যাহা বলিব সত্য বলিব...

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ফখরুল ইসলাম
মামলা নিষ্পত্তিতে সাক্ষীর ভ‚মিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্। তাই সাক্ষীর সৎ সাক্ষ্য নিশ্চিত করাও জরুরি। আমাদের দেশে ফৌজদারি মামলা পরিচালিত হয় ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কাযির্বধি অনুযায়ী। একটি মামলা দায়ের করার পর সেটি শোনার জন্য দিন তারিখ নিদির্ষ্ট করে দেয়া হয়। ওই নিদির্ষ্ট দিনে মামলার বাদী বিবাদী উভয়পক্ষ মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এবং সাক্ষী নিয়ে আদালতে হাজির হন। ম্যাজিস্ট্রেট মামলার বিবরণ দেখে যদি মনে করেন, মামলাটির যথাযথ ভিত্তি আছে; তাহলে চাজর্ বা অভিযোগ গঠন করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি অপরাধ অস্বীকার করেন, তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো শুনানো হয় এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি হাজির করা হয়। অভিযোগকারী অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন মনে করলে সাক্ষীর বক্তব্য নিতে পারেন। সাক্ষীর জবানবন্দির এতসব গুরুত্বের কারণেই জবানবন্দি নেয়ার আগে তাকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। বাংলাদেশে ঞযব ঙধঃযং অপঃ ১৮৭৩-এর বিধান অনুযায়ী শপথবাক্য পাঠসংক্রান্ত নিয়মাবলি পালন করা হয়। শপথবাক্য পাঠ করার জন্য সুপ্রিমকোটের্র বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। মুসলিম ও হিন্দু এবং অন্যান্য ধমের্ বিশ্বাসী লোকেরা নিজ নিজ ধমীর্য় গ্রন্থ নিয়ে শপথ করবেন। আর যারা শপথ নিতে চান না, তারা ধভভরৎসধঃরড়হ দেবেন। যেমন আমাদের দেশে কাঠগড়ায় দঁাড়িয়ে শপথ পাঠ করা হয় এভাবে ‘যাহা বলিব, সত্য বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না’। এর কারণ স্বাভাবিকভাবে ধমীর্য় গ্রন্থ হাতে নিয়ে কেউ মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। কেননা ধমির্বশ্বাসীর কাছে ধমীর্য় গ্রন্থ সবচেয়ে পবিত্র ও শ্রেষ্ঠ আমানত। অবশ্য আদালত চত্বরে কিছু পেশাগত সাক্ষী আজকাল পাওয়া যায়, তাদের কথা ভিন্ন। আইনটির ৫ ধারা অনুযায়ী সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ করার কতৃর্ত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি ও আদালত এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর নিদির্ষ্ট এলাকায় প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োজিত অধিনায়ক শপথ গ্রহণ করাতে পারবেন। আর ৬ নাম্বার ধারা অনুযায়ী সাক্ষ্য দেবেন ওইসব সাক্ষী, যাদের আদালতে কোনো বিষয় সম্পকের্ আইনগতভাবে জিজ্ঞাসা করা হয়। আদালতের বাইরেও কোনো ব্যক্তি সাক্ষ্যপ্রমাণ দিলে সে ক্ষেত্রেও শপথ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষের সম্মতিক্রমে একজন ব্যক্তি নিয়োগ করা হবে, যিনি সাক্ষ্যপ্রমাণ নেবেন। সাক্ষীদের প্রমাণাদি ব্যাখ্যাকারী ব্যক্তিও শপথ গ্রহণ করবেন। কোনো ব্যক্তিকে যদি তার বিপরীতপক্ষ সাক্ষ্য নিতে চায়, তখন আদালত তাকে জিজ্ঞাসা করবেÑ তিনি শপথ নিতে রাজি কিনা? যদি রাজি হন তাহলে আদালতে, আর যদি অসুবিধা হয়; তাহলে আদালতের বাইরে আদালত কতৃর্ক নিযুক্ত ব্যক্তি তার কাছ থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে আদালতে হাজির করবেন। এ সাক্ষ্যগুলো ওই পক্ষের বিরুদ্ধে চ‚ড়ান্ত প্রমাণ বলে গণ্য হবে। আর যদি রাজি না হন, তাহলে তার কারণ উল্লেখ করতে হবে। শপথ গ্রহণে কোনো কিছু বাদ পড়লে তার জন্য গোটা বিচারপ্রক্রিয়াকে অবৈধ বলা যাবে না। শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে একজন ব্যক্তি সত্য কথা বলতে আইনগতভাবে বাধ্য। যদি কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন, তাহলে ১৮৬০ সালের দÐবিধির ১৮১ নাম্বার ধারা অনুযায়ী তিন বছর পযর্ন্ত কারাদÐ এবং আথির্ক জরিমানাও করা হতে পারে। একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর আদালতের রায় অনেকাংশে নিভর্র করে। তাই সত্য কথা বলার শপথ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতের রায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা গুরুতর অপরাধ। এ ধরনের অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে এ অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে।