জামিন কখন পাওয়া যায়

দেশের কারাগারগুলোয় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি আটক আছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামির পাশাপাশি বেশির ভাগই আছেন বিচারাধীন মামলার আসামি হিসাবে। আবার মাঝেমধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বাথের্ বিশেষ গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করা হয়। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে এরকম অভিযানে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। আটককৃত এসব বন্দি এবং তাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবার কাছে প্রশ্ন মামলায় জামিন কখন পাওয়া যায়। লিখেছেন অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মামলার যে কোনো পযাের্য় জামিন চাওয়া যায় অথার্ৎ রায় প্রদানের আগে মামলার বিচারপ্রক্রিয়ার যে কোনো পযাের্য় আদালত অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করতে পারে। কারণ অপরাধ সাব্যস্ত বা প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে অহেতুক আটকে রাখা হচ্ছে ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। নিদোর্ষ কোনো ব্যক্তি আটক থাকলে তার সামাজিক, পারিবারিক, শারীরিক, মানসিক নানাবিধ সমস্যা যেমন হতে পারে তেমনি অভিযুক্তের মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে। আবার বিচারের সময় অভিযুক্তকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় ফৌজদারি কাযির্বধির ৪২৬, ৪৯৬, ৪৯৭, ৪৯৮, ৪৯৯, ৫০২ এবং ৫১৪ ধারায় মূলত জামিনের বিধান সম্পকের্ বলা হয়েছে। জামিন কী? সাধারণত জামিন হলো একজন গ্রেপ্তারকৃত বা কারাগারে আটক কোনো ব্যক্তিকে মামলার ধাযর্ তারিখে বা আদালতের আদেশ মোতাবেক হাজিরা থাকার শতের্ কোনো জামিনদারের মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া। আদালত যখন আইন ও সুবিবেচনামূলক এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে আটক কোনো ব্যক্তিকে আদালতের আদেশমতো নিদির্ষ্ট স্থানে এবং নিদির্ষ্ট সময়ে আদালতে হাজির হওয়ার শতের্ আইনগত হেফাজত থেকে মুক্তি প্রদান করে জামিনদারের কাছে সমপর্ণ করে সাময়িক মুক্তির ব্যবস্থা করে তখন সেটাকে জামিন বলা হয়। এই জামিনদার বাবা-মা, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, নিকটস্থ বন্ধু-বান্ধব যে কেউ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দুজন জামিনদারের জিম্মায় আদালত জামিনের আদেশ প্রদান করেন। কোন কোন মামলায় জামিন পাওয়া যায়? বাংলাদেশে দÐসংক্রান্ত যেসব আইনি বিধি-বিধান বিদ্যমান আছে তাদের মধ্যে বেশকিছু আইনের ধারা আছে যা জামিনযোগ্য অথার্ৎ আইনে সংশ্লিষ্ট ধারা জামিনযোগ্য বলা থাকলে অভিযুক্ত বা আসামি অধিকার বলেই জামিন চাইতে পারে এবং জামিন চাইলেই পাবে। আবার বেশকিছু আইনের ধারা আছে যা জামিন অযোগ্য বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত বা আসামি জামিন চাইলেই পাওয়ার গ্যারান্টি নাই। জামিন অযোগ্য মামলায় জামিন পাওয়া আদালতের বিবেচনার ওপর নিভর্রশীল। কোন কোন ধারায় জামিনযোগ্য, আর কোন কোন ধারায় জামিন অযোগ্য তা সংশ্লিষ্ট আইনে বলা থাকে। যেমন, ১৯৮০ সালের দÐবিধির কোন কোন ধারায় জামিনযোগ্য বা অযোগ্য তা ফৌজদারি কাযির্বধির দ্বিতীয় তফসিলে বণর্না করা আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশেষ আইনেও কোন ধারা জামিনযোগ্য আর কোন ধারা জামিনযোগ্য নয় তা বলা আছে। যখন একটি মামলায় একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয় যার মধ্যে কিছু ধারা জামিনযোগ্য আর কিছু জামিন অযোগ্য, তখন ওই মামলায় একাধিক আসামি থাকলে যাদের অপরাধ জামিনযোগ্য ধারায়, তারা জামিন চাইলে জামিন পাবেন। ফৌজদারি কাযির্বধির ৪৯৬ ধারা অনুযায়ী, জামিনের যোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনো থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কতৃর্ক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার হলে বা আটক থাকলে, বা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, সে যদি ওই অফিসারের হেফাজতে থাকার সময় বা সংশ্লিষ্ট আদালতের কাযর্ক্রমের কোনো পযাের্য় জামানত দিতে প্রস্তুত থাকে তাহলে সে জামিনে মুক্তি পাবে। তবে শতর্ থাকে যে, ওই অফিসার বা আদালত উপযুক্ত মনে করলে তার কাছ থেকে জামানত গ্রহণের পরিবতের্ মুচলেকা সম্পাদন করে মুক্তি দিতে পারে। সাধারণত জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া আসামির অধিকার। জামিন চাওয়ামাত্র আদালত তাকে জামিন দিতে বাধ্য। ফৌজদারি কাযির্বধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, জামিন অযোগ্য অপরাধের অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কতৃর্ক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার হলে বা আটক থাকলে অথবা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া যেতে পারে; কিন্তু সে মৃত্যুদÐ বা যাবজ্জীবন কারাদÐের কোনো অপরাধে দোষী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে জামিন দেয়া যাবে না। জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন প্রদান করা হচ্ছে আদালতের এখতিয়ার। জামিন অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত স্বাধীন হলেও জুডিশিয়াল মাইন্ড তথা সূ² বিচার-বিবেচনার ওপর নিভর্র করতে হয়। লেখক : আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ কোটর্ ইমেইল : খখ.নৎধরযধহ@মসধরষ.পড়স