নিষেধাজ্ঞা ও ১৪৪ ধারা জারির প্রেক্ষাপট

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৬ ও ৩৭ অনুচ্ছেদে মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, এর যে কোনো স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে- যা সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে। অন্যদিকে সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। সংবিধানে এসব কিছু বলা সত্ত্বেও গণ-উপদ্রব নিবারণকল্পে বা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ম্যাজিস্ট্রেটকে কিছু নির্দেশ দেয়ার অধিকার দিয়েছে। এগুলো মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি নয়, বরং মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের সহায়ক। ম্যাজিস্ট্রেট যখন বুঝতে পারেন যে, গণ-উপদ্রব গুরুতর আকার ধারণ করতে যাচ্ছে অথবা এমন মারামারি বা দাঙ্গা বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, সে অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারা জারি করতে পারেন। অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারার মামলা শুধু স্থাবর সম্পত্তিসংক্রান্ত ব্যাপারে বিরোধের ফলে উদ্ভুত শান্তি ভঙ্গের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। স্থাবর সম্পত্তি দখল এবং বেদখলের কারণে ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। দখল ও বেদখলকে কেন্দ্র করে শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি এমনকি রক্তারক্তি, খুন, জখমের সম্ভাবনা থাকে। এসব থেকে রক্ষা পেতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের করা যায়। ২০০৭ সালে মাসদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর থেকে ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের ও বিচারের কর্মকান্ড নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তবে ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করতে হলে অবৈধভাবে বেদখল হওয়ার ২ মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে, বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকতে হবে, শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি আশঙ্কা থাকতে হবে, মারামারি, ঝগড়া বিবাদ, রক্তারক্তির আশঙ্কা বিদ্যমান থাকতে হবে, সেই সঙ্গে নিরঙ্কুশ মালিকানা স্বত্ব বিদ্যমান থাকতে হবে। তবে মনে রাখা উচিত যে দীর্ঘদিন বেদখলে থাকলে এবং সম্পত্তি দখলে না থাকলে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার মামলা করা যায় না। সে ক্ষেত্রে ডিক্লারেশন সু্যট করে টাইটেল প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। রহিম মিয়া একটি বড় পুকুরের মালিক। সেখানে ভালো মাছ চাষ হয়। তার প্রতিবেশী লোকজনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই পুকুরের মাছের ওপর। একদিন লোকবলে বলীয়ান হয়ে জোরপূর্বক পুকুরে মাছ ধরতে আসে। রহিম মিয়া বাধা দিলে তারা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চলে যায়। তারা জনবলে বলীয়ান। যে কোনো মুহূর্তে তারা জোরপূর্বক পুকুরের মাছ ধরতে পারে। রহিম মিয়া বাঁধা দিলে রক্তারক্তি হবে। এ ক্ষেত্রে রহিম মিয়া ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারা মতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে পারে। কোন অবস্থায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে তা ৩৩ ডিএলআরের মজিবুর রহমান বনাম সিরাজউদ্দিন ব্যাপারী মামলায় আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ওই মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, 'বাদী যদি তার দাবির পক্ষে ন্যায্য এবং যুক্তিপূর্ণ মামলা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নালিশি বিষয়বস্তুর সংরক্ষণ, নালিশি বিষয়বস্তুতে কোনো পক্ষের স্বত্ব আছে কিনা তা নির্ণয়ের উদ্দেশ্য নয়। বরং নালিশি বিষয়বস্তুর সংরক্ষণই মূল উদ্দেশ্য।