প্রেমের বিয়ের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের সম্পর্ক নিয়ে ভারতীয় আদালতের মন্তব্যের বিপরীত আলোচনা

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২৩, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
বিয়েবিচ্ছেদ বেশি ঘটছে প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রেই, পঞ্চায়েত আলো করে বসা জ্যাঠামশাইদের মুখে এমন কথা শুনলে কিঞ্চিৎ বিরক্তি সহযোগে অগ্রাহ্য করা চলে। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত যদি এমন মন্তব্য করে? সে ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখেও গোটাকয়েক প্রশ্ন করা প্রয়োজন। প্রথমত, যে বিয়েবিচ্ছেদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মন্তব্যটি করলেন, বিবাহটি প্রেমের ছিল কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর সেই মামলার ক্ষেত্রে কি অপরিহার্য? বা, আদৌ প্রাসঙ্গিক? যদি তা না হয়, এমন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থাকাই কি উচিত ছিল না? বলাই বাহুল্য যে, দেশের সাধারণ নাগরিকের কাছে পঞ্চায়েত আর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের গুরুত্ব সমান নয়। সেই কারণেই, আদালতের উচ্চারিত প্রতিটি কথার তাৎপর্য এবং অভিঘাত অনেক বেশি। শুধু এই মামলার ক্ষেত্রেই নয়, অথবা এই মন্তব্যটির ক্ষেত্রেই নয়, ভারতীয় গণতন্ত্র আদালতের কাছে সুবিবেচিত বাক্‌সংযম প্রত্যাশা করে। অর্থাৎ, যে কথাটি না বললেও চলে, সে কথা না বলাই বিধেয়। মান্য শীর্ষ আদালত বিবেচনা করে দেখতে পারে, এই মামলাটির ক্ষেত্রে এমন কোনো পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য ছিল কিনা। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক যে, বিচ্ছেদের মামলায় সংশ্লিষ্ট বিয়েটি প্রেমজ কি না, সেই বিবেচনা অত্যন্ত কেন্দ্রীয়। কিন্তু, কোনো একটি বিশেষ মামলার পরিসরে যদি একটি বৃহত্তর পর্যবেক্ষণ উচ্চারিত হয়- যেমন, যত বিয়েবিচ্ছেদ ঘটছে, তার অধিকাংশই ঘটছে প্রেমজ বিবাহের ক্ষেত্রে- তা হলে প্রথম প্রশ্ন ওঠে যে, অন্যান্য ক্ষেত্রে কী ঘটছে অথবা ঘটছে না, তা এই নির্দিষ্ট মামলাটির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কেন? যদি-ই বা প্রাসঙ্গিক হয়, তা হলেও বোঝা প্রয়োজন যে, এহেন তথ্য পাওয়া গেল কোথায়? বিয়েবিচ্ছিন্ন দম্পতির মধ্যে এমন কোনো সমীক্ষা হয়েছে কি- যাতে বিয়েটি প্রেমজ না কি পরিবারের দ্বারা আয়োজিত, সেই পরিসংখ্যান গৃহীত হয়েছে? তেমন কোনো সমীক্ষার সংবাদ গণপরিসরে অমিল। তথ্যটি যদি কোনো বিশেষ সমীক্ষা থেকে পাওয়া যায়, তবে সেই সূত্র উলেস্নখ করা বাঞ্ছনীয় ছিল। আর, যদি তেমন কোনো সমীক্ষা না থাকে, তবে একে 'তথ্য' বলা চলে না- এটি ব্যক্তিবিশেষের অভিমতমাত্র। বিচার ব্যবস্থার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা বজায় রেখেও প্রশ্ন করা প্রয়োজন যে, সে ক্ষেত্রে আদালতের পরিসরে এমন কোনো সার্বিক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই উচিত ছিল না কি? তবে, প্রেমজ বিয়ের সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের একটি 'কো-রিলেশন' থাকা অসম্ভব নয়। সেটি এই কারণে নয় যে, প্রেমজ বিয়ের বিষয়টি গোলমেলে- বরং এই কারণে যে, প্রেমজ বিয়ে একেবারে মূলে রয়েছে নিজের জীবন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটিতেও এই ক্ষমতার প্রয়োজন- যারা বিচ্ছেদ চান, তারা নিজেদের ভাগ্যের হাতে সঁপে না দিয়ে বরং নিজের জীবনের রাশ ধরতে চান। অনুমান করা চলে, বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের 'এজেন্সি' যে ব্যক্তিবিশেষের থাকে, বিচ্ছেদের প্রয়োজন অনুভব করতে পারা এবং সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সচেতনতাও তাদেরই বেশি থাকবে। এই ব্যাখ্যায় উপনীত হওয়ার পরিসর বর্তমান মামলাটিতে আদালতের ছিল না বলেই অনুমান করা চলে। সে ক্ষেত্রে, মন্তব্যটি থেকে বিরত থাকলে অনভিপ্রেত বিতর্ক এড়ানো যেত। সূত্র : আনন্দবাজার অবলম্বনে