তালাক দেয়া স্ত্রীকে আবার বিয়ে করবেন যেভাবে

মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ (৫) ধারায় বলা আছে, কোনো আইনই স্ত্রীকে একই স্বামীকে, যার সঙ্গে তালাক হয়েছে, বিয়ে করা থেকে বিরত করবে না। তবে তিনবার এমন কাজ করা যাবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ তিনবার তালাক দেয়া স্ত্রীকে একই স্বামী বিয়ে করতে পারবেন। মূলত, তালাক দেয়া স্ত্রীকে আবার বিয়ে করতে ওই স্বামীর কোনো আইনি বাধা নেই। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে আবার স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করলেও রেজিস্ট্রারের অফিসে বিবাহ রেজিস্ট্রার করা লাগবে।

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
অনেক আশা-স্বপ্ন নিয়ে দুজন মানুষ একসঙ্গে পথচলা শুরু করে। সেই পথচলা সবসময় মসৃণ হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই দুজনের সম্পর্ক এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়ায় যাতে বিচ্ছেদই হয়ে ওঠে একমাত্র সমাধান। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়, পরস্পর মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্যমন্ডিত জীবনযাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন একে-অন্যকে তালাক দিতে পারে। মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে- 'কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তাকে মুসলিম আইনে অনুমোদিত যে কোনো পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন, এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও তার নকল দেবেন' অর্থাৎ তালাক প্রদান বা ঘোষণার ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তের প্রবর্তিত পদ্ধতিই হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইনের পদ্ধতি। চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ তেকে ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো তালাক বলবৎ হবে না। কারণ নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আপস বা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিশি পরিষদ গঠন করবে এবং ওই সালিশি পরিষদ এজাতীয় সমঝোতার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই অবলম্বন করবে। তবে সমঝোতার ৯০ দিন সময় চেয়ারম্যান কর্তৃক নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে শুরু হয়। তালাক দেয়া বা নোটিশ লেখার তারিখ থেকে শুরু হয় না। (শফিকুল ইসলাম এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র, ৪৬ ডিএলআর পৃষ্ঠা ৭০০)। তালাক কার্যকরের পর যদি তালাক দেয়া স্ত্রীকে আবার গ্রহণ করতে চান, তবে আগের মতো নিয়ম মেনে আবার বিয়ে করতে হবে। তবে তালাক দেয়ার পর যে ৯০ দিন সময় হাতে থাকে, ওই দিনের মধ্যে যদি তালাক দেয়া স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চান, তা হলে একটি আবেদনপত্রে বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে নিজের ভুল স্বীকার করে নিলে আবার তালাক দেয়া স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। আগের মতো সংসার করতে পারবেন। তালাক দেয়ার পর যে সময় হাতে থাকে, তার মধ্যে স্ত্রীকে ভুল স্বীকার করে গ্রহণ করলে কোনো রেজিস্ট্রেশন লাগবে না। আর যদি তালাক কার্যকরের পর স্বামী-স্ত্রী আবার বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চান তাহলে তারা নতুন করে বিয়ে করে নিলেই হবে। একটি নতুন সাধারণ বিয়ে যেভাবে হয় সেভাবে বিয়ে করে নিলেই হবে। কারণ তালাক সম্পূর্ণ কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত পক্ষগণ আইনসম্মতভাবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই থেকে যায়। (শফিকুল ইসলাম এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র, ৪৬ ডিএলআর পৃষ্ঠা ৭০০)। এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্বামী তার স্ত্রীকে ভরণপোষণও দিতে বাধ্য। আবার বিয়ের পর স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে থাকেন, তবে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। এমনকি যদি কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রী তালাকের বিধান থাকে, তবে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন। মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ (৫) ধারায় বলা আছে, কোনো আইনই স্ত্রীকে একই স্বামীকে, যার সঙ্গে তালাক হয়েছে, বিয়ে করা থেকে বিরত করবে না। তবে তিনবার এমন কাজ করা যাবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ তিনবার তালাক দেয়া স্ত্রীকে একই স্বামী বিয়ে করতে পারবেন। অনেক মুসলিম সমাজেই হিলস্না বিয়ে নামক এক পদ্ধতির কথা বলা আছে। এ পদ্ধতি অনুযায়ী, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে যদি স্বামী আবার বিয়ে করতে চান তাহলে ওই স্ত্রীকে স্বামী ছাড়া অন্য আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে আগে বিয়ে দিতে হবে। সেই বিয়ে কার্যকর করা হবে অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী 'কনজুগাল লাইফে' প্রবেশ করবেন। তারপর আগের ডিভোর্স দেয়া স্বামীকে বিয়ে করতে পারবেন। তবে ইসলাম ধর্ম মতেও, হিলস্না বিয়েকে সমর্থন করা হয় না। অনেক ইসলামিক মনীষী এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। মূলত, তালাক দেয়া স্ত্রীকে আবার বিয়ে করতে ওই স্বামীর কোনো আইনি বাধা নেই। এখানে বলে রাখা ভালো, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে আবার স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করলেও নতুন এই বিয়েও বিবাহ রেজিস্ট্রারের অফিসে রেজিস্ট্রার করা লাগবে। লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা