বিয়ের প্রতিশ্রম্নতি ভাঙা মানেই মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতি নয় :ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
কথা ছিল বিয়ে হবে। সেই ভরসাতেই ঘনিষ্ঠতা, কোনো ক্ষেত্রে সহবাসও। এরপর বিয়ের প্রতিশ্রম্নতি পূরণ না হলেই কি ধরে নিতে হবে মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছিল? এমনও তো হতে পারে, যিনি প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন এবং যখন দিয়েছিলেন, তখন তা পূরণ করবেন ভেবেই দিয়েছিলেন। পরে হয়তো কোনো পরিস্থিতির ফেরে কথা রাখতে পারেননি। এক ধর্ষণে অভিযুক্তের মামলার শুনানিতে এমনই যুক্তি দিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। মামলাটিতে ধর্ষণে অভিযুক্তকে নিষ্কৃতি দিয়ে কোর্ট জানিয়েছেন, বিয়ের প্রতিশ্রম্নতি ভাঙা মানেই তা মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতি না-ও হতে পারে। এ বিষয়ে দিলিস্ন হাইকোর্টের এবং এক নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রস্তোগি এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চে। বেঞ্চ মামলাটি শুনে জানিয়েছেন, এই মামলায় অভিযুক্তকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে বড় ভুল করেছেন হাইকোর্ট এবং নিম্ন আদালত। একই সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগকারিণীর উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেন, যিনি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, তিনি নিজেই বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে বরং তিনিই তার পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং জেনে বুঝেই আরও পছন্দের জীবনসঙ্গীকে বেছে নিয়ে নতুন সম্পর্কে প্রবেশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট যে মামলায় এই নির্দেশ দিয়েছেন, সেই মামলা প্রথম দায়ের হয় ২০১৫ সালে। তবে ঘটনার সূত্রপাত তারও বেশ কয়েক বছর আগে। অভিযোগকারিণী তখন বিবাহিত মহিলা এবং তিন সন্তানের জননী। অভিযুক্ত তার বাড়ির সামনেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। দু'জনেরই পরস্পরকে ভালো লাগে এবং সেই ভালো লাগা ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা এবং নিয়মিত যৌন সম্পর্কে পৌঁছায়। ২০১১ সালে অভিযুক্তের সন্তানের জন্ম দেন অভিযোগকারিণী। এরপর ২০১২ সালে সঙ্গীর সঙ্গে তার বাড়িতে হাজির হন ওই বিবাহিতা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তার সঙ্গীও বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে। এরপরও অবশ্য আলাদা জায়গায় একসঙ্গেই থাকছিলেন দুজন। ২০১৪ সালে অভিযোগকারিণী তার স্বামীর থেকে পরস্পরের সম্মতিক্রমে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। স্বামী এবং তিন সন্তানের দায়িত্ব পুরোপুরি ছেড়ে থিতু হন। কিন্তু ২০১৫ সালে পরিস্থিতি পাল্টায়। নতুন সঙ্গীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ওই মহিলা। তার যুক্তি ছিল, অভিযুক্ত তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন বলেই তিনি যৌন সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযুক্ত শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করতে চাননি। প্রতিশ্রম্নতি ভেঙেছেন। এই মামলায় নিম্ন আদালত এবং দিলিস্ন হাইকোর্ট অভিযুক্তকে ধর্ষণের দায়েই দোষী সাব্যস্ত করেছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে আসে মামলাটি। তার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, 'অভিযোগকারিণী বিবাহিতা এবং তিন সন্তানের জননী। তাই বলা যায়, তিনি যথেষ্ট পরিণত বোধ এবং বুদ্ধিসম্পন্ন। তিনি কী করতে চলেছেন এবং তার পরিণাম কী হতে পারে, সে ব্যাপারে যথোচিত অবগত। এই সিদ্ধান্তের নৈতিকতা এবং অনৈতিকতা বিষয়েও অবগত। যদি তা না-ও হয়, তা হলেও দেখা যাচ্ছে তিনি নিজের স্বামী এবং তিন সন্তানের সঙ্গে প্রতারণা করে নতুন বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। বিবাহিত থাকাকালীন নতুন সঙ্গীর সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং আরও ভালো জীবনের আশায় পরিবার ছেড়ে নতুন সঙ্গীর সঙ্গে ঘর ছেড়েছেন।' আদালতের রায়, 'এই মামলায় সমস্ত দিকে নজর রেখে এবং ঘটনা পরম্পরা বিচার করে এ কথা কোনোভাবেই বলা যায় না যে, অভিযোগকারিণী না বুঝে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। ফলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনোভাবেই ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় মামলা দায়ের করা যায় না। এই মর্মেই তাকে ধর্ষণের মামলা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হলো।'