খিলজি শাসনকাল

মুসলিম শাসনামলে বাংলার ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

নিলয় তানজিম
বাংলার ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। সময়ের বিবর্তনে ভূমি ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বাংলায় মুসলিম সমাজের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বেশ পুরনো। তবে রাজ শক্তিতে অধিষ্ঠিত হতে যথেষ্ঠ সময় লেগেছে। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার মুহাম্মাদ বিন খিলজির নেতৃত্বে বাংলায় মুসলিম অভিযান পরিচালিত হয় এবং বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম শাসন। খিলজির নেতৃত্বে অবসান হয় সেন বংশের শাসনামল এবং দিলিস্ন সালতানাতের অধীনে প্রবর্তিত হয় নতুন আইনব্যবস্থা। এসময় অত্র অঞ্চল দিলিস্নর সুলতানদের অধীনে পরিচালিত হয় প্রায় দেড়শত বছর। এরপর প্রায় দুইশত বছর শাসন করে স্বাধীন সুলতানরা। এর পর পুরো ভারত সাম্রাজ্য চলে আসে মুঘল শাসনামলের অধীনে। খিলজি কর্তৃক বাংলা বিজয়ের পর সব আইন-কানুন ঢেলে সাজানোর সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের ভূমি আইন ও এর ব্যবস্থাপনায় আনা হয় অভূতপূর্ব পরিবর্তন। ভারতবর্ষ বিজয়ের পর মুসলিম শাসকরা এ দেশের ভূমি কেবল মুসলমানদের ভেতরই ভাগ করে দেননি। তারা এ দেশের স্থানীয় অমুসলিম ভূমি মালিকদের সত্তার আইনগত স্বীকৃতি প্রদান করে এক ধরনের ভূমি করের প্রবর্তন করেন যা 'খেরাজ' নামে পরিচিত। 'খেরাজ' হচ্ছে ভূমি কর যা অমুসলিমদের ওপর ধার্য করা হয়। মূলত আবাদযোগ্য ভূমির ওপর খেরাজ ধার্য করা হয়। মুসলিম অধিবাসীদের ওপর ভূমির জন্য প্রদেয় করকে 'ওশর' বলা হয়। এটি একটি ইসলামী বিধানও বটে। এ জন্য ওরশকে 'জাকাতুল আরদ' বা ভূমির জাকাত হিসেবেও অভিহিত করা হয়। তবে কোনো ওশরী ভূমি যদি কোনো অমুসলিম ক্রয় করত তবে তাকে ওশরের বদলে খেরাজ প্রদান করতে হতো। আবাদযোগ্য জমির জন্য প্রজার নগদ অর্থে ধার্যকৃত ভূমি রাজস্বকে 'ওজিফা খেরাজ' বলা হতো। অবশ্য এ রূপ রাজস্ব পদ্ধতি চালুকরণের মাধ্যমে দেশের শাসকরা ওই জমিগুলোর ওপর থেকে তাদের কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারায়। এর ফলে একজন শাসক উৎপাদিত ফসলের সর্বোচ্চ অর্ধেক পর্যন্ত রাজস্ব হিসেবে দাবি করতে পারতেন। যা চতুর্দশ শতাব্দীর প্রারম্ভে আলাউদ্দিন খিলজির আমলে চেষ্টা করা হয়। সে সময় পতিত জমি যিনি আবাদ করতেন তিনিই সেই জমির মালিক হিসেবে গণ্য হতেন। তবে তাকে ওশর বা খেরাজ দিতে হতো। সে সময় রাজস্ব নির্ধারণের জন্য পাটওয়ারি কানুনগো প্রভৃতি স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের নিযুক্ত করতেন। তারা শস্য নিরীক্ষণ করে জমির সম্ভাব্য উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা করতে পারতেন। সাধারণ অনুমানের ভিত্তিতে ফসলের পরিমাণ নির্ধারণ করা হতো। শস্যের রাজস্ব নির্ধারণ করে প্রচলিত বাজার দরে খাজনা নগদ অর্থে ধার্য করা হতো। তখন ভূমি জরিপের ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণ করার প্রমাণ পাওয়া যায় না।