কয়েদি নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আদনান ওয়াসিম
কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৬ সালে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০০৬ সালের ১১ অক্টোবর আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। আইনটির পুরো নাম, কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা আইন, ২০০৬। এই আইনের ২(খ) ধারা মতে 'কয়েদি' অর্থ যে কোনো অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নারী। আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ধারা ৩-এর অধীনে সাজাপ্রাপ্ত নারীদের চার ধরনের বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে- (ক) কোনো কয়েদির শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি; (খ) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ যেমন- বস্নক বা বাটিক, সূচি শিল্প, হেয়ার কাটিং, বাঁশ ও বেতের কাজ, দর্জি বিজ্ঞান, কাপড়ের ফুল তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান; (গ) কারাগারের অভ্যন্তরে থাকাকালে বিভিন্ন ট্রেড কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েদিকে কারাদন্ড ভোগের পর সমাজে সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক আফটার কেয়ার সার্ভিস প্রদান; এবং (ঘ) সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিশেষ সুবিধা হিসাবে ঘোষিত অন্য যে কোনো সুবিধা। ধারা ৪-এর বিধান মোতাবেক এই আইনের অধীন ১ (এক) বছরের অধিক যে কোনো মেয়াদে কারাদন্ডপ্রাপ্ত কোনো কয়েদি রেয়াতসহ শতকরা ৫০% কারাদন্ড ভোগের পর বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবে। ধারা ৫ অনুযায়ী, চার ধরনের কয়েদি এই আইনের অধীনে বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তির অযোগ্য হবে- (ক) মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত কয়েদি; (খ) যে কোনো অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত কয়েদি; (গ) রাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দন্ডিত কয়েদি; (ঘ) বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, অস্ত্র আইন এবং মাদ্রকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট যে কোনো আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে দন্ডিত কয়েদি। বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কয়েদির জন্য প্রযোজ্য শর্তাবলির ক্ষেত্রে ধারা ১৪ বলছে, কোনো কয়েদিকে এই আইনের অধীন বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হলে, তাকে তফসিলে উলিস্নখিত 'ছক' অনুযায়ী একটি মুচলেকা কারাগার কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে হবে। এবং বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য যে শর্ত নির্ধারণ করা হবে তা মুচলেকাতে উলেস্নখ থাকবে এবং বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কয়েদি উক্ত শর্ত মেনে চলতে বাধ্য থাকবে। কয়েদি প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধা বাতিল হতে পারে ধারা ১৫ অনুযায়ী। সেখানে বলা আছে, এই আইনের ধারা ১৪-এর অধীন প্রদত্ত কোনো শর্ত কোনো কয়েদি লঙ্ঘন করলে প্রবেশন অফিসার উক্ত শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতীয় কমিটি বা ক্ষেত্রমত, জেলা কমিটির নিকট বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এরপর কমিটি প্রতিবেদন বিবেচনাপূর্বক উক্ত কয়েদিকে ব্যক্তিগতভাবে শুনানির সুযোগ প্রদান করে ক্ষেত্রমত, প্রদত্ত বিশেষ সুবিধা বাতিল করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকট সুপারিশ পাঠাবে। আর প্রেরিত সুপারিশ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রদত্ত বিশেষ সুবিধা বাতিলসংক্রান্ত প্রশাসনিক আদেশ জারী করবে। আইনের বিধান অনুযায়ী, এভাবে বিশেষ সুবিধা একবার বাতিল করা হলে কোনো কয়েদি পুনরায় বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন না।