সদ্য প্রকাশিত তিনটি আইনের বইয়ের পর্যালোচনা

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ব্যারিস্টার শাইখ মাহদী
প্রথম বইটা হচ্ছে 'সংবিধান বিতর্ক-১৯৭২: গণপরিষদের রাষ্ট্রভাবনা'। লিখেছেন ডক্টর আসিফ নজরুল। আসিফ স্যার (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান) সরাসরি শিক্ষক হিসেবে আমাদের পড়িয়েছিলেন তুলনামূলক সাংবিধানিক আইন। এ কারণে এই বইটির প্রতি আমার আগ্রহও ছিল বেশি। এতে মোট অধ্যায় আছে ১১টি, যেখানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে গণপরিষদে আলোচনা বা বিতর্কের নানা দিকের এক নির্মোহ পর্যালোচনা তুলে আনা হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলো আদালতের মাধ্যমে বলবত করা যাবে কিনা, বা রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র কীভাবে বারংবার এসেছিল আলোচনায়, যার সূত্র ধরে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে জাতীয়করণ বনাম ব্যক্তিমালিকানার বিষয়টি কীভাবে কার্যকর করা হবে সেটি নিয়ে আশঙ্কার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, অনুচ্ছেদ ৭০ এবং জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো স্পর্শকাতর বিষয় এবং মৌলিক অধিকার ও বিচার বিভাগ নিয়ে গণপরিষদের চিন্তার সারসংক্ষেপ এখানে উঠে এসেছে। সর্বশেষ অধ্যায়ে আজকের দিনে গণপরিষদ বিতর্কের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক অভিযাত্রার সূচনাপর্ব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী যে কারো জন্য বইটা অবশ্যপাঠ্য। বইটির মৌলিক আলোচনা ১৭১ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ, ' শেষ হইয়াও হইলো না শেষ' ধরনের একটা আক্ষেপ অন্তত আমার রয়ে গেছে। আইনের আজন্ম শিক্ষার্থী হিসেবে স্যারের কাছে প্রত্যাশা তিনি নিশ্চয়ই এই বিষয়ে আরও বিস্তৃত কলেবরে লিখবেন, অন্তত আগামী প্রজন্মের রাষ্ট্রভাবনাকে পথ দেখানোর জন্য। দ্বিতীয় বইটার নাম 'আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য ফান্ডামেন্টালস অব ল্যান্ড ল'জ ইন বাংলাদেশ'। লিখেছেন ব্যারিস্টার নাসের আলম। আমার সীমিত জ্ঞানে ও ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় এ যাবতকালে বাংলাদেশে ভূমি আইনের ওপর যতগুলো কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে, তার মধ্যে বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনার দিক থেকে এই বইটা সেরা বলে মনে হচ্ছে (বিশেষত ভূমি ব্যবস্থাপনার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের পর্যালোচনা)। বইটির সবচেয়ে ইন্টরেস্টিং দিক হচ্ছে, এখানে বেশ কিছু দুর্লভ ম্যাপ আর দলিল-খতিয়ানের কালার ইমেজ, অ্যানোটেশন এবং ডায়াগ্রাম সন্নিবেশ করা আছে- যা আগ্রহী যে কারো জন্য গোল্ডমাইন হিসেবে কাজ করবে। আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে দলিল খতিয়ান বা জমির কাগজপত্র ঠিক মতো চেনা বা দেখে বুঝতে পারা আমার নিজের জন্যই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল- যা এখানে বেশ সহজবোধ্যভাবে দেওয়া আছে। আগ্রহী সবার জন্যই এটা মাস্ট-কালেক্টেবল একটা বই। তৃতীয় বইটার নাম 'বিচারের আদ্যোপান্ত (দেওয়ানি পরিপ্রেক্ষিত)'। লিখেছেন আমার বন্ধু-সহপাঠী ও বিচারক দম্পতি আশফাকুর রহমান এবং মেহেরা মাহাবুব। দেওয়ানি আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার প্রায় সব বিষয় অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ধারাবাহিকভাবে উঠে এসেছে এই কাজটিতে। প্রয়োজনীয় আইন ও মামলার রেফারন্স থাকায় বইয়ের নির্ভরযোগ্যতা বেড়েছে অনেক। বিচার প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি পর্যালোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দেওয়ানি মোকদ্দমা নিয়েও বিশদ আলোচনা থাকায় নতুন আইনজীবীদের জন্য (বিশেষত যারা দেওয়ানি বিষয়ে কাজ করছেন কিংবা করতে আগ্রহী) একটি প্র্যাকটিকাল গাইড হিসেবে কাজ করবে এই বইটি। শাইখ মাহদী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।