রিভোনিয়া ট্রায়াল

যে মামলা ম্যান্ডেলাকে নিয়েছিল রোবেন দ্বীপে

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
আদালতের কাঠগড়ায় ভাষণরত ম্যান্ডেলা
১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট ম্যান্ডেলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬১ সালে শ্রমিক ধমর্ঘটে নেতৃত্ব দেয়া এবং বেআইনিভাবে দেশের বাইরে যাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় এবং ১৯৬২ সালের ২৫ অক্টোবর ম্যান্ডেলাকে এই অভিযোগে ৫ বছরের কারাদÐ দেয়া হয়। কারাগারে বন্দি থাকার সময়ে পুলিশ এএনসির প্রথম সারির নেতাদের ১৯৬৩ সালের ১১ জুলাই গ্রেপ্তার করে। ‘রিভোনিয়া ট্রায়াল’ (ক্রিমিনাল কোটর্ কেইস নাম্বার ২৫৩/১৯৬৩, স্টেট ভাসার্স নেলসন ম্যান্ডেলা অ্যান্ড আদারস) নামে খ্যাত এ মামলায় ম্যান্ডেলাকেও অভিযুক্ত করা হয়। ম্যান্ডেলাসহ এএনসির নেতাদের অন্তঘাের্তর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া বিস্ফোরকের ব্যবহার ও গেরিলা যুদ্ধের উদ্দেশে দলে লোক ভিড়ানো, বিদেশি বাহিনীকে দক্ষিণ আফ্রিকায় হামলায় সহায়তার ষড়যন্ত্র, কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য, এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আলজেরিয়া, ইথিওপিয়া, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, তিউনিসিয়া থেকে অথর্ সহায়তা নেয়া এবং সবোর্পরি দেশদ্রোহিতার অভিযোগও আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। ১৯৬৩ সালের ২৬ নভেম্বর বিচারকাজ শুরু হলে ম্যান্ডেলা অন্তঘাের্তর অভিযোগ স্বীকার করে নেন। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রের দালাল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য আনা দেশদ্রোহিতার অভিযোগটি ম্যান্ডেলা অস্বীকার করেন। প্রিটোরিয়ার সুপ্রিমকোটের্ আসামির কাঠগড়ায় দঁাড়িয়ে ম্যান্ডেলা ১৯৬৪ সালের ২০ এপ্রিল তারিখে তার জবানবন্দি দেন। ম্যান্ডেলা বলেন, বহু বছর ধরে এএনসি অহিংস আন্দোলন চালিয়ে এসেছিল। কিন্তু শাপির্ভলের গণহত্যার পর তারা অহিংস আন্দোলনের পথ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই গণহত্যা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারকে অবজ্ঞা করে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র ঘোষণা দেয়া, জরুরি অবস্থার ঘোষণা এবং এএনসিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে ম্যান্ডেলা ও তার সহযোদ্ধারা অন্তঘার্তমূলক সশস্ত্র সংগ্রামকেই বেছে নেন। তাদের মতে সশস্ত্র আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো কিছুই হতো বিনাশতের্ আত্মসমপের্ণর নামান্তর। ম্যান্ডেলা আদালতে আরো বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল অন্তঘাের্তর মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা আর এর মাধ্যমে বণর্বাদী ন্যাশনাল পাটির্র সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। জবানবন্দির শেষে ম্যান্ডেলা বলেন, ‘আমার পুরো জীবনজুড়ে আমি আফ্রিকান জনগণের জন্য সংগ্রাম করেছি। আমি সাদাদের কতৃের্ত্বর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, লড়াই করেছি কালোদের কতৃের্ত্বর বিরুদ্ধেও। আমি একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছি, যেখানে সব মানুষ মিলেমিশে সমান অধিকার নিয়ে একত্রে বাস করবে। এই আদশের্র মধ্যেই আমি বঁাচতে চেয়েছি এবং এটাই অজর্ন করতে চেয়েছি। যদি প্রয়োজন হয় এ আদশের্র জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।’ ম্যান্ডেলার পক্ষে র‌্যাম ফিশার, ভানর্ন বেরাঞ্জ, হ্যারি শোয়াজর্, জোয়েল জফ, আথার্র চাসকালসন, এবং জজর্ বিজোস ওকালতি করেন। মামলার শেষভাগে হ্যারল্ড হ্যানসন আইনি সহায়তার জন্য যোগ দেন। কিন্তু মামলায় একজন ছাড়া অন্য সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের সাজা হিসেবে মৃত্যুদÐ চাওয়া হয়েছিল। তবে ১৯৬৪ সালের ১২ জুন দেয়া রায়ে ফঁাসির পরিবতের্ তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদÐ দেয়া হয়। এ বিচারে সবমিলিয়ে তিনি ২৭ বছর ৮ মাস কারাভোগ করেন; যার ১৮ বছর কাটে রোবেন দ্বীপে। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি প্রেসিডেন্ট এফ ডাবিøউ ডি ক্লাকের্র শাসনামলে তিনি মুক্তি পান।