ওয়ান স্টপ সাভির্স আইন, ২০১৮

এক ছাতার নিচে ২৭ সেবা

বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান দ্রæত উন্নয়নের স্বাথের্ দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা দ্রæত বাস্তবায়নকল্পে বিনিয়োগকারীদের তাদের প্রস্তাবিত কোনো প্রকল্প বা উদ্যোগ এর জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো সেবা, সুবিধা, প্রণোদনা, লাইসেন্স, অনুমতি, ছাড়পত্র বা পারমিট নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যে প্রদান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত হয় ওয়ান স্টপ সাভির্স আইন, ২০১৮। মূলত বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সেবা এক ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে এই আইন পাস হয়। আইনের ফলে বিনিয়োগকারীরা এক জায়গা থেকে ২৭ ধরনের সেবা পাচ্ছেন। লিখেছেন আদনান ওয়াসিম

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক

ওয়ান স্টপ সাভির্স আইন, ২০১৮-এর তফসিল-ক অনুযায়ী বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ, বাংলাদেশ অথৈর্নতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কতৃর্পক্ষ এবং বাংলাদেশ হাইটেক পাকর্ কতৃর্পক্ষ ‘কেন্দ্রীয় ওয়ান স্টপ সাভির্স কতৃর্পক্ষ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে। তফসিল-খ অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স, জমি নিবন্ধন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নিমার্ণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সাটিির্ফকেটসহ ২৭টি ক্যাটাগরির সেবা এক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কোনো বিনিয়োগকারীকে প্রাথমিক অনুমোদন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য আর বিভিন্ন কাযার্লয়ে ঘুরতে হবে না। অনলাইনে সেবা পাওয়া যাবে। বিনিয়োগকারীদের কোন সেবা কত দিনের মধ্যে দিতে হবে, তা বিধি দিয়ে নিধাির্রত হবে। আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নরূপ যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ, প্রকল্প বা উদ্যোগ বাস্তবায়ন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে এই আইনের অধীন ওয়ান স্টপ সাভির্স সম্পকির্ত বিধানাবলি নিম্নবণির্ত অবস্থাধীনেও কাযর্কর থাকবে, যথা : (ক) অন্য কোনো আইনের অধীন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে; (খ) সুবিধা ও প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে; (গ) কোনো কতৃর্পক্ষ বা সংস্থা কতৃর্ক লাইসেন্স, অনুমতি, পারমিট, ছাড়পত্র, তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, প্রদানের ক্ষেত্রে; (ঘ) সরকার কতৃর্ক নিধাির্রত অন্য কোনো ক্ষেত্রে। এ ছাড়া এই আইনের অধীন কোনো সেবা, প্রণোদনা, লাইসেন্স, অনুমতি, পারমিট, ছাড়পত্র, তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, প্রদানের ক্ষেত্রে আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন বা আইনের বিধান যদি এই আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূণর্ হয়, তাহলে সেই আইন বা আইনের বিধান যতখানি অসামঞ্জস্যপূণর্, ততখানি অকাযর্কর বলে গণ্য হবে। ওয়ান স্টপ সাভির্স নিশ্চিতকরণের জন্য কমিটি গঠনের বিধান আছে আইনের ৭ ধারায়। এই আইনের অধীন ওয়ান স্টপ সাভির্স কাযর্ক্রম তদারকির জন্য সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, একজন মন্ত্রীকে প্রধান করে প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে ওয়ান স্টপ সাভির্স নিশ্চিতকরণ কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করতে পারবে। আইনের ১২ ধারায় বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে অসুবিধা দূরীকরণের জন্য। বলা হয়েছে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী ওয়ান স্টপ সাভির্স প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে, সেবা, সুবিধা, প্রণোদনা, লাইসেন্স, অনুমতি, পারমিট বা ছাড়পত্র প্রদানকারী সংস্থা বা কতৃর্পক্ষের সঙ্গে পরামশর্ক্রমে, উক্তরূপ অসুবিধা দূরীকরণাথের্ সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। আইনটির ১১ ধারার বিধান অনুযায়ী এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করতে পারবে। ওয়ান স্টপ সাভির্স (ওএসএস) সেবা প্রদানকারী চারটি সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ অথৈর্নতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের (বিডা) জন্য বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ অথৈর্নতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের (বিডা) সহজে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিনিয়োগকারীদের কম সময়ে সব ধরনের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে শিগগির চালু হচ্ছে ওএসএস কেন্দ্র। এ সেবা চালুর প্রস্তুতি প্রায় শেষ পযাের্য়। ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্থা দুটির ওএসএস কেন্দ্র চালু হচ্ছে। সংস্থা দুটির ওএসএস কেন্দ্র চালু হলে বিভিন্ন সেবার জন্য এক মাস থেকে চার বছর পযর্ন্ত অপেক্ষার দিন শেষ হবে। বাংলাদেশ অথৈর্নতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষের (বেজা) প্রকাশিত বিধিমালায় দেখা গেছে, অথৈর্নতিক অঞ্চলে ২৭ খাতের ১২৩ ধরনের সেবা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। ন্যূনতম একদিন থেকে সবোর্চ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে মিলবে এসব সেবা। তবে বিনিয়োগ নিবন্ধনসহ ২৫ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে সবোর্চ্চ সাত দিনে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, একদিনেই দেয়া হবে কোম্পানির নামের ছাড়পত্র। এ ছাড়া টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন, আমদানি-রপ্তানি ও এর নমুনা অনুমোদন, কাস্টমসের ছাড়পত্র এবং কান্ট্রি অব অরিজিন সনদ একদিনে পাবেন বিনিয়োগকারীরা। দু’দিনে পাওয়া যাবে ভিসার সুপারিশপত্র ও স্থানীয় বিক্রয় অনুমোদন। ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যাবে তিন দিনে। এ ছাড়া জমির দলিল, ভিসার জন্য সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স, মুনাফা বা লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনের সুপারিশের মতো গুরুত্বপূণর্ ১৭ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে তিন দিনে। বিনিয়োগ নিবন্ধনসহ ২৫ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে সবোর্চ্চ সাত দিনে। তবে সবচেয়ে বেশি ৪৫ দিন সময় লাগবে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের জন্য এসবির প্রতিবেদন পেতে। ওএসএস সেবা প্রদানকারী চারটি সংস্থার মধ্যে বেজা ও বিডা ছাড়াও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কতৃর্পক্ষ (বেপজা) ও হাইটেক পাকর্ কতৃর্পক্ষ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের দ্রæত সেবা নিশ্চিত করতে চলতি বছরের এপ্রিলে বিজনেস অটোমেশন কোম্পানির সঙ্গে ওএসএস কাযর্ক্রমসংক্রান্ত একটি চুক্তি করেছে হাইটেক পাকর্। এ ছাড়া বেপজা ও হাইটেক পাকর্ ওএসএস চালুর জন্য বিধিমালা প্রায় চ‚ড়ান্ত করেছে। ওএসএস সেবা চালু করতে বাকি দুই সংস্থার প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পযাের্য়।