খাসজমি বন্দোবস্তের আইনি দৃষ্টিকোণ

কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী বাংলাদেশ গেজেটের মাধ্যমে ৮ মাচর্ ১৯৯৫ তারিখে জারিকৃত অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালার আওতায় সংজ্ঞায়িত অকৃষি খাসজমি বাদে অন্য সব জমি কৃষি খাসজমি হিসাবে গণ্য হবে। অথার্ৎ দেশের মেট্রোপলিটন এলাকা, সব পৌর এলাকা এবং সব উপজেলা সদর এলাকাভুক্ত সব ধরনের জমি ছাড়া এর বাইরে অবস্থিত কৃষিযোগ্য সব খাসজমিই কৃষি খাসজমি হিসেবে বিবেচিত হবে। যেসব ব্যক্তি ৬০ বিঘার কম জমির অধিকারী তারা খাসজমির বন্দোবস্ত পেতে পারে তবে যারা তিন একরের কম জমির অধিকারী এবং সৎ বিশ্বাসে চাষাবাদকারী তারা অগ্রাধিকার পাবে। কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা ১৯৯৭-এ বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে ভ‚মিহীন পরিবারকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে..

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আরিফুর রহমান
অভ্যন্তরীণ সম্পদের সদ্ব্যবহার ও খাসজমি অব্যবহৃত বা পতিত না রাখার উদ্দেশ্যে সরকার বিভিন্ন সময়ে জনগণের মধ্যে খাসজমির বন্দোবস্ত করে থাকে। যে সব জমি সরকারের সরাসরি তত্ত¡াবধান, ব্যবস্থাপনা ও খাস দখলে রয়েছে সেগুলো খাসজমি। খাসজমির হিসাব খাসজমির ‘রেজিস্টার-৮’ থেকে পাওয়া যায়। রেজিস্টার-৮ অনুযায়ী চার ধরনের খাসজমি হয়ে থাকে। প্রথমত, সে সব জমি যাতে জনসাধারণের ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। যেমন রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, পানীয় জলের পুকুর, বঁাধ, ক‚প ইত্যাদি। এ সব জমি বন্দোবস্ত দেয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, সে সব জমি যা সাধারণত চাষযোগ্য। এ ধরনের জমি বন্দোবস্ত দেয়া যায়। তৃতীয়ত, সে সব জমি যা সরকার ক্রয় করেছে বা আইনগতভাবে পুনঃগ্রহণ করেছে বা পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে সরকারের মালিকানাধীন হয়েছে। এ সব জমি বন্দোবস্তযোগ্য। চতুথর্ত, সে সব জমি যা নদী ভরাট হলে বা নদীতে চর জাগলে উৎপত্তি হয়। এ সব জমি বন্দোবস্তযোগ্য। ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে দেশের সব জমিকে কৃষি ও অকৃষি এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এই বিভাজন অনুযায়ী খাসজমিকে কৃষি খাসজমি ও অকৃষি খাসজমি এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। খাসজমির মালিক সরকার তথা ভ‚মি মন্ত্রণালয়। ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই সরকার খাস কৃষি ও অকৃষি জমির ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কাযর্ক্রম গ্রহণ করে থাকে। ভ‚মি মন্ত্রণালয়ই খাসজমির লিজ প্রদান করতে পারে। কৃষি খাসজমি : কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী বাংলাদেশ গেজেটের মাধ্যমে ৮ মাচর্ ১৯৯৫ তারিখে জারিকৃত অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালার আওতায় সংজ্ঞায়িত অকৃষি খাসজমি বাদে অন্য সব জমি কৃষি খাসজমি হিসাবে গণ্য হবে। অথার্ৎ দেশের মেট্রোপলিটন এলাকা, সব পৌর এলাকা এবং সব উপজেলা সদর এলাকাভুক্ত সব ধরনের জমি ছাড়া এর বাইরে অবস্থিত কৃষিযোগ্য সব খাসজমিই কৃষি খাসজমি হিসেবে বিবেচিত হবে। যে সব ব্যক্তি ষাট বিঘার কম জমির অধিকারী তারা খাসজমির বন্দোবস্ত পেতে পারে তবে যারা তিন একরের কম জমির অধিকারী এবং সৎ বিশ্বাসে চাষাবাদকারী তারা অগ্রাধিকার পাবে। কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা ১৯৯৭-এ বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে ভ‚মিহীন পরিবারকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ নীতিমালায় ভ‚মিহীন বলতে এরূপ পরিবারকে বোঝাবেÑ (ক) যে পরিবারের বসতবাড়ি ও কৃষি জমি কিছুই নাই কিন্তু পরিবারটি কৃষিনিভর্র। (খ) যে পরিবারের ১০ শতাংশ পযর্ন্ত বসতবাটি আছে কিন্তু কৃষিযোগ্য জমি নেই। ‘কৃষিনিভর্র’ বলতে এরূপ পরিবারকে বোঝাবে যার এক বা একাধিক সদস্য কৃষিশ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে নিয়োজিত আছে কিংবা অন্যের জমি বগার্চাষ করে। এ ছাড়া কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা ১৯৯৭-এ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছেÑ ক) দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার খ) সে সব পরিবার যার সব জমি নদীগভের্ বিলীন হয়ে গেছে গ) দরিদ্র বিধবার পরিবার অথবা এমন মহিলার পরিবার যার স্বামী তাকে ত্যাগ করে গেছে অথবা সে সব দরিদ্র পরিবার যাদের কোনো ধরনের সামথর্্য নেই। ঘ) যে পরিবারের ১০ শতাংশ পযর্ন্ত বসতবাড়ি আছে কিন্তু কৃষিযোগ্য জমি নেই। ঙ) সরকারের অধিগ্রহণের ফলে যে পরিবার তাদের সব জমি হারিয়েছে। কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পযাের্য় মোট তিনটি কমিটি রয়েছে। উপজেলা কমিটি বন্দোবস্তযোগ্য কৃষি খাসজমি শনাক্ত করার ত্রিশ দিনের মধ্যে একটি তালিকা প্রকাশ করে এবং বন্দোবস্তের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। আবেদন প্রক্রিয়া: বিজ্ঞপ্তি প্রচারের ত্রিশ দিনের মধ্যে সদস্য সচিব যেমন সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বরাবর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃর্ক সত্যায়িত দুই কপি ছবি, বতর্মান ও স্থায়ী ঠিকানা ও নাগরিক সনদপত্রসহ আবেদন করতে হবে। অকৃষি খাসজমি : অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা অনুযায়ী দেশের চারটি মেট্রোপলিটন এলাকা, সব পৌর এলাকা এবং সব উপজেলা সদর বতর্মান নীতিমালা অনুযায়ী শহরাঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে। এই সব এলাকাভুক্ত কৃষিযোগ্য খাসজমিও অকৃষি খাসজমি হিসেবে বিবেচিত হবে। এর বাইরে অবস্থিত কৃষিযোগ্য বাদে অন্য সব জমি অকৃষি খাসজমি হিসেবে বিবেচিত হবে। ভ‚মি সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এ বলা হয়েছে যে গ্রাম এলাকায় রাস্তার জন্য উপযুক্ত অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্তের সময় ক্ষেত্রে ভ‚মিহীন পরিবার অগ্রাধিকার পাবে। তবে প্রতি পরিবার সবোর্চ্চ ৫ কাঠা জমি বরাদ্দ পাবে এবং এ জমি উত্তরাধিকার সূত্র ছাড়া অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।