জেনে নিন

জার্মানিতে লুকিয়ে স্কার্টের নিচের ছবি তোলা অপরাধ নয়

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
ইউরোপের বেশকিছু দেশের মতো জার্মানিতেও আইনের ফাঁক গলে এই অপকর্ম করে চলেছেন কিছু ব্যক্তি। ফলে লুকিয়ে মেয়েদের স্কার্টের নিচের ছবি তুললেও তাদের শাস্তি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুই নারী এর বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। এর আগে মাদ্রিদে ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাড়ে ৫০০ নারীর 'আপস্কার্ট' ছবি তোলার অভিযোগ উঠেছিল। গত বছর আপস্কার্টিংকে আইনের আওতায় আনার জন্য ব্রিটিশ সংসদে তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর নতুন আইন পাস হয়। কিন্তু তারপরও এখনো জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না। জার্মানির দুই নারী- ২৫ বছরের ইডা মারি সাসেনব্যার্গ এবং ২৮ বছর বয়সী হান্না সাইডেল- সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চান। সংবাদ মাধ্যমকে সাইডেল বলেন, 'আপস্কার্টিংয়ের সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হলো আপনি জানতেও পারবেন না যে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেছে। আপনি হয়তো চলন্ত সিঁড়িতে, সুপারমার্কেটে, মেট্রোতে বা কনসার্টে দাঁড়িয়ে আছেন, এমন সময় কেউ একজন ছবি তুলে ফেলল। এই ছবিগুলো কী কাজে ব্যবহার করা হবে, তাও আপনি জানেন না। হয়তো কোনো পর্ন সাইটে তা আপলোড করা হবে।' সাইডেল নিজেই প্রথম এমন ঘটনার শিকার হন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। অন্য এক স্কুলের শিক্ষক একটি শিক্ষাসফরের সময় তার আপস্কার্ট ছবি তোলেন। ১৬ বছর বয়সে এক অপরিচিত ব্যক্তি তার আপস্কার্ট ছবি তুলে ভিড়ের মধ্যে পালিয়ে যান। এসব ঘটনা তার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। জার্মান আইনের ফাঁক দুই নারীর করা পিটিশনের ফলে এ নিয়ে বড় ধরনের আইনি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আইনজীবী ক্রিস্টিয়ান সলমেকে বলছেন, জার্মান দন্ডবিধির ১৮৪-আইন অনুচ্ছেদ অনুসারে যৌন হয়রানির বিচারের কথা বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদটি অপেক্ষাকৃত নতুন। ২০১৬ সালে জার্মানির কোলন শহরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এক রাতে শত শত যৌন হয়রানির ঘটনার পর দন্ডবিধি সংশোধন করে এ অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়। কিন্তু এই আইনেও ফাঁক রয়েছে। এর মাধ্যমে কেবল কেউ শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করলেই বিচার করা সম্ভব। আপস্কার্টিং ঠিক এই সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। ২০১৪ সালে আরেকটি সংশোধন হয়েছিল। সেখানে স্পর্শকাতর অঙ্গের ছবি তোলা ও বিতরণের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়। কিন্তু সেটা শুধু টয়লেট বা বেডরুমের মতো একান্ত ব্যক্তিগত স্থানের জন্য প্রযোজ্য। ফলে প্রকাশ্যে উন্মুক্ত স্থানে কেউ এমন ছবি তুললে, এই আইনেও তাকে সাজা দেয়া অসম্ভব। সলমেকে জার্মানির স্ট্যার্ন টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাভারিয়া রাজ্যের ছোট এক শহরের মেয়রের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি মেয়র থাকাকালেই চলন্ত সিঁড়িতে মেয়েদের আপস্কার্ট ছবি তুলতেন। পরবর্তীতে তার কাছে থাকা এমন শতাধিক ছবি উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু শাস্তি হিসেবে 'জনগণকে বিরক্ত' করার অপরাধে তার কেবল ৭৫০ ইউরো জরিমানা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মতো কিছু দেশে আপস্কার্টিংয়ের বিরুদ্ধে কড়া আইন রয়েছে। এক অনলাইন পিটিশনের ফলে এ বছরের শুরুতে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসও আইনে পরিবর্তন আনে। ফলে আপস্কার্টিংয়ের সাজা হতে পারে দুই বছরের কারাদন্ড। মূলত ইংল্যান্ডের ঘটনাটিই নাড়া দিয়েছে সাসেনব্যার্গ ও সাইডেলকে। তারাও ইংল্যান্ডের ২৭ বছর বয়সী জিনা মার্টিনের আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে জার্মানিতে একটি পিটিশন শুরু করেছেন। এরই মধ্যে তাদের পিটিশনে প্রায় ৯০ হাজার ব্যক্তি স্বাক্ষরও করেছেন। 'অবস্থার পরিবর্তনে আরও বেশি জনগণকে আমাদের পাশে দরকার', বলছিলেন সাসেনব্যার্গ ও সাইডেল। ইন্টারনেট অবলম্বনে