস্তব, শাবকটি বাঁচার সুযোগই পেল না।... আমি সব প্রাণী ভালোবাসি এবং তাদের জন্য সাধ্যমতো সব করছি। কিন্তু কোনো এক সময়ে হাল ছাড়তে হয়। এখানে মৃতু্য জীবনেরই অংশ
ম আইন ও বিচার ডেস্ক
  ১৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০

জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব মানুষ ও বন্যপ্রাণীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। নামিবিয়ার কিছু মানুষ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সংঘাতের বদলে প্রাণিজগতের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নতুন ছন্দ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

সিংহের হামলার কারণে নামিবিয়ার পশু পালনকারী ইমানুয়েল গুরিরাব তার প্রায় অর্ধেক পশু হারিয়েছেন। অর্থাৎ, তার সম্পদের একটা বড় অংশ হাতছাড়া হয়ে গেছে। বন্যপ্রাণীর হামলা ঘটলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেয় বটে, কিন্তু সেই অংক বাজারদরের প্রায় অর্ধেকের মতো। ইমানুয়েল বলেন, 'মরুভূমির বন্যপ্রাণী, সিংহ ও হাতি আমাদের অনেক ক্ষতি করে। এখানে বন্যপ্রাণী থাকলে আমাদের কোনো উপকার হয় না। গবাদি পশুই আমাদের উপার্জনের উৎস, এভাবেই আমাদের আয় হয়।'

গোয়ালঘরের কাছে গুরিরাব হায়নার তাজা পায়ের ছাপ আবিষ্কার করেন। বাদামি হায়না ছাগল শিকার করে না। আরো হিংস্র প্রজাতির ডোরাকাটা হায়না হয়তো সেখানে এসেছিল। ইমানুয়েল গুরিরাব মনে করেন, 'সরকার হায়না না সামলালে আমাদের হাতে অন্য কোনো উপায় থাকবে না। তখন গুলি করে হায়না মারার পরিকল্পনা রয়েছে।'

পশু পালনকারী হিসেবে ফিনেয়াস কাসাওনাও হায়না ও সিংহ মেরেছেন। আজ তিনি আনাবেব অভয়ারণ্যের সদস্য হিসেবে সেই সব প্রাণী সংরক্ষণ করছেন। নব্বইয়ের দশক থেকে কাসাওনার মতো চাষি প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলে নিজস্ব এই প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা গড়ে তোলেন। আজ নামিবিয়ার প্রায় এক পঞ্চমাংশ সেই এলাকার আওতায় এসে গেছে।

আগের রাতে প্রতিবেশীর সবজি খেতে হাতির তান্ডবের ঘটনা ঘটেছে। আগামী রাতগুলিতে কাসাওনা সেখানে পাহারা দেবেন। তবে সমস্যা সত্ত্বেও চাষিরা প্রাণী সুরক্ষার পক্ষে। ফিনেয়াস কাসাওনা এমনই একজন গবাদি পশু পালনকারী। তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি বদলে গেছে। আগে কোনো গবাদি পশু হায়নার শিকার হলে সেটির পিছু নিয়ে মেরে ফেলা হতো। আজ আমরা ভিন্ন এক পৃথিবীতে বাস করি। এখন বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা এখন প্রাণীর দেখাশোনা করলে বরং উপার্জন করতে পারি। প্রাণীর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলার চেষ্টা করলে আখেরে লাভ হয়।'

চাষিরা সীমিত আকারে গবাদি পশু পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেখানে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থান সম্ভব। অ্যান্টিলোপ হরিণের সংখ্যা বাড়ার পর থেকে বন্যপ্রাণীর হামলাও কমে গেছে। পর্যটকদের আগমনের ফলে আনাবেব যথেষ্ট আয় করছে। সেই অর্থ কাজে লাগিয়ে বিদু্যৎ ও পানির সংযোগ এবং একটি কিন্ডারগার্টেন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

স্কেলেটন কোস্টের এক রেঞ্জার এমসি ভারওয়েকে জানালেন যে, এক হাতি শাবক নিখোঁজ। আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলো। টানা খরার কারণে মায়ের বুকে আর দুধ ছিল না বলে শাবকও অভুক্ত ছিল। সেটিকে কিছুতেই বাঁচানো গেল না। বৈজ্ঞানিক সমন্বয়ক হিসেবে এমসি ভারওয়ে বলেন, 'এটাই এখানকার জীবনের কঠিন বাস্তব। সব মরে যাচ্ছে, শুধু তুমি বেঁচে থাকছ। সবে গতকাল শাবকটির জন্ম হয়েছিল। সত্যি নির্মম বাস্তব, শাবকটি বাঁচার সুযোগই পেল না।... আমি সব প্রাণী ভালোবাসি এবং তাদের জন্য সাধ্যমতো সব করছি। কিন্তু কোনো এক সময়ে হাল ছাড়তে হয়। এখানে মৃতু্য জীবনেরই অংশ।

দীর্ঘ শুষ্ক মৌসুম বেঁচে থাকার সংগ্রাম আরও কঠিন করে তুলছে। ফলে বাঁচার তাগিদে হায়না ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীকে নতুন জায়গার সন্ধান করতে হচ্ছে। ভারওয়ের মতো প্রকৃতি সংরক্ষণকারী এবং স্থানীয় সংরক্ষণের উদ্যোগের কল্যাণে মানুষ ও প্রাণিজগৎ নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে মরুভূমির কঠিন পরিবেশেও টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে