শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জুনিয়র আইনজীবী অনুপ্রেরণার গল্প

ম অ্যাডভোকেট উদয় তাসমির
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর কমন ল' সিস্টেমের অধীনে মামলায় হার-জিত মামলার পক্ষের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হার-জিতের এই খেলায় প্রতিপক্ষ যত বেশি শক্তিশালী হয় তার বিপরীতে থাকা পক্ষের ওপর তত বেশি চাপ সৃষ্টি হয় এবং তার পরিশ্রম বেড়ে যায় কয়েকগুণ বেশি! এবার প্রতিপক্ষ যদি হোন দেশের অন্যতম জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং তিনি যদি হোন বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান (ভোটাভুটির ভিত্তিতে নির্বাচিত সর্বোচ্চ পোস্ট) তবে সে বিজয় তৃপ্তির বাইরেও বাড়তি অনুপ্রেরণাদায়ক হয়।

আমার বর্তমান কর্মস্থলে জয়েন করার পর বিজ্ঞ সিনিয়রের একটি ফৌজদারি রিভিশন মামলায় কাজ করার সুযোগ পাই। এই মামলায় প্রতিপক্ষের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান স্যার যেদিন শুনানির জন্য আদালতে আসতেন সেদিন আমাদের ওপর বাড়তি চাপ চলে আসতো। এই চাপ কেবলই পেশাগত চাপ নয়, মানসিক চাপও বটে। আদালত তার নিরপেক্ষতার মধ্যেও সিনিয়র আইনজীবীর প্রতি বাড়তি এটেনশন দেন। এটা বেশ অস্বস্তিকর বটে।

তবে এটা হওয়াই হয়তো স্বাভাবিক। একজন মানুষ যখন দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছর ওকালতি করে যখন দেশের সামাজিক- রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থান করেন তখন তার প্রতি কেবল আদালত নয়, আমরা বিপরীত পক্ষে থেকেও বিনয় প্রকাশ করেছি। এটাই আমাদের পেশার ঐতিহ্য। তাই বলে ক্লায়েন্টের স্বার্থে ছাড় দেয়ার সুযোগ ছিল না।

আমাদের সিনিয়রের নেতৃত্বে চলেছে; কঠোর টিম ওয়ার্ক, মামলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে পর্যালোচনা, গভীর আইনি বিশ্লেষণ! এই মামলায় আমার ভূমিকা খুব সামান্যই ছিল। আমার কাজ ছিল সৈয়দ রেজাউর রহমান স্যারের সম্ভাব্য সব আর্গুমেন্টের যে ভিত্তি ও গতিপথ তার বিপরীতে উপযুক্ত আইনি পয়েন্টসমূহ খুঁজে বের করা। এই খুঁজে বের করার কাজে আমি আমার দুজন সিনিয়র ভাইয়ের প্রতি প্রচন্ড রকমের কৃতজ্ঞ। একজন আমার জন্য রাস্তা খুলে দিয়েছেন, অন্যজন পথ দেখিয়েছেন।

আমাদের সিনিয়র উনার আর্গুমেন্ট উপস্থাপন কালে সৈয়দ রেজাউর রহমান স্যারের বক্তব্যের ভিত্তিকে লক্ষ্য করে সূক্ষ্ণ আইনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এরপর পুরোটা আলস্নাহ তায়ালার অনুগ্রহ।

মামলায় হার-জিত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ক্লায়েন্টদের থেকে আমরা অর্থ গ্রহণ করি তাকে জেতানোর জন্য। এখানে বাড়তি আনন্দ-উলস্নাস প্রকাশের কিছু নেই। কিন্তু কোর্ট রুমের ভেতরের পরিস্থিতি যখন ক্ষণে ক্ষণে নাটকীয় রূপে মোড় নেয় এবং ন্যায়সঙ্গত অবস্থানে থাকা ক্লায়েন্ট যখন অপেক্ষাকৃত দুর্বল ফুটিং এ থাকে তখন সেই অবস্থা থেকে তাকে টেনে তুলে আনার যে আনন্দ তা অর্থ খরচ করে পাওয়া সম্ভব নয়।

তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অর্থ প্রাপ্তি এখানে মূল প্রেষণা হিসেবে কাজ করে। রূঢ় বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যায়-অন্যায় এখানে মুখ্য বিষয় থাকে না। এ যেন শংকরের কত অজানার ব্যারিস্টার উইলমট ডানিয়েল রেম্পিনির সে ষাঁড়ের লড়াইয়ের মতন- 'গোঁ থাকা চাই। বেপরোয়া হতে হবে। টাকা নিয়ে তুমি অপরের পক্ষে নেমেছ; চোখ বন্ধ করে শিং উঁচিয়ে সামনে ছুটে যাও। আঘাত করো। জিতলে ধন্য ধন্য পড়ে যাবে হারলে কেউ ফিরেও চাইবে না।'

অ্যাডভোকেট উদয় তাসমির,

তরুণ আইনজীবী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে