শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নামজারি কেন করবেন? কীভাবে করবেন?

তানজিম ইফতেখার
  ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

কোনো ব্যক্তি কোনো জমির মালিকানা লাভ করার পর তার নাম সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা বা তার নিজ নামে নতুন খতিয়ান খোলার যে কার্যক্রম তাকে খারিজ/নামজারি বা মিউটেশন বলে। সাধারণত দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জরিপের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। ফলে দুই জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তরাধিকারের মাধ্যমে জমি প্রাপ্তির ফলে কিংবা দলিলের মাধ্যমে জমি হস্তান্তরের ফলে ভূমি মালিকানার পরিবর্তনে খতিয়ান হালনাগাদকরণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি) খারিজ/নামজারি বা মিউটেশনের মাধ্যমে খতিয়ান হালকরণের কাজ করে থাকে।

কেন খারিজ/নামজারি/নিউটেশন করবেন?

১। যে কোনো সময় জমি বিক্রয় করা যাবে (রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর ৫২এ ধারা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২-এর ৫৩সি ধারা অনুসারে, দলিলমূলে প্রাপ্ত জমির নামজারি খতিয়ান না থাকলে সে জমি বিক্রয় করা যায় না)।

২। ভূমির মালিকানা হালনাগাদ হবে।

৩। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়/প্রদান করা সহজ হবে।

৪। খতিয়ান হালনাগাদ থাকার ফলে জরিপ কাজে সুবিধা হবে।

৫। সরকারের খাস জমি সংরক্ষণে সুবিধা হবে।

৬। নদী পয়স্তিজনিত কারণে রেকর্ড সংশোধন হবে।

৭। মূল ভূমি মালিকের মৃতু্যতে উত্তরাধিকারগণের মালিকানার নির্দিষ্ট অংশ সংবলিত খতিয়ান প্রস্তুত হবে।

৮। রেজিস্ট্রিকৃত দলিলমূলে জমি হস্তান্তরের কারণে ক্রেতা বা গ্রহীতার নামে খতিয়ান প্রস্তুত হবে।

৯। মামলা-মোকদ্দমা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

১০। বিক্রেতা আপনার ক্রয়কৃত জমি দ্বিতীয়বার বিক্রি করতে পারবে না।

সর্বোপরি যে কোনো বিতর্কের সময় মালিকানা বা দখল প্রমাণের ক্ষেত্রে নামজারিসংক্রান্ত কাগজপত্রাদি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হিসেবে বিবেচিত হবে।

নামজারি তিন ধরনের হয়ে থাকে-

১। শুধু নামজারি বা নামপত্তন : কোনো রেকর্ডীয় মালিকের নামের পরিবর্তে ওই একই খতিয়ানে পরবর্তী গ্রহীতা ও ওয়ারিশগণের নামভুক্ত হলে, তা শুধু নামজারি বা নামপত্তন হিসেবে পরিচিত। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ধারা মতে এ ধরনের নামজারি বা নামপত্তন হয়ে থাকে।

২। নামপত্তন ও জমা খারিজ : কোন দাগের জমি বিক্রয় বা অন্য কোনো প্রকার হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভক্ত হলে এবং ওই বিভক্তির জন্য পৃথক হিসাব বা হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের আদেশ দিলে তা নামপত্তন ও জমা খারিজ নামে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে জমির মালিকানার পরিবর্তন হবে এবং পৃথক খতিয়ান এবং হোল্ডিং নম্বর পড়বে। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ও ১১৭ ধারা মতে নামপত্তন ও জমা খারিজ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়ে থাকে।

৩। নামপত্তন ও জমাখারিজ একত্রীকরণ : কোনো ব্যক্তির একই মৌজার ভিন্ন ভিন্ন খতিয়ানে জমি থাকলে, ওই খতিয়ানগুলোর মাধ্যমে প্রাপ্ত জমি একই খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন খতিয়ান প্রস্তুত করলে, তাকে নামপত্তন ও জমা একত্রীকরণ করা বলা হয়। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ও ১১৬ ধারা অনুসারে এ প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়।

নামজারির সময়সীমা মহানগরের ক্ষেত্রে ৪৫ (পঁয়তালিস্নশ) কর্মদিবস এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৩০ (তিরিশ) কর্মদিবস।

নামজারির ধাপগুলো

১। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন দাখিল। (ভূমি অফিসের নির্ধারিত ফরমে অথবা িি.িসরহষধহফ.মড়া.নফ এই ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে ফরম ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়)।

২। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক সরেজমিন তদন্তের জন্য আবেদনটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ।

৩। ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক প্রস্তাব/প্রতিবেদন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে প্রেরণ।

৪। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে শুনানির জন্য নোটিশ প্রদান।

৫। নোটিশ প্রাপ্তির পর যাবতীয় মূল কাগজপত্রসহ আবেদনকারী কর্তৃক শুনানিতে অংশগ্রহণ।

৬। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক আদেশ প্রদান।

নামজারির ফিস ও আবেদনপত্রের সঙ্গে কাগজপত্র

খারিজ/মিউটেশন/নামজারির জন্য নিম্নলিখিত হারে ফিস প্রদান করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে কোর্ট ফি ২০/- (বিশ) টাকা। নোটিশ জারি ফি ৫০/- (পঞ্চাশ) টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১০০০/- (এক হাজার) টাকা, প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০/-(একশত) টাকা। উলেস্নখ্য, আবেদনপত্রের কোর্ট ফি ছাড়া বাকিগুলো ডিসিআরের মাধ্যমে আদায় করা হয়, তাই বাকি ১,১৫০ টাকা অফিসে নগদে ফিস জমা দিয়ে ডিসিআর সংগ্রহ করতে হয়।

নামজারির আবেদনে যে সব কাগজপত্র লাগবে:

১। ২০ (বিশ) টাকার কোর্ট ফিসহ মূল আবেদন ফরম।

২। আবেদনকারীর ১ (এক) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য ছবি প্রযোজ্য)।

৩। আবেদনকারীর পরিচয়পত্রের সত্যায়িত অনুলিপি (জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি/জন্ম নিবন্ধন সনদ/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স/ অন্যান্য)।

৪। খতিয়ানের ফটোকপি/সার্টিফাইড কপি।

৫। বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ।

৬। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে বায়া দলিলের সার্টিফাইড কপি বা ফটোকপি।

৭। উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইসু্যকৃত মূল উত্তরাধিকার সনদ।

৮। ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে ওই ডিক্রির সার্টিফাইড কপি বা ফটোকপি।

তবে শুনানি গ্রহণকালে দাখিলকৃত কাগজের মূল কপি অবশ্যই আনতে হবে। এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দখল/প্রয়োজনীয় মালিকানার রেকর্ডপত্র দেখাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76078 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1