শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে নারীরা কি বিচার পান?

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ৩১ মে ২০২২, ০০:০০

২০১৬ সালে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়া তারকা কান্দিল বালুচকে হত্যা করে তার ভাই মুহাম্মদ ওয়াসিম। ২০১৯ সালে ওয়াসিমকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। আইনের ফাঁক গলিয়ে এই ফেব্রম্নয়ারিতে তিনি মুক্তি পেয়ে গেছেন।

ফেসবুকে ছোট স্কার্ট পরে নাচের ভিডিও আপলোড করে আলোচিত হয়েছিলেন কান্দিল বালুচ। এসব কারণে পরিবারের সম্মানহানি হয়েছে ধরে নিয়ে কান্দিলকে মেরে ফেলা আবশ্যক হয়ে পড়েছিল বলে সেই সময় পুলিশকে জানিয়েছিলেন ওয়াসিম।

ওই হত্যাকান্ডের পর সমালোচনার ঝড় উঠলে সরকার অনার কিলিং আইনে কিছু পরিবর্তন এনেছিল। যেমন হতাকান্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবার আত্মীয়স্বজনকে ক্ষমা করতে পারবেন না। এছাড়া আদালতে বাইরে 'বস্নাড মানি' দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা যাবে না ইত্যাদি।

কিন্তু যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর ওয়াসিমের আইনজীবীরা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, ওয়াসিমের ক্ষেত্রে ওই আইনের পরিবর্তনগুলো প্রযোজ্য হবে না। সে কারণে ওয়াসিমের মা তাকে ক্ষমা করে দিলে এই ফেব্রম্নয়ারিতে মুক্তি পান তিনি।

কান্দিল বালুচের এই ঘটনা এটিই প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থা এমন যে, পুরুষরা নারীদের হত্যা ও ধর্ষণ করেও পার পেয়ে যান।

অধিকারকর্মী নায়েব গোহর জান এএফপিকে বলেন, 'পাকিস্তানে নারীর প্রতি অপরাধের শুরু থেকে পুলিশের কাছে মামলা করতে যাওয়া, এরপর বিচার প্রক্রিয়া- সবকিছু এমনভাবে সাজানো যে বিচার অধরাই থেকে যায়।'

আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বিচার ব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের উপস্থিতি এবং পর্যাপ্ত নারী আইনজীবী ও বিচারকের অভাবের কারণে অনার কিলিংয়ের রায়গুলো পালটে যাচ্ছে।

পাকিস্তানের আদালতগুলোতে নারী বিচারকের সংখ্যা পুরুষদের এক পঞ্চমাংশেরও কম।

পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে নারী ভুক্তভোগীরা সাধারণত বিচারের সুযোগ পান না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় মুরুব্বিরা (সব সময় পুরুষ হয়ে থাকে) সালিশ করে থাকেন। তারা সাধারণত নারীর প্রতি সহিংসতাকে 'সম্মান' রক্ষার উপায় হিসেবে দেখে থাকেন।

এই প্রক্রিয়ায় দ্রম্নত বিচার হওয়ায় অনেকে এটি সমর্থন করেন। কিন্তু সেখানে সাধারণত আপিলের সুযোগ থাকে না।

ভুক্তভোগীকে দোষী বানানোর চেষ্টা

খাদিজা সিদ্দিকিকে তার সাবেক ছেলেবন্ধু ২৩ বার ছুরিকাঘাত করে মৃত মনে করে ফেলে রেখে গিয়েছিল। এরপর তার বন্ধুটিকে হত্যা চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু আপিল করে সে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। পরে আবারও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরে ভালো আচরণের যুক্তি দেখিয়ে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সিদ্দিকির ঘটনায় তাকেই দোষী প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে আইনজীবীর বলছেন।

ভুক্তভোগীকে দোষ দেয়ার এমন ঘটনা পাকিস্তানে সাধারণ একটি বিষয়।

আলোচিত হলে কাজ হয়

গত বছর সাবেক রাষ্ট্রদূতের কন্যা নুর মুকাদমকে অপহরণ করে হত্যা করেছিল তার ছেলেবন্ধু। তাকে গ্রেপ্তারের আট মাস পর গত ফেব্রম্নয়ারিতে তাকে মৃতু্যদন্ড দেয়া হয়। সামাজিক মাধ্যমে মুকাদমের বন্ধুদের তৎপরতা এবং মুকাদম ও তার ছেলেবন্ধুর পরিচিতির কারণে এত অল্প সময়ে মামলার রায় এসেছে।

অথচ মুকাদম হত্যা মামলার রায় যখন পড়া হচ্ছিল তখনো মুকাদম হত্যার কয়েকদিন আগে হত্যার শিকার হওয়া কুরাতুলাইন বালুচের মামলার বিচার

প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। -ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে