কেরালা সরকারের উদ্যোগ

প্রয়াত বাবা-মায়ের বিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন সন্তানরা

এখন যে বিবাহ আইন চালু আছে, সেখানে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনো একজনের মৃতু্য হলে অন্যজন পুরনো বিয়ে নথিভুক্ত করিয়ে সনদ পেতে পারেন। এমন সংস্থান আইনে আছে। কিন্তু দম্পতির মধ্যে কেউই জীবিত না থাকলে তাদের বিয়ে নথিভুক্ত করা যাবে কিনা, সেই বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। এই 'ধোঁয়াশা'র জায়গাতেই বিধি সংশোধন করে গোপাকুমারকে তার প্রয়াত বাবা-মায়ের বিয়ের সনদ তুলে দিতে চাইছে সরকার

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২২, ০০:০০

ম আইন ও বিচার ডেস্ক
প্রয়াত হয়েছেন বাবা-মা, দু'জনেই। তাদের বিয়ে হয়েছিল ৫৩ বছর আগে। যে ঘটনার কোনো কাগজপত্রের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু বিশেষ কারণে এ বার প্রয়াত বাবা-মায়ের সেই বিয়ের সনদ হাতে পেতে চলেছেন ছেলে। কেরালার সরকার বিবাহ আইনের বিধিতে যে সংশোধন আনতে চলেছে, তা কার্যকর হলে পালাক্কাডের ওই প্রয়াত দম্পতিই হতে চলেছেন দেশের মধ্যে প্রথম দৃষ্টান্ত। কারণ, আইনের পূর্ববর্তী প্রভাব (রেট্রোস্পেকটিভ) কাজে লাগিয়ে প্রয়াত দম্পতির বিবাহ নথিভুক্তির নজির মনে করতে পারছেন না কেউ। ঘটনা কেরালার পালাক্কাড জেলার। সেনা বাহিনীতে কর্মরত সি ভাস্করন নায়ার এবং টি কমলের বিয়ে হয়েছিল ১৯৬৯ সালে, স্থানীয় একটি মন্দিরে। সেনা বাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে ভাস্করন পেনশন পেতেন। তাঁর স্ত্রী কমলম মারা যান ২০০৮ সালে। আর ভাস্করনের মৃতু্য হয় ২০১৮ সালে। তারপর থেকেই সমস্যার শুরু। পারিবারিক পেনশনের জন্য আবেদন করেন তাদের ছেলে গোপাকুমার। কিন্তু সেনা কর্তৃপক্ষ জানান, ভাস্করনের বিয়ে বা তার পরিবার সংক্রান্ত কোনো তথ্যই রেকর্ডে নেই। গোপাকুমার আর্থিকভাবে বিপন্ন, তার মানসিক কিছু সমস্যাও আছে। এমতাবস্থায় প্রয়াত বাবার ওই পারিবারিক পেনশন তার জন্য খুব জরুরি, এই মর্মে তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। তার জেরেই শুরু হয়েছিল নতুন উদ্যোগ। সরকারি সূত্রের খবর, কেরালা সরকারের স্থানীয় প্রশাসন দপ্তর সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, ভাস্করনের বিয়ের সনদ তাদের দরকার ওই পেনশন চালু করার জন্য। সেনার প্রশাসনের বক্তব্য জেনে স্থানীয় প্রশাসন দপ্তর মতামত নেয় রাজ্যের আইন দপ্তরের। দেখা যায়, এখন যে বিবাহ আইন চালু আছে, সেখানে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনো একজনের মৃতু্য হলে অন্যজন পুরনো বিয়ে নথিভুক্ত করিয়ে সনদ পেতে পারেন। এমন সংস্থান আইনে আছে। কিন্তু দম্পতির মধ্যে কেউই জীবিত না থাকলে তাদের বিয়ে নথিভুক্ত করা যাবে কিনা, সেই বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। এই 'ধোঁয়াশা'র জায়গাতেই বিধি সংশোধন করে গোপাকুমারকে তার প্রয়াত বাবা-মায়ের বিয়ের সনদ তুলে দিতে চাইছে সরকার। কেরালার স্থানীয় প্রশাসন দপ্তরের মন্ত্রী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম ভি গোবিন্দন মাস্টারের কথায়, মানবিকতার কারণে আমরা এই সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। একেবারে বিপন্ন অবস্থায় পড়লে কেউ যাতে এই বিশেষ আইনি সংস্থানের সহায়তা পেতে পারেন। আইন দপ্তরের মতামত নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। তার বক্তব্য, কোভিড যখন খুব সক্রিয় ছিল, সেই সময়ে রেজিস্ট্রারের কাছে সশরীর হাজিরা না দিয়েও বিবাহ নথিভুক্তি ও সনদ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই ব্যবস্থা ছিল সাময়িক। এ বার বিধি সংশোধন করে ওই সংস্থানই পাকাপাকিভাবে রাখা হচ্ছে। তবে গোপাকুমারের মতো কেউ যদি তাদের প্রয়াত বাবা-মা বা অন্য কারও বিয়ের সনদ নিতে চান, তা হলে তাদের পরিবার সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিয়ে আনতে হবে। তবে মন্ত্রী গোবিন্দন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পালাক্কাডের ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে, সেভাবে নির্দিষ্ট আবেদন খতিয়ে দেখে তবেই এমন পুরনো বিয়ের সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। সূত্র: আনন্দবাজার অবলম্বনে