চীন

আইন না মানলে কাটা যাবে সামাজিক পয়েন্ট

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চীনের নাগরিকদের পয়েন্টের ভিত্তিতে ভালো-মন্দের এক তালিকায় ওঠানোর ব্যাপক কমর্যজ্ঞ শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। সে দেশের বিশালসংখ্যক জনগণকে তাদের কাজকমর্, আচার-আচরণের ভিত্তিতে পয়েন্ট দেয়া হচ্ছে এবং সেই পয়েন্ট নথিভুক্ত হচ্ছে কম্পিউটারের বিশাল তথ্য ভাÐারে। প্রত্যেক নাগরিক শুরু করছেন এক হাজার পয়েন্ট নিয়ে। কমর্কতার্রা বলছেন, যারা বেশি পয়েন্ট পাবেন তাদের জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরে ভালো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। আর যারা আইন ভাঙবেন, নিয়ম মেনে চলবেন না, তাদের নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে। চীনে যেভাবে উচ্চ প্রযুক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে তা নজিরবিহীন। নাগরিকদের কাছ থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ সমালোচনাও থেমে নেই। দেশটির পূবার্ঞ্চলের রংচাং শহরে এই সামাজিক পয়েন্ট ব্যবস্থার কাজ চলছে রীতিমতো জোরেসোরে। সরকারি ভবনে মানুষ প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন তাদের ব্যক্তিগত স্কোর জানার জন্য। প্রত্যেক নাগরিক শুরু করছেন এক হাজার পয়েন্ট নিয়েÑ যেটি ‘এ’ রেটিং হিসাবে নথিভুক্ত হচ্ছে। এরপর ভালো কাজ করলে কেউ তার পয়েন্ট দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়িয়ে নিতে পারেন। তখন তার রেটিং গিয়ে দঁাড়াবে ‘ডাবল এ’, বা ‘ট্রিপল এ’-তে। আর মন্দ কাজ করলে পয়েন্ট নামতে নামতে ‘ডি’-রেটিংয়ে গিয়ে পৌঁছবে। যেমনÑ এক নাগরিক নিজের পাড়ায় সেবামূলক কাজ করে, গরিবদের সাহায্য করে, বরফ খুঁড়ে অসমথর্ প্রতিবেশীর রাস্তা সাফ করে দিয়ে বাড়তি ৬৫ পয়েন্ট পেয়েছেন। এখন তার পয়েন্ট ১০৬৫। এই বাড়তি পয়েন্টের সুবাদে তিনি এখন বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা পেতে পারবেন। তাহলে মন্দ কাজ কোনগুলো যার জন্য পয়েন্ট কাটা যাবে? প্রশাসন বলছে, মূলত আইন ভাঙলে নাগরিকরা পয়েন্ট হারাবেন। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় এর পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। নেতিবাচক স্কোরের পরিণাম বেশ খারাপ হতে পারে। এর ফলে তার ব্যাংক ঋণ পাওয়া বন্ধ হতে পারে। কোনো কোনো চাকরির জন্য তার আবেদন করার পথও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চীনের অন্যত্র ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষকে লজ্জা দেয়ার প্রক্রিয়াও পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ঋণখেলাপিদের বাধ্য করা হচ্ছে তাদের মোবাইল ফোনে বিশেষ রিংটোন বসানোর জন্য। ওই রিংটোনে বলা হচ্ছে, ‘আপনি যাকে ফোন করেছেন সে ঋণখেলাপি -তাকে বলুন আইন মানতেÑ ঋণ শোধ করতে।’ চীনের নতুন এই সামাজিক পয়েন্ট ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য সামাজিক মূল্যবোধের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা। আইন ভাঙা বা নিয়ম অগ্রাহ্য করার পরিণতিকে সামাজিক স্তরে নিয়ে যাওয়া। সামাজিক এই পয়েন্ট ব্যবস্থা চীনের বিভিন্ন শহরে চালু হলেও এখনো তা অনেকটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পযাের্য় রয়েছে। অনেক সমালোচক বলছেন, ‘এই প্রকল্প পরিচালনা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ, তার ওপর রয়েছে দেশের প্রতিটি মানুষের আচার-আচরণের সব তথ্য সরকারি ভাÐারে নথিভুক্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা খবর্ হওয়ার বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।’ এসব মোকাবেলা করে ২০২০ সালের মধ্যে দেশটির ১৩০ কোটি মানুষের জন্য এটা জাতীয় প্রকল্পে রূপ দেয়া কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ এই প্রকল্প সফল করতে গেলে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সরকারকে ভাবতে হবে ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে এ প্রকল্প ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিবিসি অবলম্বনে