জে নে নি ন

ব্রিটেনের স্কুলে মারধর যেভাবে বন্ধ হলো

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইউরোপের মানবাধিকার আদালত ১৯৮২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে এক ঐতিহাসিক রায় দেয়। এই রায়ে ব্রিটেনের সব সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের মারধর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। স্কটল্যান্ডের দুই ছাত্রের মা আদালতে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। এই দুই ছাত্রের একজন হলেন অ্যান্ড্রু ক্যাম্বেল। তার মতোই হাজার হাজার ছাত্র যারা স্কটিশ স্কুলগুলো থেকে পাস করে বেরিয়েছেন, তাদের প্রায় সবার গায়েই ছিল বেত্রাঘাতের চিহ্ন। আর স্কটল্যান্ডে এই কাজটি করা হতো 'টওজ' নামের চামড়ার বেল্ট দিয়ে। এই বেল্টের প্রান্তটি দুই বা তিন ভাগে বিভক্ত থাকত। ফলে এই বেল্ট যখন শিক্ষার্থীদের দেহে আঘাত করত তখন সেটা চামড়ায় বসে যেত, কিন্তু চামড়া কেটে যেত না। ১৯৮০-র দশকের এক জরিপে জানা যায়, প্রতি তিনজন ছাত্রের মধ্যে একজন এবং প্রতি ১২ জন ছাত্রীর মধ্যে একজন স্কুলে পিটুনির শিকার হয়েছে এবং জনপ্রতি গড়ে ১৪ দিন ধরে তারা শিক্ষকের মার সহ্য করেছে। ব্রিটেনে ১৯৭০ সালের সময়টাতে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তিদান করা বৈধ ছিল। কিন্তু ইউরোপের স্কুলগুলোতে এটা তখন অবৈধ। অ্যান্ড্রু ক্যাম্বেলের অভিভাবক উকিলের পরামর্শ নেয়ার পর তারা বুঝতে পারলেন যে ব্রিটেনের আইনব্যবস্থায় এর কোনো সুরাহা হবে না। তাই তারা ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপর ১৯৭৬ সালে গ্রেস ক্যাম্বেল, অ্যান্ড্রু ক্যাম্বেলের মা, এবং আরেকজন স্কটিশ ছাত্রের মা জেন কোস্যান্স ওই আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলা চলার সময় ক্যাম্বেল পরিবার নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হন। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ১৯৮২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে মানবাধিকার আদালত তার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, পিতামাতার সায় ছাড়া কোনো শিশুকে প্রহার করা মানবাধিকার সনদের লঙ্ঘন। কিন্তু ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের ওই রায়ের পরও স্কটল্যান্ডের সব স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করতে আরও আট বছর লেগে যায়। যে বছর আদালতের রায় হয় সেই বছরই গ্রেস ক্যাম্বেলের স্ট্রোক হয়। সাত বছর ভুগে ১৯৮৯ সালে তিনি মারা যান। তখন তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর।