শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বই কেনার জন্য ঋণ পাচ্ছেন মিশরীয়রা

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মিশরে মূল্যস্ফীতি এতই বেশি যে, সেখানকার লোকজন গাড়ি ও ওয়াশিং মেশিনের মতো দামি পণ্যের মূল্য পরিশোধ করছে কিস্তিতে। এখন দেশটির লোকজন একইভাবে বই কিনতে পারছে।

সেফসাফা পাবলিশিং হাউজের মোহামেদ এল-বালি বিবিসিকে বলেন, মিশরে বই এখন বিলাসপণ্য হয়ে গেছে। এটি খাদ্যের মতো মৌলিক কোনো পণ্য না। লোকজন বিলাসপণ্যের সঞ্চয় করছে।

কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা নিয়ে তিনি কথা বলছিলেন। এই মেলা গেল বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

বইয়ের দাম দ্বিগুণের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় মিশরীয় লেখকরা বলছেন, লেখা প্রকাশে খরচ কমাতে তারা অক্ষর ও বর্ণনা ছেঁটে ফেলছেন। মোহামেদ এল-বালি বলেন, কাগজ ও কালির দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। এক টন কাগজের দাম বছরের শুরুর তুলনায় চার গুণ বেড়েছে।

তিনি জানান, এখন তিনি বিদেশে বই ছাপিয়েছেন। চাহিদা কমে যাওয়ার কথা ভেবে তিনি মাত্র কয়েকটি কপি ছেপেছেন।

চলতি বছরের মেলায় ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। কায়রো বইমেলা আরব বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে বড় বইমেলা এবং মুদ্রণশিল্পের অন্যতম প্রধান আয়োজন। ক্রেতার সংখ্যা কমার আশঙ্কায় কিস্তিতে বই কেনার ধারণার দিকে ধাবিত করেছে।

মিশরীয় পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, দেড় শতাংশ সুদে ক্রেতারা সর্বোচ্চ ৯ মাসে একটি বইয়ের দাম পরিশোধ করতে পারেন।

কিশোর কথাসাহিত্যের লেখিকা দিনা আফিফি আশা করছেন, এই স্কিম বইয়ের বিক্রি বাড়াবে। তিনি বলেন, ফারাওদের নিয়ে তার সর্বশেষ বইয়ের রূপ বদলানো হয়েছিল উৎপাদন খরচ কমাতে। তিনি বলেন, আমার বই ছোট ও পাতলা করা হয়েছে। ১০০ পৃষ্ঠা থেকে ৬০ পৃষ্ঠা করা হয়েছে ছাপার উচ্চমূল্যের জন্য।

বেশ কয়েকজন মিশরীয় ঔপন্যাসিক বলেছেন, তারা লেখনীতে পরিবর্তন এনেছেন ছোট বই ছাপার জন্য। বর্ণনা ও অক্ষর কমিয়ে কাহিনী একেবারে সহজ করেছেন। তাদের অভিযোগ, অনেক মিশরীয় পাঠক এখন নিম্নানের নকল বইয়ের দিকে ঝুঁকছেন। ফুটপাতের বিভিন্ন স্টলে এসব বই ৫০-১০০ মিশরীয় পাউন্ডে বিক্রি হচ্ছে।

গত কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতির কারণে মিশরীয়দের ব্যয়ক্ষমতা কমেছে। কয়েকটি বছর তাদের মিতব্যয়িতা এবং অর্থনৈতিক ধাক্কার পুনরাবৃত্তি সহ্য করতে হয়েছে।

মিশর বৈদেশিক আমদানির ওপর নির্ভরশীল। দেশটি মুদ্রা সংকটে ভুগছে। ক্রমাগত অবমূল্যায়নের ফলে এক বছর আগের তুলনায় দেশটিতে মুদ্রার দাম অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। দেশটির সরকার বলছে, পণ্যের দাম কমাতে সবকিছুই করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার ইউক্রেন যুদ্ধের সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

মিশরীয় একজন কবি বলেন, এই বছরটি অবাক করার মতো নয়। সাধারণ লোকজন বই কেনার চেয়ে খাবার কেনা নিয়ে বেশি চিন্তিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে