জেনে নিন

মেক্সিকোতে যেভাবে পাস হলো সাইবার হয়রানিবিরোধী অলিম্পিয়া আইন

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

য় আইন ও বিচার ডেস্ক
লিম্পিয়ার বয়স যখন ১৮ তখন তার একান্ত মুহূর্তের একটি ভিডিও অনুমতি ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। ওই ঘটনা তার জীবনকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। তার এক বয়ফ্রেন্ড, যার সঙ্গে ছয় বছর ধরে অলিম্পিয়ার সম্পর্ক ছিল, ভিডিও করলেও সেখানে শুধু অলিম্পিয়াকেই দেখা যায়। ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল শুধু তাদের দুজনের জন্যই। অলিম্পিয়ার বয়ফ্রেন্ডও এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর অলিম্পিয়ার নাম হয়ে যায় 'আবেদনময়ী মোটা মেয়েটি।' সেসময় সে বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করে, আট মাস তার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় এবং এরমধ্যে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। তবে ধীরে ধীরে সে বুঝতে শুরু করে, এই ঘটনায় সে আসলে দোষী নয়- সে ভুক্তভোগী। এরপর সে অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে যায় এবং সাইবার যৌন হয়রানি বিষয়ে মেক্সিকোর প্রথম আইনের প্রস্তাবটির খসড়া লেখেন যেটি সেখানে 'অলিম্পিয়া আইন' নামে পরিচিত। অলিম্পিয়া যখন জানতে পারেন আরও অনেক নারীই এমন অপরাধের শিকার, তখন তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা চিন্তা করেন, অলিম্পিয়া অভিযোগ জানাতে গিয়ে বিপদের মধ্যে পড়েন। এরপরে শুনুন অলিম্পিয়ার নিজের বয়ানে, 'দায়িত্বরত অফিসার শুরুতেই আমার ভিডিওটি দেখতে চায়। ভিডিও দেখার পর সে হাসিতে ফেটে পড়ে।' তার বক্তব্য ছিল 'আপনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন না, মাদকের প্রভাবেও ছিলেন না, কেউ আপনাকে ধর্ষণও করেনি। ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, এখানে কোনো অপরাধই হয়নি।' আমি ক্রুদ্ধ হয়ে ফিরে আসি। পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর আমার মাথায় আসে 'কোনো অপরাধ হয়নি বলে কী বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি?' ইন্টারনেটে যারা এরকম হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমন নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করি আমি। তাদের আমি বলি, এই অপরাধ সম্পর্কে আমাদের ধারণা না থাকলেও এর বিষয়ে কিছু একটা করতেই হবে আমাদের। ধীরে ধীরে এ বিষয়ে ধারণা পরিষ্কার হতে শুরু করে আমাদের। পুয়েবলা রাজ্যের জন্য আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করি আমরা। সময়টা ছিল ২০১৪'র মার্চ, আমার বয়স তখন ১৯। আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে আমি তাদের আমার ভিডিওর কথা বলি। বলি যে আরও এমন অনেক মেয়ে আছে যারা এ ধরনের অপরাধের ভুক্তভোগী। তাদের আমি স্ক্রিনশট দেখাই যে ওই অনুষ্ঠানের বক্তাদের কয়েকজনও আমার ভিডিওতে লাইক দিয়েছে এবং শেয়ারও করেছে। তাদের বলি আমি, 'আপনারা অপরাধী, আমি নই'। যেই ফেসবুক পেইজটি আমার ভিডিও শেয়ার করেছিল, সেটি পরে বন্ধ হয়ে যায়। তারা জানায় 'এক উন্মাদ মহিলা'র জন্য তারা পেইজ বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু তখনও বহুদূরের পথ বাকি ছিল। একজন সংসদ সদস্য তখন বলেছিলেন যে তিনি আমার প্রস্তাব সমর্থন করতে পারবেন না কারণ সেটি 'বেহায়াপনা অনুমোদন' করার শামিল হবে। প্রস্তাবটি আইনে রূপান্তরিত হয় ২০১৮-তে। আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া কারও ব্যক্তিগত কোনো বিষয় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হলে সেটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। ইন্টারনেটে সাইবার হয়রানি বা যৌন সহিংসতার বিষয়গুলোও সংজ্ঞায়িত করা হয় আইনে। এ ধরনের অপরাধ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির বিষয়গুলোও জায়গা পায়। কয়েক বছরের আলোচনার পর পুয়েবলা রাজ্যে আইনটি পাস হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত মেক্সিকোর ১১টি রাজ্যে এই আইন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এক সাংবাদিক তার প্রতিবেদনে আইনটিকে 'অলিম্পিয়া আইন' হিসেবে উলেস্নখ করার পর থেকে সবাই ওই নামেই ডাকা শুরু করে এটিকে।