শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জার্মানি

স্বেচ্ছামৃতু্যতে সহায়তার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আদালত

নতুনধারা
  ১৪ মে ২০১৯, ০০:০০

মৃতু্যপথযাত্রী রোগীরা স্বেচ্ছায় জীবনাবসান ঘটাতে চাইলে ডাক্তার সহযোগিতা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে জার্মানির উচ্চ আদালত। দেশটির বিদ্যমান আইন নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি শুনানি শুরু হচ্ছে আদালতে।

স্বেচ্ছায় মৃতু্যবরণ করতে চাওয়া রোগীদের ডাক্তাররা সহযোগিতা দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে বিতর্ক চলছে জার্মানিতে। সে বছর দেশটির সংসদ এ বিষয়ক একটি আইন পাস করে। আইনটির মাধ্যমে মৃতু্য ঘটাতে পারে এমন ওষুধের পরামর্শ দেয়া বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

২০১৭ সালের একটি রায়ে শুধু শেষ অবস্থায় থাকা রোগীদের স্বেচ্ছামৃতু্যতে সহযোগিতা দেয়ার আদেশ দেয় ফেডারেল আদালত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই রায়ের যথাযথ প্রয়োগ না করায় রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়।

জার্মানিতে ১৯৯৬ সাল থেকেই অবশ্য স্বেচ্ছায় মৃতু্যবরণে পরোক্ষ সহযোগিতা দেয়ার বৈধতা রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, মৃতু্যপথযাত্রী রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করতে পারবেন, যা হয়তো পরে তার জীবনাবসান ঘটাতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে রোগী যেই ডাক্তারের অধীনে থাকবেন, তাকে আইনি বা পেশাগত জবাবদিহিতার মুখোমুখিও হতে হবে।

রোগীদের স্বেচ্ছামৃতু্যতে আরেকটি আইন পাস হয় ২০০৯ সালে। সেখানে চিকিৎসার ব্যাপারে রোগীদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নেয়ার অধিকার দেয়া হয়। সে অনুযায়ী কোনো রোগী চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, যা হয়তো পরে তাকে মৃতু্যর পথে ঠেলে দিতে পারে। এটি মূলত রোগীকে 'লাইফ সাপোর্ট' দেয়া বা কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে আসছিল।

তবে জার্মানিতে সরাসরি 'আত্মহত্যা'য় সহযোগিতা দেয়া বেআইনি। ২০১৫ সালের আইনে জীবনাবসান হতে পারে, এমন ওষুধের পরামর্শ দেয়া এবং বিক্রিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কোনো ডাক্তার, সংগঠন বা ব্যক্তি তা অমান্য করলে তার ৫ বছর পর্যন্ত কারদন্ড হতে পারে। আইনটি নিয়েই দেশটির আদালতে শুনানি শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে রোগীদের ব্যক্তিস্বাধীনতার বরখেলাপ হয় কিনা এবং ডাক্তাররা অন্যায্য শাস্তিভোগ করতে পারেন কিনা, তা নিয়ে আদালতে মৌখিক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি শেষে রায় আসতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসও লাগতে পারে।

বিতর্ক যে কারণে

কয়েক বছর আগে চরম অসুস্থ এক জার্মান নারী নিজের জীবনাবসান ঘটাতে সুইজারল্যান্ড পাড়ি জমিয়েছিলেন। প্রাণঘাতী 'সোডিয়াম ফেনোবারবিটাল'-এর ডোজ দেয়ার জন্য তার স্বামী আবেদন করলেও জার্মান কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে। এর ভিত্তিতে ২০১৭ সালে লাইপসিশের ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট একটি রায় দেয়। সেখানে বলা হয়, চরম পরিস্থিতিতে সরকার রোগীদের প্রাণঘাতী ওষুধ দেয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না।

'কীভাবে এবং কখন নিজের জীবন শেষ হওয়া উচিত একজন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে।' এমন নির্দেশনা দিয়ে আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, 'জার্মানিতে এই অধিকারের প্রয়োগ করতে হবে এবং রোগী স্বাধীনভাবে তার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।'

কিন্তু চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট দলের অধীনে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আদালতের এই রায় বাস্তবায়ন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশটির সংবাদপত্র টাগেস্পিগেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১২৩ জন মৃতু্যপথপাত্রী রোগী জীবনবিনাশী ওষুধের আবেদন করেছিলেন, যার একটিও মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেনি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান গত ফেব্রম্নয়ারিতে দৈনিক ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুংকে বলেন, 'এর মানে হলো, সরকারি চাকরিজীবী বা আমার মতো একজন মন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারের সহযোগিতায় কে মারা যেতে পারবে, কে পারবে না। এটা কেউই চাইবে না। আর ব্যক্তিগতভাবে এটি আমার জন্য একটি উদ্ভট ব্যাপার।'

ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<49299 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1