দেনমোহর নারীর একচ্ছত্র অধিকার

স্ত্রী যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতিতে স্বামীর কাছে মোহরানা চাইতে পারে এবং স্বামী তা পরিশোধ করতে বাধ্য। তালাকের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে অনেকের মধ্যে এ ধারণা রয়েছে, শুধু স্বামী তালাক দিলেই দেনমোহর দিতে হবে। তবে এটি সম্পূণর্ ভুল ধারণা। তালাকের সঙ্গে দেনমোহরের কোনো সম্পকর্ নেই। দেনমোহর বিবাহের শতর্, তালাকের শতর্ নয়। বিবাহ বিচ্ছেদ হোক বা না হোক, দেনমোহর স্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকার এবং বিবাহ হওয়া মাত্র এটি পরিশোধ করা স্বামীর দায়িত্ব হিসেবে বতার্য়। বিবাহ বিচ্ছেদ স্বামী বা স্ত্রী যার মাধ্যমেই হোক না কেন স্বামীকে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। মোজাহেদুল ইসলাম বনাম রওশন আরা মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেনমোহর কখনোই মাফ হয় না। এমনকি তালাকের পরবতীর্ সময়ে এবং দেনমোহর পরিশোধের আগে যদি স্বামীর মৃত্যুও হয় তবে স্বামীর রেখে যাওয়া যে কোনো সম্পত্তি থেকে স্বামীর স্বজনদের দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে...

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মাহমুদা আমির ইভা
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, যার মাধ্যমে একটি পরিবারের সূচনা হয়। আইনে একে দেওয়ানি চুক্তি বলা হয়। আর এই চুক্তির অথর্মূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় দেনমোহর বা মোহরানাকে। দেনমোহর হলো বিয়ে নামক দেওয়ানি চুক্তি সম্পাদনের অন্যতম পূবর্শতর্। দেনমোহর প্রকৃতপক্ষে স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ। দাম্পত্যজীবন শুরু করার সময়, স্বামীর মৃত্যুর পর বা তালাকের সময় বা স্ত্রী যখনই চাইবে, স্বামীকে এই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। মাহমুদা খাতুন বনাম আবু সাইদ মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটর্ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, সহবাসের আগে বা পরে স্ত্রী স্বামীর কাছে তলবী মোহরানার দাবি করতে পারে এবং স্বামী তা পরিশোধ না করলে স্ত্রী তার স্বামীর অধিকারে অথার্ৎ সহবাসে যেতে অস্বীকার করতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেনমোহর কোনো উপহার নয়। বাংলাদেশে এমন অনেক মুসলিম পরিবার রয়েছে যেখানে বিয়ের সময় উপহার দেয়ার নামে দেনমোহর পরিশোধ করা হয়। তবে মনে রাখতে হবে, বিয়ের সময় একজন মেয়েকে তার স্বামী বা স্বামীর পরিবার উপহার হিসেবে যা দেয় তা দেনমোহর নয়। স্বামী তার স্ত্রীকে স্বণর্, পোশাক, জমিজমা যা কিছুই দিন না কেন, তা যদি সুনিদির্ষ্টভাবে দেনমোহর হিসেবে দেন তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে, অন্যথায় সে সব বিয়ের উপহার সামগ্রী হিসেবে গণ্য হবে। স্ত্রী যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতিতে স্বামীর কাছে মোহরানা চাইতে পারে এবং স্বামী তা পরিশোধ করতে বাধ্য। তালাকের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে অনেকের মধ্যে এ ধারণা রয়েছে, শুধু স্বামী তালাক দিলেই দেনমোহর দিতে হবে। তবে এটি সম্পূণর্ ভুল ধারণা। তালাকের সঙ্গে দেনমোহরের কোনো সম্পকর্ নেই। দেনমোহর বিবাহের শতর্, তালাকের শতর্ নয়। বিবাহ বিচ্ছেদ হোক বা না হোক, দেনমোহর স্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকার এবং বিবাহ হওয়া মাত্র এটি পরিশোধ করা স্বামীর দায়িত্ব হিসেবে বতার্য়। বিবাহ বিচ্ছেদ স্বামী বা স্ত্রী যার মাধ্যমেই হোক না কেন স্বামীকে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। মোজাহেদুল ইসলাম বনাম রওশন আরা মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেনমোহর কখনোই মাফ হয় না। এমনকি তালাকের পরবতীর্ সময়ে এবং দেনমোহর পরিশোধের আগে যদি স্বামীর মৃত্যুও হয় তবে স্বামীর রেখে যাওয়া যে কোনো সম্পত্তি থেকে স্বামীর স্বজনদের দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। দেনমোহর একটি আইনগত দায় এবং স্বামী যদি তা পরিশোধ না করে তবে স্ত্রী আদালতে তার নামে মামলা করতে পারে। এ সংক্রান্ত মামলা করা যায় স্থানীয় সহকারী জজ আদালত যা পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর অধীনে পারিবারিক আদালত নামে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত। দেনমোহরসংক্রান্ত মামলায় পারিবারিক আদালত খুবই জনপ্রিয় কারণ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানে নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। সবোর্পরি এখানে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রæততার সঙ্গে নারীর পাওনা দেনমোহর নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০-এর অধীনে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োগের মাধ্যমে আইনগত জটিলতা বা বিভ্রাট ছাড়াই স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়। সবোর্পরি, দেনমোহর হলো স্ত্রীর প্রতি স্বামীর একটি সম্মানসূচক আবশ্যক দেনা। দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার সংরক্ষণ এবং অথৈর্নতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বিধান। দেনমোহরের মাধ্যমে ইসলামে স্ত্রীর অধিকার ও নিরাপত্তা পাকাপোক্ত হয়। তাই প্রত্যেক মেয়েরই উচিত ইসলাম স্বীকৃত এই অধিকার সম্পকের্ সব ভুল ধারণার ঊধ্বের্ গিয়ে সচেতন হওয়া। লেখক : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষাথীর্