জানুয়ারির প্রথম সোমবার বিচ্ছেদের দিন

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পরিবার নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা জানুয়ারির প্রথম সোমবারকে ‘বিচ্ছেদের দিন’ বলে ডেকে থাকেন। কারণ এদিন অনেক মানুষ জানতে চান, কীভাবে ভালোভাবে তাদের বিয়ের সমাপ্তি টানা যায়। কি এমন ঘটে, যা এত যুগলকে এরকম উৎসবের মতো করে বিয়ে বিচ্ছেদে আগ্রহী করে তোলে? ব্রিটেনের সম্পকির্বষয়ক একটি দাতব্য সংস্থার তথ্যমতে, দেশটির ৫৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্রিটিশ মনে করে, ক্রিসমাস আর নতুন বছর হচ্ছে অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং সম্পকের্ চাপের কারণ। রিলেটের একজন পরামশর্ক সিমোন বোস বলছেন, ‘কেউ বলছে না যে, ক্রিসমাসই কাউকে বিচ্ছেদ বা ছাড়াছাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি এর মধ্যেই নানা সমস্যার মধ্যে থাকেন, তাহলে এই উৎসবের অতিরিক্ত চাপ, যেমন অতিরিক্ত খরচ এবং পারিবারিক বিরোধে খারাপ লাগা শেষপযর্ন্ত বিচ্ছেদের দিকে গড়াতে পারে।’ ফলে ছুটি শেষে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিচ্ছেদের ব্যাপারে আলাপ করতে চাওয়া যুগলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে, যুক্তরাজ্যের অনলাইন এইচএম কোটর্ অ্যান্ড ট্রাইব্যুনাল সাভির্স জানিয়েছে, সংস্থাটি ক্রিসমাসের শুরু থেকে নববষর্ পযর্ন্ত বিচ্ছেদের জন্য ৪৫৫টি অনলাইন আবেদন পেয়েছে। যার মধ্যে ১৩টি আবেদনই ছিল ক্রিসমাসের দিনে। বিচ্ছেদবিষয়ক একটি সহায়তা প্রতিষ্ঠান, অ্যামিকেবলের তথ্য মতে, শুধু জানুয়ারি মাসেই যুক্তরাজ্যজুড়ে ৪০৫০০ মানুষ ‘বিচ্ছেদ’ শব্দটি লিখে কম্পিউটারে সাচর্ করেছে। তাহলে জানুয়ারির আগে ঠিক কী ঘটে? অনেক সময় ছুটি বা অবকাশে গিয়ে খরচসহ নানা কারণে তৈরি হওয়া বিরোধ থেকে বিচ্ছেদের পরিস্থিতি তৈরি হয়। অ্যামিকেবলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেট ড্যালি বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, ক্রিসমাস আর নববষর্ হচ্ছে এমন একটা সময় যখন যুগলরা লম্বা একটা সময় ধরে একত্রে থাকে এবং তাদের আবেগও উত্তঙ্গ অবস্থায় থাকে।’ সম্পকর্ খারাপ হওয়া সত্তে¡ও সন্তান বা পরিবারের কথা ভেবে অনেক যুগল তাদের খারাপ সম্পকর্ বয়ে নিয়ে যান। অন্য অনেকে আরেকবার শেষ চেষ্টা করে দেখতে চান। অনেক সময় যুগলরা ক্রিসমাস বা কোনো ছুটির দিনের কথা আলাপ করতে গিয়ে ঝগড়ার মতো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন। তখন তারা পরিবার বা ভবিষ্যতে একসঙ্গে সময় কাটানোকে গুরুত্ব দেন। কিন্তু সম্পকর্ যদি তলানিতে গিয়ে ঠেকে, তখন কোনো আকষর্ণহীন জীবন কাটানো, ধরাবাধা পারিবারিক কাজের মধ্যদিয়ে গেলে সেটা ক্রমেই একঘেয়ে বলে মনে হতে পারে। হয়তো মনে হতে পারে এরকমটা আর বহন করা সম্ভব নয়। বছরের এই উৎসবের সময়টায় এসে অতিরিক্ত খরচ আর পারিবারিক চাপের কারণে এ ধরনের খারাপ সম্পকর্গুলো আর টিকে থাকতে পারে না, বরং দীঘির্দনের চাপা পড়ে থাকা বিষয়গুলো সামনে বেরিয়ে আসে। এটা শুধু ক্রিসমাস শেষেই হয় তা নয়, বরং গ্রীষ্মের ছুটি শেষেও বিচ্ছেদের এই প্রবণতা দেখা যায়। অনেক মানুষ নতুন বছরকে নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ হিসেবে দেখেন সাধারণত নতুন বছরকে দেখা হয় ভবিষ্যৎ সম্পকের্ নতুন করে ভাবার, নিজেদের পুনরায় গড়ে তোলার ও নতুন করে শুরু করার একটি সময় হিসাবে। কোনো মানুষ যদি ভাবতে থাকে যে, সে একটি খারাপ পরিস্থিতি বা সম্পকের্র মধ্যে রয়েছে, তারা হয়তো সেই অবস্থায় আরও ১২টি মাস আর থাকতে চাইবে নাÑ সেটা শারীরিক বা মানসিকভাবেই হোক না কেন। ‘দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অনেক যুগল মনে করে যে, ফেরত যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা বিচ্ছেদ করতে চান। অ্যামিকেবলের তথ্য বলছে, বিচ্ছেদ নিয়ে ২০১৮ মানুষের সবচেয়ে বেশি আগ্রহের দিনটি ছিল বছরের প্রথম কমর্ দিবসটি। দাতব্য সংস্থা রিলেটের তথ্যও বলছে, জানুয়ারির প্রথম কমর্ দিবসে বিচ্ছেদের বিষয়ে তারা ১৩ শতাংশ নতুন টেলিফোন পান এবং ওয়েবসাইটে ৫৮ শতাংশ ব্যবহারকারী বেড়ে যায়। তবে তারা এটাও বলছেন, সঠিকভাবে পরামশর্ পেলে অনেক দম্পতি তাদের সম্পকির্ট টিকিয়ে রাখতে পারে, অথবা অন্তত বেদনাহীনভাবে সম্পকির্ট শেষ করতে পারেন। বিবিসি অবলম্বনে