বাংলাদেশে প্রচলিত উত্তরাধিকার আইন

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে তিন শ্রেণির উত্তরাধিকার আছে। যেমন- অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী, দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ। অংশীদাররা সব উত্তরাধিকারীর মধ্যে অগ্রাধিকার পান। অংশীদারদের মধ্যে স্ত্রী অন্যতম। পিতা, মাতা, ছেলে, মেয়ে, স্বামী ও স্ত্রী এরা কেউই উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বাদ যান না। পুত্র, কন্যা, স্বামী, স্ত্রী কিংবা অন্য অংশীদাররা কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন তা নির্ধারিত করা আছে...

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যুবায়ের আহমেদ
কোনো নারী বা পুরুষের মৃতু্যর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে মৃতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের খরচ, দেনা শোধ বা মৃত ব্যক্তি যদি কোনো উইল সম্পাদন করে যান তবে তা হস্তান্তরের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে তার ওপর মৃতের সন্তান সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনের যে অধিকার জন্মায়, তাকে উত্তরাধিকার বলে। বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর, এমনকি আদিবাসীদেরও উত্তরাধিকারসংক্রান্ত বিধি-বিধান আছে। যেমন- মুসলিমদের জন্য আইনটি কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী তৈরি। আবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আইন আলাদা। সময়ে সময়ে কিছু কিছু আইন সংস্কারও করা হয়েছে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে তিন শ্রেণির উত্তরাধিকার আছে। যেমন- অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী, দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ। অংশীদাররা সব উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অগ্রাধিকার পান। অংশীদারদের মধ্যে স্ত্রী অন্যতম। পিতা, মাতা, ছেলে, মেয়ে, স্বামী ও স্ত্রী এরা কেউই উত্তরাধিকার সম্পত্তি হতে বাদ যান না। পুত্র, কন্যা, স্বামী, স্ত্রী কিংবা অন্য অংশীদাররা কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন তা নির্ধারিত করা আছে। হিন্দু আইন অনুযায়ী দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু আছে, মিতক্ষরা ও দায়ভাগ পদ্ধতি। বাংলাদেশে দায়ভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ আইন অনুযায়ী, যারা পিন্ডদানের অধিকারী, তারাই যোগ্য উত্তরাধিকারী। পিন্ডদানের অধিকারীদের তালিকায় থাকা ৫৩ জনের মধ্য পুত্র, পুত্রের পুত্র, পুত্রের পুত্রের পুত্র, স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীর পরে কন্যা আসেন। এই আইনের সংস্কারের দাবি বহুদিনের। আমাদের দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯২৫-এর মাধ্যমে। কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে একই মর্যাদার অধিকারী, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তারা সমান অংশ লাভ করে। তবে মৃত ব্যক্তি যদি সম্পত্তি অন্য কারও নামে উইল করে যান, তাহলে সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে না। বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী হিন্দু আইন অনুযায়ী তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে থাকে। বেশির ভাগ নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রথা অনুযায়ী নারীদের পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পদের মালিকানায় উত্তরাধিকারের কোনো পদ্ধতি নেই। এ কারণে এ নারীরা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী পাস হওয়ার পরও নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা আদৌ কোনো সুফল পাবেন কিনা, তা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় আছে।