নোয়েল কনওয়ে

স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকারের জন্য লড়াই করছেন যিনি

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তিদের চিকিৎসকের সহায়তায় স্বেচ্ছা মৃত্যুর বিষয়টি সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক আলোচিত আইনি ঘটনা। পৃথিবীর অনেক দেশ ইতোমধ্যে আইনি কাঠামোর আওতায় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকার দিয়েছে। আবার অনেক দেশ বিষয়টিকে আইনি স্বীকৃতি দেয় নাই। যুক্তরাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নোয়েল কনওয়ে স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকার চান এবং সেটা নিয়ে যুক্তরাজ্যে বেশ কিছুদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশটিতে স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। তিনি এই আইনটির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত পযর্ন্ত গেছেন। কিন্তু দেশটির সুপ্রিম কোটর্ তাকে স্বেচ্ছা মৃত্যুর অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তিনি এখন বলছেন তাকে ঠকানো হয়েছে। তিনি হতাশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তিকে স্বেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নেয়ার অধিকার না দেয়ার এই সিদ্ধান্তকে তিনি ‘মধ্যযুগীয় মানসিকতা’ বলে বণর্না করেছেন। জনাব কনওয়ে ২০১৪ সালে মস্তিষ্কের স্নায়ুর এক জটিল ব্যাধি মটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে পারেন। এই রোগটির কোনো চিকিৎসা নেই। এই অসুখে অবধারিত মৃত্যুর আগে হাত ও পাসহ শরীরের নানা অঙ্গপত্যঙ্গ ধীরে ধীরে অকেজো হতে থাকে। এই অসুখটি ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়। যার ফলে একপযাের্য় বাকশক্তি আক্রান্ত হওয়াসহ আরও নানাবিধ জটিলতা দেখা দেয়। নোয়েল কনওয়ের মাথা ও গলার নিচে থেকে শরীরের অঙ্গপত্যঙ্গ ইতোমধ্যেই অকেজো হয়ে গেছে। তিনি চান তার মৃত্যুর যখন ছয়মাস বাকি থাকবে সেসময় তাকে যেন চিকিৎসকেরা কোনো ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেন। তিনি বলছেন, ভয়াবহ পযাের্য় যাওয়ার আগে স্বেচ্ছা মৃত্যু হলে তিনি অন্তত সম্মানের সাথে মরতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এখন এমন মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তিদের চিকিৎসকের সহায়তায় স্বেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা মৃত্যুর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে নোয়েল কনওয়ে গত দুই বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাকে সহায়তা করছে ‘ডিগনিটি ইন ডাইং’ নামে একটি প্রচারণা সংস্থা। দেশটিতে স্বেচ্ছা মৃত্যুর নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক আইনটির নাম ‘সুইসাইড অ্যাক্ট’। যার অধীনে কেউ কাউকে মৃত্যুবরণ করতে সহায়তা করা আইনত দÐনীয় অপরাধ। এর বিরুদ্ধে এর আগে দুটি নিম্ন আদালতে মামলা করে হেরেছেন তিনি। এরপর উচ্চ আদালতে গেলে কনওয়ের আপিল শুনতেই রাজি হয়নি দেশটির সুপ্রিম কোটর্। ২০১৫ সালে একবার সংসদে বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল। তখন বিশাল সংখ্যক সংসদ সদস্যের বিরোধিতায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রস্তাবটি নাকচ হয়ে যায়। নোয়েল কনওয়ে অবশ্য কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্রটি খুলে ফেলে স্বাভাবিক মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারেন। সেই সুযোগ ইংল্যান্ডে রয়েছে। কিন্তু যন্ত্রটির সহায়তা ছাড়াও তিনি এখনো খুব হালকা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন। এর অথর্ হলো যন্ত্রটি খুলে ফেলা হলে তিনি হয়তো দুই-তিন মিনিটের মধ্যে মারা যাবেন। অথবা ভয়াবহ নিঃশ্বাসের কষ্ট নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেঁচে থেকে তারপর ধুঁকে ধুঁকে মারা যেতে পারেন। সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান এই শিক্ষক। তবে নোয়েল কনওয়ে শুধু আইনের বিরুদ্ধে নয়, তিনি এখনো শরীরের অক্ষমতার বিরুদ্ধেও লড়তে যাচ্ছেন। হাত দিয়ে যেহেতু আর লিখতে পারেন না, তাই মুখের কথা শুনে লিখতে পারে এমন একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছোট গল্প ও নিজের স্মৃতিকথা লিখছেন তিনি। মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকারের জন্য তিনি লড়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। বিবিসি অবলম্বনে