জেনে নিন

প্রতিবছর কতজন অনার কিলিংয়ের শিকার হয়?

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
২০০০ সাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে সংগৃহীত ও প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৫,০০০ অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। এই সংখ্যা জাতিসংঘের বিবৃতির সঙ্গেও মেলে। যেহেতু বহু অনার কিলিংয়ের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়, সেহেতু বাস্তব পরিসংখ্যানের চারগুণ হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে যাদের হত্যা করা হয়, তাদের গড় বয়স ২৩ ও তাদের ৯৩ শতাংশই মেয়ে। দুই-তৃতীয়াংশ প্রাণ হারায় পরিবারের সদস্যদের হাতে। নিহতদের অর্ধেক হত্যাকারীর মেয়ে, নয়তো বোন; নিহতদের এক-চতুর্থাংশ হত্যাকারীর স্ত্রী কিংবা বান্ধবী। হত্যার কারণ ষাট ভাগ ক্ষেত্রে 'বড় বেশি পশ্চিমী' হয়ে পড়া; বাকিদের ক্ষেত্রে পুরুষ বা পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে পাকিস্তানে প্রায় ১,১০০ অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের গ্রামীণ সমাজে অনার কিলিংয়ের প্রতি জনসাধারণেরও সমর্থন থাকার ফলে, এই কুপ্রথা দূর করার যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে ও হচ্ছে। ইতিপূর্বে নিহতের পরিবার হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিলে সে ছাড় পেত; এবছর আইনের সে ফাঁকটি বন্ধ করা হয়েছে। ভারতেও ঘটে অনার কিলিংয়ের ঘটনা। গোটা দেশে বছরে হাজার খানেক অনার কিলিং হয় বলে অনুমান করা হয়ে থাকে, যদিও বাস্তবিক সংখ্যা জানা সম্ভব নয়। উত্তর ভারতে, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানাতেই অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে বেশি, দক্ষিণ ভারত বা মহারাষ্ট্র কিংবা গুজরাটে সে তুলনায় কম। অনার কিলিংয়ের খবর পাওয়া গেছে পাঞ্জাব ও বিহার থেকেও। পশ্চিমবঙ্গে অনার কিলিং গত ১০০ বছর ধরেই প্রায় নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে অনার কিলিংয়ের খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে পরিবারের পছন্দে বিয়ে না করার কারণে হত্যার ঘটনা বেশ কিছু ঘটেছে। ব্যক্তি ও পরিবারের অহংবোধ থেকে বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটেনে অভিবাসীদের মধ্যে অনার কিলিং বিরল নয়। কুর্দি, পাকিস্তানি ও সিরীয় বাবারা নিজেদের মেয়েদের স্বহস্তে হত্যা করছেন, এমন ঘটনা বারবার ঘটেছে। ২০১০ সালে এক শিখ পিতা তার কন্যাকে হত্যা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষিপ্ত হলেও, অভিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে একাধিক অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। জার্মানি ও ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশেও অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। কানাডায় আফগান বাবার হাতে তিন মেয়ে খুন হয় ২০০৯ সালে। ঘটনাটা আলোড়ন তুলেছিল। সে বছর কানাডার অন্টারিও প্রদেশের কিংস্টন শহরের খালে একটি গাড়ি ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। গাড়িতে ছিল ১৯, ১৭ ও ১৩ বছর বয়সের তিনটি মেয়ে ও তাদের মায়ের লাশ। বার্লিনেও ঘটেছে অনার কিলিংয়ের ঘটনা। হাতুন সুরুচু ছিলেন তুরস্কের আনাতোলিয়া থেকে জার্মানিতে আসা এক কুর্দ দম্পতির সন্তান। বার্লিনের তুর্কি-অধু্যষিত ক্রয়েৎসবার্গ অঞ্চলে মানুষ হয়েছেন। ১৬ বছর বয়সে তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় তুরস্কে। জার্মানিতে ফিরে হাতুন পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ও স্বাধীন জীবনযাপন শুরু করেন। একটি কলহের পর হাতুনকে বার্লিনের এক বাস স্টপে মাথায় তিনবার গুলি করে মারেন তার ভাই আইহান সুরুচু। ডয়েচে ভেলে