গ্রন্থ পর্যালোচনা

অর্থঋণের ক, খ থেকে শুরু

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

জহিরুল ইসলাম মুসা
ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মামলা করতে হয় বিশেষ আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অর্থঋণ আদালতে। এসংক্রান্ত বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত আইনের নাম অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩। এ আইনের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অর্থঋণ আদালত। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সমপর্যায়ের একজন বিচারক অর্থঋণ আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অর্থঋণসংক্রান্ত আইন-আদালত নিয়ে বই লিখেছেন শেখ মো. মুজাহিদ উল ইসলাম। যিনি পেশায় একজন বিচারক। বিগত কয়েক বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন ঢাকার অর্থঋণ আদালত-৩ এ। দীর্ঘদিন ধরে যিনি অর্থঋণ আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি স্বাভাবিকভাবেই এই আইনের নানান খুটিনাটি বিষয় ও কারিগরি দিক সম্পর্কে সম্যক অবগত। বইটি তিনি লিখেছেন একেবারেই সহজ ভাষায়। বইয়ের নাম থেকেই যার আভাস সুস্পষ্ট। নাম রেখেছেন তিনি 'অর্থঋণের ক, খ'। মূলত বইটি শুরু হয়েছে অর্থঋণের মৌলিক আলোচনা দিয়ে। ইতোপূর্বে অর্থঋণসংক্রান্ত আইন-আদালত নিয়ে পড়েননি এমন কারও এই বই দিয়ে হাতেখড়ি হলেও কোনো জটিলতা নেই। সেই হিসেবে শুরুতেই বইটির নামের সার্থকতা পাওয়া যায়। আবার একেবারে ক, খ থেকে শুরু হলেও আলোচনার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়নি কোথাও। ধীরে ধীরে সুগঠিত কাঠামোতে বর্ণনা এগিয়েছে। আলোচনার বড় বৈশিষ্ট্য ছিল সহজবোধ্যতা। বইটির কাঠামো গতানুগতিকতা থেকে ভিন্নতর। কোনো অধ্যায়ে গোটা বইকে ভাগ করা হয়নি। তবে মোট সাইত্রিশটি শিরোনামের আলোকে সুবিন্যস্ত আলোচনা করা হয়েছে। যাতে অর্থঋণ আদালত আইন, মামলার প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে এমন সব বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা অর্থঋণ আইন-আদালত সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের জানা আবশ্যক। সহজপাঠ্য ভাষায় বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে ঋণ আদায়ের জন্য মামলা দায়েরের আগের প্রস্তুতি ও চেকলিস্ট। এরপর মামলা দায়ের থেকে শুরু করে রায় প্রদানের আলোচনায় স্থান পেয়েছে মামলার প্রতিটি ধাপ এবং পক্ষগণের পদক্ষেপের আলোকে অথবা ব্যর্থতায় মামলার গতিপ্রকৃতি। সেখানে মামলা দায়েরের পর মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির আলোচনা যেমন রয়েছে, তেমনি স্থান পেয়েছে একতরফা অথবা স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণভাবে মামলার ফলাফলের দিকে অগ্রগতির সাবলীল আলোচনা। বাদ যায়নি একতরফাসূত্রে ফলাফলকৃত মামলার প্রতিকারে মিস মামলা দায়ের করাসহ আপিল ও রিভিশনের বিধানের আলোচনা। এসব কিছুই বইটিতে সবিস্তারে উপস্থাপিত হয়েছে। অর্থঋণ মামলায় রায় ও ডিক্রি লাভের পরও ডিক্রিকৃত টাকা আদায় না হলে দায়ের করতে হয় অর্থ জারী মামলা। অর্থ জারী মামলার গতিপথ নিয়ে বইটিতে রয়েছে আলোচনা। গৃহীত ঋণের বিপরীতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট কোনো সম্পত্তি বন্ধক দেয়া থাকলে জারী মামলায় এসে আদালতের মাধ্যমে নিলামে বিক্রির চেষ্টা করতে হয়। নিলামের যাবতীয় প্রক্রিয়াসহ বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে বইটিতে। রয়েছে ডিক্রিদার বরাবরে বন্ধককৃত সম্পত্তি ভোগ দখলের সনদ এবং সম্পত্তির মালিকানার সনদ ইসু্যর আলোচনা ও দখল অর্পণের প্রক্রিয়ার বর্ণনা। বন্ধকী সম্পত্তি ছাড়া জারী মামলা দায়ের ও গতিপ্রকৃতি, দায়িকের বিরুদ্ধে দেওয়ানী আটকাদেশ প্রদানসহ বইটিতে স্থান পেয়েছে জারী মামলার পর্যায়ে এসে মিস কেস দায়ের ও নিষ্পত্তির আলোচনা। অর্থঋণ আদালত আইন প্রণয়নের অন্যতম মৌলিক উদ্দেশ্য হলো খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আইনি প্রক্রিয়া দ্রম্নততার সঙ্গে সম্পন্ন করে ঋণ আদায়ের গতিকে ত্বরান্বিত করা। বিশেষ আইন প্রণয়নের পরেও অর্থঋণ মামলার নিষ্পত্তিতে বিলম্ব করতে অনেক সময় আইনের বিধানের মধ্যেও নানান কৌশল অবলম্বন করে থাকেন বিবাদীপক্ষ। লেখক বইটির ছত্রিশ ও সাইত্রিশ নম্বর শিরোনামের অধীনে অর্থঋণ মামলা বিলম্বিত করার উপায় এবং করণীয় নিয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন। এই আলোচনা নিঃসন্দেহে বইটিকে অনন্য করে তুলেছে। এছাড়া বইটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে অর্থঋণ মামলার আরজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপের গুরুত্বপূর্ণ আবেদনের নমুনা, সম্পত্তির দখলভোগ ও মালিকানার সনদের নমুনাসহ রায়ের নমুনা। আর সংযুক্তি ১৬ হিসাবে জায়গা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত 'প্রম্নডেনসিয়াল রেগুলেশনস ফর কনজিউমার ফাইন্যান্সিং'। এসব সংযুক্তি বইটির কলেবর বৃদ্ধি ও সুন্দর কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করেছে। বইটি সর্বশ্রেণির পাঠকদের অর্থঋণ আইনের মৌলিক জ্ঞান সঞ্চারণের জন্য খুব উপযোগী। বিশেষ করে আইনজীবী, বিচারক, আইন গবেষক, আইনের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, অর্থঋণ মামলার পক্ষগণ, আদালত কর্মচারী এবং অর্থঋণসংক্রান্ত অন্যান্য অংশীজনের জন্য বইটি দারুণ সহায়ক হবে। ভাষাগত সহজবোধ্যতা, আলোচনার ধারাবাহিকতা এবং সাবলীল উপস্থাপনার জন্যই বইটি সবার প্রথম পছন্দ হতে পারে। অর্থ ঋণের ক, খ লেখক : শেখ মো. মুজাহিদ উল ইসলাম প্রকাশক : লার্নিং, এনহান্সমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (এলইএডি পার্টনার) মুদ্রণ প্রকাশকাল: ফেব্রম্নয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩১৬ প্রদর্শিত মূল্য: ৭৫০ টাকা মাত্র।