শহর এলাকার অকৃষি খাসজমি বিক্রি ও মূল্য নির্ধারণ

যে সব ব্যক্তি খাসজমি আবেদনপত্র গ্রহণ ও বন্দোবস্ত ও বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য দায়িত্বশীল তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের কাছে বিজ্ঞপ্তিটি পৌঁছায় কিংবা এমন সময় বিজ্ঞপ্তিটি সবার কাছে পৌঁছায় যখন হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে না। কিন্তু খাসজমি যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কৃষকদের কাছে বিজ্ঞপ্তিটি পৌঁছায় না।

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আরিফুর রহমান
অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা ১৯৯৫ এর বিধান অনুযায়ী, শহর এলাকার অকৃষি খাসজমি নিলামের মাধ্যমে বিক্রির বিধান রয়েছে। শহর এলাকার অকৃষি খাসজমি নিলামের মাধ্যমে বিক্রির জন্য 'বিভাগীয় শহর এলাকার অকৃষি খাসজমি নিলাম কমিটি' ও 'জেলা শহর ও উপজেলা পৌর এলাকার অকৃষি খাসজমি নিলাম কমিটি' নামে দুটি নিলাম কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিলাম কমিটিকে নিম্নোক্তভাবে নিলাম ডাকের প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য ক্ষমতার্পণ করা হয়েছে এবং কোনো অবস্থাতেই নিম্নোক্ত হারের কমে নিলাম ডাকের প্রস্তাব বিবেচনা না করার জন্য বলা হয়েছে- ক) ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ক্ষেত্রে যে মৌজার জমি নিলাম হবে সেই মৌজার পূর্ববর্তী ১২ মাসের জমি বেচাকেনা দলিলের গড় মূল্যের ৩ গুণ মূল্যের নিম্নের কোনো প্রস্তাব; খ) রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী ও গাজীপুর শহর এলাকার যে মৌজার জমি নিলাম হবে সেই মৌজার পূর্ববর্তী ১২ মাসের জমি বেচাকেনা দলিলের গড় মূল্যের ২ গুণ মূল্যের নিম্নের কোনো প্রস্তাব; গ) উপরে উলেস্নখ নেই এমন জেলা ও উপজেলা, পৌর এলাকার ক্ষেত্রে যে মৌজার জমি নিলাম হবে সেই মৌজার পূর্ববর্তী ১২ মাসের জমি বেচাকেনা দলিলের গড় মূল্যের ১.৫ গুণ মূল্যের নিম্নের কোনো প্রস্তাব; সংস্থার অনুকূলে অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত : সংস্থার অনুকূলে অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্তের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার গঠনতন্ত্র আছে কিনা, কোন কোন সংস্থা কর্তৃক সংস্থাটি নিবন্ধীকৃত, সংস্থার বর্তমান কমিটিতে কারা আছেন ইত্যাদি কাগজপত্র প্রস্তাবের সাথে পাঠাতে হবে। পাহাড় ও পাহাড়ের ঢালু ভূমি বন্দোবস্ত : অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা ১৯৯৫-এর ৩(ধ) অনুচ্ছেদে পাহাড় ও পাহাড়ের ঢালু ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানের ক্ষেত্রে ভূ-প্রকৃতি অর্থাৎ প্রাকৃতিক অবস্থার কোনো রূপান্তর না করার শর্তে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের জন্য বন্দোবস্ত দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমতি সাপেক্ষে ডেপুটি কমিশনার বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে ডেপুটি কমিশনার জমি শনাক্তকরণসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজ সম্পাদন সাপেক্ষে উপরোস্থ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনপত্রটি জমা দেবেন। সমস্যা খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। প্রথমত, কার্যবিধিগত সমস্যা দ্বিতীয়ত, প্রায়োগিক সমস্যা কার্যবিধিগত সমস্যা খাসজমি শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যথাযথভাবে সার্ভে করা হয় না আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সার্ভেই করা হয় না। ভুল শনাক্তকরণের কারণেও নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই সব সমস্যার সুযোগ নিয়ে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অসাধু উপায়ে পুলিশ, তহশিলদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ঘুষ দেয়ার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে তাদের ম্যানেজ করে খাসজমি অবৈধভাবে দখলে রাখে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজ নামে রেকর্ড করে নেয়। প্রায়োগিক সমস্যা যে সব ব্যক্তি খাসজমি আবেদনপত্র গ্রহণ ও বন্দোবস্ত ও বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য দ্বায়িত্বশীল তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের কাছে বিজ্ঞপ্তিটি পৌঁছায় কিংবা এমন সময় বিজ্ঞপ্তিটি সবার কাছে পৌঁছায় যখন হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে না। কিন্তু খাসজমি যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কৃষকদের কাছে বিজ্ঞপ্তিটি পৌঁছায় না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তহশিলদার অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবেদনপত্র প্রদান ও গ্রহণের সময় নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা আদায় করে থাকে। এ ছাড়া যে সব ব্যক্তি অনেক ভূমির মালিক তাদের খাসজমির বন্দোবস্ত দিয়ে থাকে যেহেতু তারা একটি মোটা অংকের টাকা প্রদান করতে পারে। মূলত খাসজমির যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নির্ভর করে খাসজমির শনাক্তকরণের ওপর এবং এক্ষেত্রে ভূমি প্রশাসন যদি নিয়মানুযায়ী কাজ করে এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সহায়তা নেয় তাহলেই খাসজমির সঠিক শনাক্তকরণ সম্ভব। খাসজমির যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত বড় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে যা গ্রামীণ এলাকার দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট সংঘাতের পরিমাণ হ্রাস করতে পারে। খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের নীতিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে যদি সত্যিকার অর্থে ভূমিহীনরা খাসজমির বন্দোবস্ত পায় তাহলে দেশের কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দারিদ্র্য হ্রাস করতে সহায়তা করবে। এবং খাদ্য নিরাপত্তা অবশ্যই দেশের আইনশৃঙ্খলা, সুশাসন ও গণতন্ত্রচর্চার মানোন্নয়নে সহায়তা করবে।