বে ল জি য়া ম

অচেতন না করে পশু কোরবানি করা যাবে না

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে
অচেতন না করে পশু কোরবানি করা যাবে না, এমন আইনের জন্য ইউরোপের আদালতে যাচ্ছে বেলজিয়াম। এর প্রতিবাদ করেছেন ইহুদি ও মুসলিমরা। বেলজিয়ামের ওয়ালোনিয়া অঞ্চলে ১ সেপ্টেম্বর থেকে অচেতন না করে পশু কোরবানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চলেও এ বছরের প্রথম দিন থেকে এ আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে অনেক মুসলিম ও ইহুদি মনে করছেন, তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সেখানে কোরবানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় ইহুদিদের প্রতিবাদের মুখে ডাচ ভাষাভাষী ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চলে নেয়া সিদ্ধান্তটি এরই মধ্যে গড়িয়েছে ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসে (ইসিজে)। বেলজিয়ামের সাংবিধানিক আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ইসিজের শরণাপন্ন হয়েছে। শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত হতে সর্বোচ্চ দুই বছর লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সিদ্ধান্ত যেদিকেই যাক, তা ইউরোপের অন্য দেশগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সাধারণভাবে পশু হত্যা করতে হলে তাকে আগে 'অ্যানেস্থেসিয়া' দিতে হবে। তবে ধর্মীয় কারণে জার্মানিসহ বেশিরভাগ দেশই এর ব্যতিক্রমের সুযোগ রেখেছে। নরওয়ে, আইসল্যান্ড, স্স্নোভেনিয়া, ডেনমার্ক ও সুইডেন বিষয়টি আগেই নিষিদ্ধ করেছে। এবার বেলজিয়াম সেখানে যুক্ত হলো। ধর্ম পালনের স্বাধীনতা বনাম প্রাণী অধিকার জার্মানিতে ইহুদিদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য এমন আইন ধর্ম পালনের স্বাধীনতা খর্ব করছে। 'অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করার নীতিমালা যা এবার ওয়ালোনিয়াতেও কার্যকর হতে যাচ্ছে, এসবই হলো ইউরোপে ধর্মের স্বাধীনতা খর্ব করার পাঁয়তারা,' জার্মানির বার্তা সংস্থা ডিপিএকে বলে কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ইয়োসেফ শুস্টার। শুস্টার আশা করেন যে ইসিজে বিষয়টি ঠিকমতো বিবেচনা করবে এবং আইনটি বাতিল করবে। তবে বিষয়টির বিরোধিতা করেন প্রাণী অধিকার সংরক্ষণকারীরা। বেলজিয়ামের প্রাণী অধিকার সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন গায়া। এর প্রধান মিখেল ফানডেনবোশ বলেন, 'আমরা কোনো ধর্মীয় রীতির বিরোধী নই। শুধু বলছি, কোরবানির আগে অচেতন করে নিতে।'মুসলিমদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি আছে। নিউইয়র্কভিত্তিক ভাইস নিউজের এক খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের দুই প্রধান হালাল সনদপ্রদানকারী পস্নাটফর্ম হালাল ফুড অথরিটি ও হালাল মনিটরিং কমিটি ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছে। হালাল ফুড অথরিটি বলছে, অচেতন করার পর যদি প্রাণী জীবিত থাকে, তাহলে এই কোরবানিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু হালাল মনিটরিং কমিটি কোনোভাবেই অচেতন করার পক্ষে নয়। জার্মানির ফেডারেল নিউট্রিশন সেন্টারের মতে, জীববিজ্ঞানের নিয়মানুসারে, 'আগে অচেতন করে নিলে প্রাণীর মৃতু্যভয় কমে যায় এবং রক্তপাতের সময় ব্যথা কম লাগে।' পেছনে অভিবাসন বিরোধিতা? সমালোচনাকারীরা আরও বলছেন, বেলজিয়ামে এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে দেশটির রাজনীতিতে অতিডানপন্থি ফ্লেমিশ জাতীয়তাবাদীদের বাড়তে থাকা প্রভাব। তারা অভিবাসনবিরোধী। অতিডানপন্থি। গেল নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৬% ভোট পেয়ে বেলজিয়ামের সংসদে ২৫টি আসন দখল করেছে দক্ষিণপন্থি নিউ ফ্লেমিশ অ্যালায়েন্স। রাজনীতিতে তাই এদের প্রভাবও বেড়েছে।